পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪৭২

লাগিল। কারণ, এজিদের কোন সংবাদ নাই; এজিদ-বধের কোন সমাচার প্রাপ্ত হওয়া যায় নাই। দরবার বরখাস্তু হইল। মহাজ জয়নাল আবেদীন, গাজী রহ মানের মন্ত্রণায় জননী, ভগ্নী এবং অন্যান্য পরিজনকে বন্দীগৃহ হইতে রাজপুরী মধ্যে আনয়ন করিতে ওমর আলী ও আক্কেল আলীসহ রাজপ্রাসাদ হইতে বন্দী-গৃহে যাত্রা করিলেন, অন্যান্য রাজগণ কিঞ্চিৎ বিশ্রাম-সুখ প্রয়াসী হইয়া বিশ্রাম-ভবনে গমন করিলেন। দ্বারে প্রহরী খাড়া হইল। সৈন্যাধ্যক্ষগণ, সৈন্যগণ, দামেস্ক-সৈন্যনিবাসে যাইয়া সজ্জিত কক্ষসকল নির্দ্দিষ্টরূপে গ্রহণ করিয়া বিশ্রাম-সুখ অনুভব করিতে লাগিলেন।

তৃতীয় প্রবাহ

 দয়মায় ভগবান্! তোমার কৌশল-প্রবাহ কখন কোন্ পথে কত ধাৱে যে অবিরত ছুটিতেছে, তোমার কৃপাবারি কখন কাহার প্রতি কত প্রকারে কত আকারে যে ঝরিতেছে, তাহা নির্ণয় করিয়া বুঝিবার সাধ্য জগতে কাহারও নাই। সে লীলা-খেলার যথার্থ মর্ম্ম কলমের মুখে আনিয়া সকলকে বুঝাইয়া দিবার ক্ষমতাও কোন কবির কল্পনায় নাই! কাল যে জয়নাল আবেদীন দামেস্ক-কারাগারে এজিদ-হস্তে বন্দী, প্রাণভয়ে আকুল;—আজ সেই দামেস্কসিংহাসনই তাঁহার বসিবার আসন, দামেস্ক-রাজ্যে তাঁহার পূর্ণ অধিকার—রাজপুরী পদতলে, লক্ষ লক্ষ কোটী কোটী প্রাণ তাঁহার করমুষ্টিতে। কাল জয়নালের বন্দীবেশে বন্দীগৃহ হইতে পলায়ন,—শূলে প্রাণবধের ঘোষণা শুনিয়া পর্ব্বতগুহায় আত্মগোপন,—নিশীথ-সময় স্বজন-হস্তে পুনরায় বন্দী, চির-শত্রু মারওয়ান সহ একত্র এক সময় বন্দী! আজ হামান জীবনের মত বন্ধনদশা হইতে মুক্তিলাভ করিয়াছেন। আর জয়নাল আবেদীনের শিরে রাজমুকুট শোভা পাইতেছে। ধন্য রে কৌশলী! ধন্য ধন্য তোমার মহিমা!