পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪৭৪

মনের আগুনের দ্বিগুণ—ত্রিগুণ—পঞ্চগুণ বৃদ্ধি। অবলা প্রাণে কত সহিবে? পতিপ্রাণা ললনা আর কত সহ্য করিবে? সপত্নীবাদ জনিত মনের আগুণ কি নির্ব্বাপিত হয়?—সপত্নী ছাড়িয়া শেষে স্বামীকেই আক্রমণ করে। মন যাহা চায় নিয়তির বিধান থাকিলে তাহা পাইতে কতক্ষণ? খুঁজিলেই পাওয়া যায়। মায়মুনার মনোসাধ পূর্ণ করিতে জাএদার প্রয়োজন; জাএদার মনোসাধ পূর্ণ করিতে মায়মুনার আবশ্যক। সময়ে উভয়ের মিলন হইল, সোনায় সোহাগ মিশিল। শেষে নারীহস্তে—উঁহু! মুখে আনিতেও হৃদয় ফাটিয়া যায়,—বিষ! —মহাবিষ!” (নীরব)

 জয়নাব কর্ণে শুনিতেছেন: নগরের জনকোলাহল, সৈন্যগণের ভৈরব নিনাদ— কাড়া-নাকাড়া দামামার বিঘোর রোল;—মধ্যে মধ্যে জয়-উল্লাসের সহিত জয়নাল আবেদীনের নাম। মৃদু মৃদু স্বরে তিনি বলিতে লাগিলেন,—“এ কি! আজি আবার ও কি শুনি! এত জনকোলাহল কিসের জন্য। অনেকক্ষণ তিনি স্থির কর্ণে,—স্থির মনে রহিলেন, কিছুই বুঝিতে পারিলেন না। অন্য দিকে চাহিয়া দেখিলেন: বন্দীগৃহের দ্বারে দ্বারে যেখানে রক্ষীগণ পাহারা দিতেছিল, সেখানে কেহই নাই!—সমুদয় দ্বার উন্মুক্ত। দক্ষিণে চাহিয়া দেখিলেন: বিবি সালেমা, শাহ্‌রেবানু, হাস্‌নেবানু ম্লান বদনে নীরবে বসিয়া রহিয়াছেন। ক্ষণে শাহ্‌রেবানু কাতর কণ্ঠে বলিতেছেন, “ওরে বাপ্! বাবা জয়নাল! তুই কোথা গেলি বাপ্? তুই আমার কোলে আয় বাপ্!”—জয়নাব যে স্থানে বসিয়াছিলেন, সেই স্থানেই রহিলেন এবং পূর্ব্ব কথা বলিতে লাগিলেন।

 “উঁহু! বিষ!—জাএদার হস্তে বিষ!! যদি হতভাগিনী জয়নাব হাসানের দাসীশ্রেণীর মধ্যে পরিগণিতা না হইত, যদি তাহার রূপ গুণ না থাকিত, যদি সে স্বামীসোহাগিনী না হইত, তাহা হইলে জাএদার হস্তে কখনই বিষ উঠিত না—মায়মুনার কথা কখনই জাএদা শুনিত না।—এই হতভাগিনীর জন্যই বিষ! এজিদ-মুখে শুনিয়াছি,—সৈন্য-সামন্ত লইয়া মৃগয়ায় যাইতে গবাক্ষদ্বারে সে আমাকে দেখিয়াছিল। কত চক্ষু এজিদকে দেখিতে আগ্রহ প্রকাশ করিল, আমি নাকি তাহাকে ঘৃণার চক্ষে দেখিয়া গবাক্ষদ্বার বন্ধ করিয়াছিলাম! আমার ত কিছুই মনে হয় না! পাপিষ্ঠ আরও বলিল,—সে