প্রত্নতত্ত্বের পারশ্য-উপন্যাস Y (S জানেন যে, ভারতবর্ষের অতীত থাকলেও তার ইতিহাস ছিল না। কাজেই এই অতীতের সাদা কাগজের উপর আমরা এতদিন স্বেচ্ছায় এবং স্বচ্ছন্দচিত্তে আমাদের মনোমত ইতিহাস লিখে যাচ্ছিলুম। ইতিমধ্যে বাংলায় একদল বৈজ্ঞানিক জন্মগ্রহণ করে সে ইতিহাসকে উপন্যাস বলে হেসে উড়িয়ে দিয়ে এমন ইতিহাস রচনা করতে কৃতসংকল্প হলেন, যার ভিতর রসের লেশমাত্র থাকবে না- থাকবে শুধু বস্তুতন্ত্রতা । এরা আহেলা বিলেতি শিক্ষার মোহে এ কথা ভুলে গেলেন যে, অতীতে হিন্দুর প্রতিভা ইতিহাসে নয়। পুরাণে, বিজ্ঞানে নয় দর্শনে, ফুটে উঠেছিল। অতীতের মর্মগ্রহণ না করে তার চর্মগ্রহণ করতে যাওয়াতেই সে দেশত্যাগী হতে বাধ্য হল । এতে তাদের কোনো ক্ষতি নেই, মধ্যে 'থেকে সাহিত্য শুধু দেউলে হয়ে গেল। বিজ্ঞানের প্রদীপ ষে সাহিত্যের লালবাতি- এ কথা কে না জানে। 8 আমরা সাহিত্যিকের দল অতীতকে আকাশ হিসেবে দেখতুম, অর্থাৎ আমাদের কাছে ও-বস্তু ছিল একটি অখণ্ড মহাশূন্য। সুতরাং সেই আকাশে আমরা কল্পনার সাহায্যে এমন-সব গিরি-পূৱী নির্মাণ করে চলেছিলুম, যার ত্ৰিসীমানার ভিতর বিজ্ঞানের গোলাগুলি পৌছয় না। বাংলার নবীন প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে এ কার্যটি অকাৰ্য বলেই স্থির হল ; কেননা, বৈজ্ঞানিক-মতে ইতিহাস গড়বার জিনিসও নয়, পড়বার জিনিসও নয়— শুধু চোড়বার জিনিস। সুতরাং ও-জিনিসের অন্বেষণ পায়ের নীচে করতে হবে- মাথার উপরে নয়। যারা আবিষ্কার করতে চান, তাদের কর্মক্ষেত্র ভূলোক, দুহালোক নয় ; কেননা, আকাশদেশ তো স্বতঃআবিষ্কৃত। এই কারণে, সক্রেটিস যেমন দর্শনকে আকাশ থেকে নামিয়ে মাটির উপরে এনে ফেলেছিলেন, আমাদের বৈজ্ঞানিক ঐতিহাসিকেরাও তেমনি ভারতবর্ষের ইতিহাসকে আকাশ থেকে পেড়ে মাটির নীচে পুতে ফেলেছেন। ( এ দলের মতে ভারতবর্ষের অতীত পঞ্চােত্বপ্রাপ্ত হলেও পঞ্চভূতে মিশিয়ে যায় নি ; কেননা, কাল অতীতের অগ্নিসৎকার করে না, শুধু তার গোর দেয়। এক কথায়, অতীতের আত্মা স্বৰ্গে গমন করলেও তার দেহ পাতালে প্ৰবেশ করে। তাই ভারতবর্ষ ইতিহাসের মহাশ্মশান নয়, মহাগোরস্থান। অতএব ভারতবর্ষের কবর খুঁড়ে তার ইতিহাস বার করতে হবে- এই জ্ঞান হওয়ামাত্র আমাদের দেশের যত বিদ্বান ও বুদ্ধিমান লোকে কোদাল পাড়তে শুরু করলেন এই আশায় যে, এ দেশের উত্তরে
পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৪৯
অবয়ব