অতঃপর বুদ্ধ ভিক্ষুগণসহ আবার অগ্রসর হইতে লাগিলেন। তাঁহারা কুকুত্থানাম্নী এক নদীর তীরে উপস্থিত হইয়া স্নান ও জল পান করিয়া ক্লান্তি দূর করিলেন। এখানে এক আম্রকুঞ্জে বিশ্রাম করিবার সময়ে বুদ্ধ আনন্দকে নিভৃতে আহ্বান করিয়া বলিলেন—“আনন্দ! পরিনির্ব্বাণলাভের শুভমুহূর্ত্ত উপস্থিত হইয়াছে। দেখ, আমার মৃত্যুতে শোকাভিভূত হইয়া কেহ হয় ত এই কথা বলিয়া চুন্দের মনে বেদনা জন্মাইতে পারেন যে, তাহারই অন্নগ্রহণ করিয়া আমার জীবনবিয়োগ ঘটিয়াছে। কিন্তু তুমি চুন্দকে সান্ত্বনা দিবার জন্য কহিও—“চুন্দ, তথাগত তোমারই হস্তে শেষ আহার গ্রহণ করিয়া পরিনির্ব্বাণ লাভ করিয়াছেন, ইহা তোমার পক্ষে মঙ্গল, পরম লাভ। আমি তাঁহারই মুখে শুনিয়াছি, জীবনে দুইটী মাত্র মহৎ ভোজ্য তিনি দানরূপে গ্রহণ করিয়াছেন, এই দুইটী ভোজ্যই তিনি তুল্য ফলপ্রদ ও তুল্য কল্যাণকর মনে করিয়াছেন। সুজাতার হস্তে মহামূল্য আহার গ্রহণ করিয়া তিনি বোধিলাভ করিয়াছিলেন। অপর একদিন তোমারই হস্তে শেষ আহার গ্রহণ করিয়া তিনি পরিনির্ব্বাণ প্রাপ্ত হইয়াছেন।”
আম্রকুঞ্জে কিছুকাল বিশ্রাম করিয়া বুদ্ধ আনন্দকে কহিলেন—“চল আনন্দ, আমরা কুশীনগরের উপপত্তনে শালবনে গমন করি।” যথাসময়ে ভিক্ষুগণসহ বুদ্ধ মল্লদের শালকুঞ্জে উপস্থিত হইলেন। তাঁহার আদেশ শিরোধার্য্য করিয়া, আনন্দ দুইটী পল্লবিত শালতরুর অবকাশস্থলে উচ্চমঞ্চে শয্যা রচনা করিলেন। বুদ্ধ উত্তরশীর্ষ হইয়া তথায় শয়ন করিলেন এবং আনন্দকে ধীরকণ্ঠে কহিলেন—“আজ রাত্রির শেষ প্রহরে আমার পরিনির্ব্বাণ লাভ হইবে,