কৈফিয়ত সম্প্রতি বঙ্গসাহিত্যের ছোটো বড়ো মাঝারি সকল রকম সমালোচক আমার ভাষার বিরুদ্ধে তীব্ৰ প্ৰতিবাদ করছেন। সে প্ৰতিবাদে নানাজাতীয় নানা পত্র মুখরিত হয়ে উঠেছে। সে মরমিবু-ধ্বনি শুনে আমি ভীত হলেও চমকিত হই নি; কেননা, আমি যখন বাংলা লেখায় দেশের পথ ধরে চলছি তখন অবশ্য সাহিত্যের রাজপথ ত্যাগ করেছি। যুখভ্রষ্ট লেখককে সাহিত্যের দলপতিরা যে ভ্ৰষ্ট বলবেন, এতে আর আশ্চৰ্য কি। বিশেষত সে রাজপথ যখন শুধু পাকা নয়— সংস্কৃতভাঙা শুরকি বিলেতি-মাটি এবং চুন দিয়ে একেবারে শান-বাঁধানে রাস্তা। অনেকের বিশ্বাস যে, সাহিত্যের এই সদর-রাস্তাই হচ্ছে একমাত্ৰ সাধু পথ, বাদবাকি সব গ্ৰাম্য। তবে জিজ্ঞাস্যবিষয় এইটুকু যে, এই গ্ৰাম্যতার অপবাদ আমার ভাষার প্রতি সম্প্রতি দেওয়া হচ্ছে কেন । আমি প্ৰবীণ লেখক না হলেও নবীন লেখক নই। আমি বহুকাল ধরে বাংলা কালিতেই লিখে আসছি। সে কালির ছাপ আমার লেখার গায়ে চিরদিনই রয়েছে। আমার রচনার যে ভঙ্গিটি সহৃদয় পাঠক এবং সমজদার সমালোচকেরা এতদিন হয় নেকি-নজরে দেখে এসেছেন, নয়। তার উপর চোখ দেন নিআজ কেন সকলে তার উপর চোখ-লাল করছেন। এর কারণ আমি প্রথমে বুঝে ऐछेर्छgङ °iद्धि नि । এখন শুনছি, সে ভাষার নবাবিষ্কৃত দোষ এই যে তা ‘সবুজ পত্রের ভাষা’। সবুজের, তা দোেষই বলে আর গুণই বলো, একটি বিশেষ ধৰ্ম আছে। ইংরেজেরা বলেন, যে চোখে সে রঙের আলো পড়ে, সে চোখের কাছে অপরের কোনো দোষই ছাপা থাকে না। আমাদের দোষ যাই হোক, তা যে গুণীসমাজে মারাত্মক বলে বিবেচিত হয়েছে, তার প্রমাণ এই যে, পরিষৎ-মন্দিরে স্বয়ং বিপিনচন্দ্ৰ পাল মহাশয় ‘সবুজ পত্রের ভাষার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ কর৩ে বাধ্য হয়েছিলেন । এ সংবাদ শুনে উক্ত পত্রের সম্পাদকের নিশ্চয়ই হৱিযে-বিষাদ উপস্থিত হয়েছে। পালমহাশয়ের ন্যায় খ্যাতনামা ব্যক্তি যার লেখা আলোচনার যোগ্য মনে করেন, তার কলম ধরা সার্থক ; কেননা, ওতেই প্ৰমাণ হয় যে, তার লেখায় প্ৰাণ আছে। যা মৃত, একমাত্র তাই নিন্দা-প্ৰশংসার বহির্ভূত। অপরপক্ষে বিষন্ন হবার কারণ এই যে, “যেষাং পক্ষে জনাৰ্দন’ সেই পাণ্ডুপুত্রদের জয় এবং সবুজ পত্রের পরাজয়ও অবশ্যম্ভাবী। পালমহাশয় যে সবুজ পত্রের ভাষার উপর আক্রমণ করেছেন, এ রিপোর্ট নিশ্চয়ই ভুল ; কেননা, ও-পত্রের কোনো বিশেষ ভাষা নেই। উক্ত পত্রের ভিন্ন ভিন্ন লেখকদের
পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১০২
অবয়ব