পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২৫
উদ্ধার পর্ব্ব—ত্রিংশ প্রবাহ

 “আমি পথিক, চাকুরীর আশায় আপনাদের নিকট আসিতেছিলাম।”

 “আপনি কোথা হইতে আসিতেছেন?”

 “আমি মস্কাট হইতে আসিতেছি।”

 “আপনার সঙ্গে যাঁহারা ধৃত হইয়াছেন, তাঁহারা কি আপনার সঙ্গী?”

 “আমার সঙ্গী কেহ নাই, আমি তাহাদিগকে চিনি না।”

 “এ কি কথা! অলীদ মহামতি কি মিথ্যা কথা বলিয়াছেন?”

 “প্রাণ বাঁচাইতে কে না মিথ্যা বলিয়া থাকে। আমি অলীদকে চিনি না। আমার পূর্ব্বে যদি কেহ কোন কথা বলিয়া থাকেন, তবে তাঁহার কথাই যে সম্পূর্ণ সত্য, এ কথা আপনাকে কে বলিল?—এ বিশ্বাস আপনার কিসে জন্মিল?”

 “কিসে যে তাঁহার কথায় বিশ্বাস জন্মিল, সে কথা শুনিয়া আপনার প্রয়োজন নাই, কিন্তু আপনার কথায় আমি নিতান্তই দুঃখিত হইলাম। এখনই আপনাকে সত্য-মিথ্যার প্রত্যক্ষ প্রমাণ দেখাইতে পারি, কিন্তু তৃতীয় বন্দীর কথা না শুনিয়া কিছুই বলিব না। অনর্ধক আমাদের অস্থির মনকে ভ্রমপথে লইয়া যাইবেন না।”

 “আমি ভ্রমপথে লইতেছি না। আপনারা নিজে ভ্রমকূপে পড়িয়াছেন।”

 “সে কথা সত্য, কিন্তু একটি মিথ্যাকে সত্য করিয়া পরিচয় দিতে সাতটি মিথ্যার প্রয়োজন। তাহাতেও শ্রোতার মনের সন্দেহ দূর হয় কি না, সন্দেহ। আপনার পরিচয় জানিতে আমাদের বেশী আয়াস আবশ্যক করিবে না; তবে তৃতীয় বন্দীর কথা না শুনিয়া আপনাকে আর কিছুই বলিব না; কিন্তু আপনার প্রতি আমার বিশেষ সন্দেহ হইয়াছে।”

 এই কথা বলিয়া ইঙ্গিত করিতেই প্রহরিগণ কঠিন বন্ধনে মারওয়ানের হস্তদ্বয় তখনই বন্ধন করিল। গাজী রহ্‌মান পুনরায় বলিলেন, “তৃতীয় বন্দীকে বিশেষ সাবধানে ও সতর্কতার সঙ্গে আনিবে, ক্রমেই সন্দেহের কারণ হইতেছে।”

 সভামধ্য হইতে ওমর আলী বলিতে লাগিলেন, “মন্ত্রিবর! বন্দীর আকার-প্রকারে, কথার স্বরেই, আমি চিনিতে পারিয়াছি কিন্তু বেশ-