পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪২৪

তাহার অপরিচিত। ক্রমে সকলের চক্ষুর সহিত তাহার চক্ষুর মিলন হইল। আক্কেল আলীর (বাহ্‌রাম) প্রতি চক্ষু পড়িতেই রোষের সহিত ঘৃণা, উভয়ে একত্র মিশিয়া তাহার চক্ষুকে অন্য দিকে ফিরাইয়া দিল। সে দিকে চাহিতেই মারওয়ান দেখিল: তাহারই প্রিয় সহচর অলীদ ছদ্মবেশ পরিত্যাগ করিয়া হানিফার দলে মিশিয়াছে।

 মারওয়ান মনে মনে আশ্চর্য্যাম্বিত হইয়া বলিল,—“একি কথা! বেশ পরিত্যাগ—হানিফার দলে আদৃত—অস্ত্র সভাতলে! একি কথা!”

 মারওয়ান অলীদের প্রতি বারবার চাহিতে লাগিল। কিন্তু বীরবরের বিশালচক্ষু অন্য দিকে,—সে চক্ষু মারওয়ানের মুখ আর দেখিতে ইচ্ছা করিল না। মারওয়ান কি করিবে, কোন উপায়ই নাই; যে দিকে দৃষ্টিপাত করে, সেই দিকেই সহস্র প্রহরী—সেই দিকেই সহস্র শাণিত অস্ত্রের চাকচিক্য।

 মারওয়ান মনে মনে বলিল, “তবে কি আর শিবিরে যাইতে পারিলাম না? তবে কি আর মহারাজের সহিত দেখা হইল না। হায়! হায়!! তবে কি দামেস্কের স্বাধীনতা—”

 মারওয়ানের মনের কথা শেষ হইতে না হইতেই গাজী রহ্‌মান জিজ্ঞাসা করিলেন, “মহাশয়, আপনি কোন্ ধর্ম্মাবলম্বী?”

 “ধর্ম্মের পরিচয়ে আপনার প্রয়োজন কি?”

 “প্রয়োজন এমন কিছু নহে, তবে মোহাম্মদীয় হইলে আপনি অবধ্য, সহস্র প্রকারে আমাদের অনিষ্ট চেষ্টা করিলেও আপনি ভ্রাতা—এক প্রাণ—এক আত্মা—এক হৃদয়।”

 “আমি মোহাম্মদের শিষ্য।”

 “মিথ্যা কথায় কি পাপ, তা বোধ হয় আপনার অজানা নাই; ধর্ম্মমাত্রই মিথ্যার বিরোধী।”

 “বিরোধী বটে, কিন্তু প্রাণরক্ষার জন্য বিধিও আছে।”

 “তবে কি আপনি প্রাণরক্ষার জন্য মিথ্যা বলিলেন?”

 “আমি মিথ্যা বলিব না। বিধি আছে, তাই বলিলাম।”

 “বলুন, আপনি কে? আর কি কারণে রাত্রে শিবিরে আসিতেছিলেন?”