পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪৫০

সক্ষম হইবে না, কখনও গাজী রহ মানের সমকক্ষ হইতে পারে না। যদি যুদ্ধই ঘটিয়া থাকে, তবে নিশ্চয়ই পরাজয়— নিশ্চয়ই দামেস্কের অধঃপতন— নিশ্চয়ই দামেস্কের সিংহাসনে জয়নাল আবেদীন—নিশ্চয়ই এজিদের মৃত্যু, মারওয়ানের মনোগত আশা বিফল! পিরিত, প্রণয়, প্রেম,—এই তিন কারণেই আজ দামেস্কের এই দুর্দ্দশা। কি ঘৃণা! কি লজ্জা!”

 “বৃদ্ধ বয়সে অবিচারে পিঞ্জরাবদ্ধ হইয়া আকুলিত হই নাই। যতদূর বুঝিয়াছি, বলিয়াছি। আমার ভ্রম দর্শাইয়া ইহা অপেক্ষা শত গুণ শাস্তি দিলেও ক্ষোভের কারণ ছিল না। উচিত কথায় আহাম্মক রুষ্ট, এ কথা নূতন নহে। প্রকাশ্য দরবারে মত জিজ্ঞাসা করায়, বুদ্ধি-বিবেচনায় যাহা আসিয়াছে, বলিয়াছি। ইহাই ত অপরাধ, ইহাতেই বন্দী, ইহাতেই পিঞ্জরে আবদ্ধ। কিছুমাত্র দুঃখ নাই; কারণ,—মূর্খ, স্বার্থপর, মিথ্যাবাদী, পরশ্রীকাতর পরস্ত্রী-আকাঙক্ষী, স্বেচ্ছাচারী এবং রোষপরবশ রাজার নিকট ইহা অপেক্ষা আর কি আশা করা যাইতে পারে? প্রাণদণ্ডের আদেশ হয় নাই, ইহাতে আমার শত লাভ। সহস্র প্রকারে ঈশ্বরে ধন্যবাদ!”

 “ভাল কথা,—ওমর আলীর বন্দী হওয়ার কথাই শুনিলাম, প্রাণরধের কথা ত শুনিলাম না। শূলে জয়নাল আবেদীনের প্রাণদণ্ড হইবে, এই ঘোষণার কথাই কানে প্রবেশ করিল, শেষ কথাটা আর কেই বলিল না। সংবাদ কি? এ অন্যায় যুদ্ধের পরিণাম কি? কি হইতেছে, কি ঘটিতেছে, কোন বীর কেমন তরবারি চালাইতেছে,—বর্শা উড়াইতেছে,—তীর চালাইতেছ, কৈ—কেহই ত কিছুই বলে না। আমাদের পক্ষের অতি সামান্য সামান্য শুভসংবাদও লোকের মুখে ক্রমে অসামান্য হইয়া উঠে। কৈ—এ কয়েক দিন ভালমন্দ কোন সংবাদই ত শুনিতে পাইলাম না। মন্দ কথা কানে আসিবার কথা নহে—ভাল কথার যখন একটা বর্ণও প্রকাশ হইতেছে না, তখন আর কি বলি!”

 “যুদ্ধকাণ্ড বড়ই কঠিন। সামান্য বিবেচনার ত্রুটিতে সর্ব্বস্ব বিনাশ,— লক্ষ লক্ষ প্রাণীর প্রাণ মুহুর্ত্তে ধ্বংস! বড়ই কঠিন ব্যাপার! দামেস্ক রাজ্যের যে সময় উপস্থিত, এ সময় যুদ্ধ করাই অন্যায়। যুদ্ধের কারণ