পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

विका-न्काद्भ कथं SSG জন্য ছাগ-মহিষ বলি দিয়া কালী মায়ের তুষ্টি সাধন করিতে হইত। এই সকল আজগুবী বর্ণনার কতকগুলি অতিরঞ্জিত সংস্কার হইতে উৎপন্ন হইলেও ইহা চাদ সদাগরের অতুলনীয় বাণিজ্য, তরণী, নৌবল এবং বিপুল বৈভবের প্রতি ইঙ্গিত করে। তখন রাজপুত্র ও সদাগরের পুত্রের মৰ্য্যাদা প্ৰায় তুল্য ছিল। চাঁদ সদাগর রাজদণ্ড কেন ব্যবহার করেন, লঙ্কার রাজা এই প্রশ্ন করিলে তিনি বলিয়াছিলেন, বাঙ্গলা দেশে বণিকের রাজার মতনই সম্মানিত । রূপকথা গুলিতে দৃষ্ট হয়, রাজপুত্র ও সওদাগরের পুত্রের মৰ্য্যাদা প্ৰায় তুল্য। সেই সকল বণিক-রাজের দেশে আজকাল জেলেরাও চারটি ভাত পায় না। সপ্তগ্রাম বাঙ্গলার প্রাচীন বন্দর ছিল । এখানে জাহাজ নিৰ্ম্মিত হইত। সমুদ্রযাত্রার প্রাক্কালে সরস্বতী নদী হইতে বণিকেরা “মিঠা পানি” তুলিয়া লইত। ঐ নদী শুকাইয়া যাওয়ার পর সপ্তগ্রামের ঐশ্বৰ্য্য লুপ্ত হয় এবং চট্টগ্রাম বঙ্গদেশের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হয়। পল্লীগাথায় যে সকল বাণিজ্য-তরণীর বর্ণনা পাওয়া যায়, • তাহাতে- অতিরঞ্জন অতি অল্প । চট্টগ্রামে নিৰ্ম্মিত জাহাজে চড়িয়া বাঙ্গালীরা এককালে লঙ্কা, লক্ষাদ্বীপ, মাটিাবান প্ৰভৃতি দেশে যাইতেন । “নিলক্ষা” শব্দ বোধ হয় লক্ষাদ্বীপকে, “প্ৰলম্ব” প্ৰম্বনিমকে ও “আবৰ্ত্তনা” মাটাবানকে বুঝাইতেছে। “নাকুট,” “অহীলঙ্কা,” “চন্দ্রসালা” প্ৰভৃতি যে সকল দেশের নাম পাওয়া যাইতেছে, তাহারা খুব সম্ভব। ভারত-সাগরের কোন কোন দ্বীপ। চট্টগ্রাম ও তাম্রলিপ্ত বঙ্গদেশের এই দুই বন্দর বিশ্ববিশ্রাত। চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর তীরবাসী “বালামী” নামক এক শ্রেণীর লোক জাহাজ নিৰ্ম্মাণ কবিত। এখনও বালামীদের বংশধরেরা ছোট ছোট জাহাজ নিৰ্ম্মাণ করিয়া থাকে। “বালামী নৌকা” ইহাদের নামানুসারে পরিচিত । চীন পরিাব্ৰাজক মাহুন্দের লিখিত বিবরণ হইতে জানা যায়—একদা তুরস্কের সুলতান আলেকজাণ্ডিয়ার জাহাজ-নিৰ্ম্মাণপদ্ধতিতে অসন্তুষ্ট হইয়া চট্টগ্রাম হহন্তে অনেকগুলি জাহাজ নিৰ্ম্মাণ করাইয়া লইয়াছিলেন। আরবী লেখক ইদ্রিস দ্বাদশ শতাব্দীতে চট্টগ্রামের সহিত বাণিজ্য-সম্বন্ধের উল্লেখ করিয়াছেন-তিনি সে দেশের নাম করিয়াছেন “কৰ্ণবুল”— এই শব্দ ‘কর্ণফুল’ শব্দের অপভ্ৰংশ । ১৪০৫ খৃঃ অব্দে চীন দেশের মন্ত্রী চেং হো বাণিজ্য-সম্বন্ধে কতকগুলি প্রশ্নের সমাধানার্থ স্বয়ং চট্টগ্রামে আসিয়াছিলেন, এবং ১৪৪৩ খৃষ্টাব্দে সুপ্ৰসিদ্ধ আরবীয় পৰ্য্যটক ইবনবতাতু চট্টগ্রামের জাহাজে চড়িয়া জাবা এবং চীনে গমন করিয়াছিলেন। ১৫৫৩ খৃঃ অব্দে পর্তুগিজ নাদু ডি চােন! (গােয়ার শাসনকৰ্ত্তা) তাহার সেনাপতি দি মান্নাকে চট্টগ্রামে র্তাহাদের একটা বাণিজ্য-কেন্দ্ৰস্থাপনার্থ পাঠাইয়া দিয়াছিলেন । যুরোপীয় নব-উদ্ভাবিত যন্ত্র-চালিত জাহাজের প্রতিযোগিতায় চট্টগ্রামের এই বিপুল জাহাজ-নিৰ্ম্মাণ কারবারটি ১৮৭৫ খৃষ্টাব্দে হতশ্ৰী হইয়া পড়িল। চট্টগ্রামে অষ্টাদশ শতাব্দীর অনেক জাহাজের মালিকদের নাম লোকে বলিয়া থাকে-ৰ্তাহারা জগতের সঙ্গে প্ৰতিযোগিতা চালাইতেন। মুসলমান রাজত্বের শেষভাগে তাহারা জীবিত ছিলেন-রঙ্গ, বসির, গুমানি মালুম, মদন কেরানি, দাতারাম চৌধুরী প্ৰভৃতি জাহাজধ্যক্ষদের কোন কোন জনের শতাধিক জাহাজ ছিল। ইহারা হাৰ্ম্মাদ দিগের অত্যাচারের সময়ে বৃহৎ নৌসজঘ লইয়া অগ্রসর হইতেন । এই শ্রেণীবদ্ধ জাহাজ