পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৫০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮১
এজিদ বধ পর্ব্ব—তৃতীয় প্রবাহ

না! যে আশার কুহকে পড়িয়া সে স্ত্রী-ধর্ম্মে জলাঞ্জলি দিয়া স্বহস্তে স্বামীর মুখে বিষ ঢালিয়া দিল, সে আশায় ছাই পড়িল! পাপের প্রায়শ্চিত্ত হইল না, কিন্তু কার্য্যফলের পরিণামফল ঈশ্বর একটু দেখাইয়া দিলেন। জাএদা নব প্রেমাস্পদ কপট প্রেমিক প্রাণাধিক শ্রীমান এজিদের নিকট প্রকাশ্য দরবারে প্রতিজ্ঞা পরিপূরণ সহিত বিষময় বাক্যবাণ লাভ করিল, শেষে তাহার পরমায়ু প্রদীপও নির্ব্বাপিত হইল। দরবার গৃহের সকল চক্ষুই দেখিল—জাএদা রাজরাণী—এজিদের বাম অঙ্ক-শোভিনী, স্বর্ণ-সিংহাসনে পাটরাণী। সেই মুহূর্ত্তেই—সেই চক্ষেই আবার দেখিল—অস্ত্রাঘাতে এজিদ-হস্তে জাএদার মুণ্ডপাত। জাএদার ভবলীলা সাঙ্গ হইল। দরবার গৃহের মর্য্যাদা রক্ষা পাইল। বিচার-আসনের গৌরব বৃদ্ধি হইল। আমার মনের কথার ইতি হইল না। মায়মুনাও পুরস্কারের স্বর্ণ মুদ্রা গণিয়া লইতে পারিল না।”

 পুনরায় ‘জয় জয়রব’ ক্রমেই যেন নিকটবর্ত্তী। কান পাতিয়া জয়নাব শুনিলেন: জনকোলাহলের ক্রমেই বৃদ্ধি—মুখে বলিলেন,—“আজি এত গোলমাল কিসের? কি হইল? যাক্, ও গোলযোগে আমার লাভ কি? মনের কথা উথলিয়া উঠিতেছে।”

 “স্থির করিলাম, এ পবিত্র পুরী জীবনে পরিত্যাগ করিব না। সেখানেই যাইব নিস্তার নাই। এজিদের হস্ত হইতে জয়নাবের নিস্তার নাই। এই ভাবিয়া, প্রভু হোসেনের আশ্রয়েই রহিলাম। এজিদের আশা যেমন তেমনই রহিয়া গেল। তাহার এত চেষ্টা, এত যত্ন, এত কৌশলেও জয়নাব হস্তগত হইল না। এ পথে একমাত্র বাধা জয়নাবের আশ্রয়দাতা। আশ্রয়দাতাকে ইহজগৎ হইতে দূর করাই এজিদের আন্তরিক ইচ্ছা, প্রকাশ্যে রাজ্যলাভের কথা, কিন্তু মনের মধ্যে অন্য কথা। এজিদের চক্রান্তেই প্রভু হোসেনের কুফায় গমন সম্ভব হইল। পরিবারসহ প্রভু হোসেন কুফায় গমন করিলেন। হতভাগিনীও সঙ্গে চলিল। হায়! কোথায় কুফা আর কোথায় কারবালা। কারবালার ঘটনা মনে আছে সকলই, কিন্তু মুখে বলিবার সাধ্য নাই। হায়! আমার জন্য কি না হইল? মহাপ্রান্তর কারবালাক্ষেত্রে রক্তের নদী বহিল। শত শত সতী পতিহাৱা, পুত্রহারা হইয়া আজীবন চক্ষের

 ৬১