গতি অনুভব করিতেছে, বলদর্পিত অশ্বও পদপীড়িত পৃথিবী হইতে আপনাকে স্বতন্ত্র বলিয়া মনে করিতেছে; কিন্তু অত্যুচ্চ প্রাচীরের উপরে দণ্ডায়মান এক প্রহরী ইহাদের স্বতন্ত্র সত্তা আদৌ লক্ষ্য করিতেছে না, সে দেখিতেছে একটি অখণ্ড পদার্থ পৃথিবীর উপরে নড়িতেছে; বায়ুবেগে আন্দোলিত কেশর যেমন অশ্বেরই দেহাংশমাত্র, উক্ত অখণ্ড পদার্থটি তদ্রূপ ধরণীরই অংশমাত্র। তেমনি যিনি জ্ঞানের উচ্চ চূড়ায় আরোহণ করেন, তিনিই পূর্ণ সত্যের সাক্ষাৎকার লাভ করিয়া থাকেন।
মানব যতদিন আপনার প্রীতিকামনায় তুচ্ছ সুখভোগের অন্বেষণ করিবে এবং আপনার ক্ষুদ্র ব্যক্তিত্বকে ফাঁপাইয়া-ফুলাইয়া তুলিবে, ততদিন সে কোনোক্রমে দুঃখের হাত এড়াইতে পারিবে না। আর যখন তাহার রাগদ্বেষাদি থাকিবে না, চিত্ত শান্ত হইবে, তখনই ধর্ম্ম সম্যক্ উপলব্ধি করিয়া অলৌকিক আনন্দ লাভ করিবে।
মহাপুরুষ বুদ্ধের জীবন মানবকে এই কথাই বলিতেছে—হে মানব, যে ক্ষুদ্র অহংবুদ্ধি তোমাকে বিশ্ব হইতে পৃথক্ রাখিয়াছে, ঐ ভেদবুদ্ধি তোমার প্রার্থনীয় নহে; বুদ্ধি স্থির করিয়া তুমি শীল গ্রহণ কর; মঙ্গলব্রতসাধনের বিমল আনন্দ লাভ করিলে ক্রমশঃ তোমার সকল দুঃখের ধ্বংস হইবে। পুষ্পিত তরুর ন্যায় তুমি রাগদ্বেষাদি-ম্লান কুসুমগুলি ত্যাগ কর। বোধকে জাগরিত করিয়া তুমি আপনাকে প্রসারিত করিলেই সকল হীনতার, সকল ক্ষুদ্রতার উর্দ্ধে উঠিয়া দেশকালের অতীত বিশ্বের সহিত ঐক্য অনুভব করিবে। এই ঐক্যানুভূতিই তোমার প্রার্থনীয়। এই