পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&RVb বৃহৎ বঙ্গ গুলিকে 'শ্ল'পবহর” বলা হইত। যিনি হাৰ্ম্মাদদিগকে দমন করিয়া খ্যাতি লাভ করিতেন, র্তাহাকে “বহরদার” বলা হইত। উনবিংশ শতাব্দীর আদিকালেও নাবিকগণের কেহ কেহ জীবিত ছিলেন ; পিরু সদাগর, নম্বুমালুম, রামমোহন দারোগ প্ৰভৃতির নাম এখনও শোনা যায়। রামমোহন দারোগার জাহাজ বাণিজ্যদ্রব্য লইয়া স্কটলণ্ডের টুইড বন্দরে গিয়াছিল। চট্টগ্রাম-নিৰ্ম্মিত কতকগুলি জাহাজের বিবরণ সংক্ষেপে আমরা এখানে দিব :- ১ । বালাম নৌক-ইহা পূৰ্ব্বে যত বড় হইত, এখন আর তত বড় হয় না। সাধারণতঃ ইহারা ১৬ দাড়ে, পাল উড়াইয়া চলে। ইহাদের মধ্যে বড় গুলি ২০০ এমন কি ২৫০ টন ধান্য বোঝাই লইয়া যাইতে পারে। কিন্তু ৫০ টনের অধিক মাল লইয়া ইহাদিগকে সমুদ্র-পথে যাইতে দেওয়া হয় না। এই ক্ষিপ্ৰগামী বালাম নৌকা যন্ত্রাদির সাহায্য বিনাও অনায়াসে ভারত-সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গ কাটিয়া চলিয়া যায়। এক সময়ে ইহারা অতি প্ৰকাণ্ড হইত। ২। গোধা নৌকা-ইহাও অতি প্ৰাচীন । এই নৌকাগুলি সচরাচর অতি দীর্ঘ হয়। ইহারা সাধারণতঃ শুটুকি মাছের কারবারের জন্য ব্যবহৃত হয়। বৰ্ত্তমান কালে ইহারা সমুদ্রপথে সোনাদিয়া, লালদিয়া, রাঙ্গাবালী প্রভৃতি বঙ্গোপসাগরের দ্বীপপুঞ্জে মৎস্যের কারবার উপলক্ষে যাতায়াত করে । এই নৌকাগুলি লৌহের পেরেক দিয়া আটকান হয় না। “গল্লক” নামক বেত দিয়া নৌকার বিভিন্ন অংশ জোড়া দেওয়া হয়, এবং সেই বেতের অবকাশে “শ্যামা” গুলি ( ছিদ্র ) দড়ি, তুলা, ধুনা প্রভৃতির দ্বারা এমন শক্ত করিয়া আটকান হয় যে, তাহাতে জলপ্রবেশেব কোন সম্ভাবনা থাকে না । গোধা নৌকার ভিন্ন ভিন্ন অংশ খুলিয়া রাখা হয়। বর্ষাকালে সেগুলি জোড়া দিয়া নৌকা সমুদ্রযাত্রার জন্য প্ৰস্তুত করা হয় ; ইহাদের গলুই হাঙ্গরমুখো করা হয়। যখন বর্ষাকালে সমুদ্রপথ পৰ্য্যটন করিয়া বিপুল মৎস্যের পশার লইয়া শত শত গোধা নৌকা কর্ণফুলী নদীতে আসিয়া নঙ্গর করে, তখন সেই মৎস্য ব্যবসায়ীদের আত্মীয়স্বজন দামামা, দগড় ও ঢোল পিটিয়া ও বঁাশী বাজাইয়া তাহাদিগকে যেরূপ অভিনন্দন করে, তাহা একটা দর্শনীয় ব্যাপার। ৩। শ্লীপ নৌকাগুলি অনেকটা বালামের মতই, পর্তুগীজ প্রভাবে কতকটা রূপান্তরিত হইয়া ঐ নাম পরিগ্ৰহ করিয়াছে। ৪। সারেঙ্গা নৌকা-কতকটা ডোঙ্গা বা সালটির মত। এগুলি সমুদ্রে যাইতে সাহসী হয় না ; একটি বড় গাছ কুঁদিয়া নিৰ্ম্মিত হয় । ৫ । সাম্পান-অনেকটা হাসের মত আকৃতি, ইহা চীনা নৌকার ধরণে প্ৰস্তুত । ৬। কোন্দা-চট্টগ্রামের অরণ্যসমূহের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ বৃক্ষ কুঁদিয়া এই শ্রেণীর নৌকা তৈরী হয় । ইহা বহু মালি লইয়া যাতায়াত করে, মাঝিরা ইহা লাগি দিয়া ঠেলিয়া চালাইয়া থাকে। এখন চট্টগ্রামের বাঙ্গালীরা যন্ত্রচালিত জাহাজনিৰ্ম্মাণ শিক্ষা কবিতেছে। মিঃ উইলিয়ামস এবং লেফটুন্তাণ্ট উইলসনেব। উৎসাহে ইহার এই বিষয় শিখিয়াছে। উইলসন বালামীদের হাতের কাজ দেখিয়া বিস্ময় প্ৰকাশ করিয়াছেন ; ইহারা জাহাজ-নিৰ্ম্মাণে সুদুর্লভ কৃতিত্ব দেখাইতেছে ।