পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গের প্রাদেশিক ইতিহাস-ত্রিপুরা-রাজ্য S OSS গৌড়েশ্বর ছিলেন সম্ভবতঃ লক্ষ্মণসেনের বংশধর সুবর্ণগ্রামের কোন রাজা । * পূর্ববঙ্গে তখনও হিন্দু শাসন অক্ষুন্ন ছিল। কেশবসেন অথবা দনৌজ মাধব হয়ত এই সময়ে স্বর্ণগ্রামে রাজত্ব করিতেছিলেন । ইহারা সকলেই ‘গৌড়েশ্বর” উপাধি ধারণ করিতেন। ছোংথোম্পার পুত্ৰ আচোঙ্গ ফার সময়ে আর একটি প্ৰথা প্ৰবৰ্ত্তিত হয়। রাজার নাম অনুসারে শুধু “মা রাণী” যোগ দিয়া মহারাজ্ঞীর নাম রচিত হইত, যথা আচোঙ্গের মহিষীর উপাধি হইল “আচোঙ্গ মা-রাণী”, তৎপুত্র “খিচোঙ্গের” রাজ্ঞী “খিচোঙ্গ মা-রাণী” এই নামে অভিহিত হইতেন। কিন্তু এই প্ৰথা খুব দীর্ঘকাল ছিল না। আচোঙ্গরাজ জয়ন্তের (জৈন্তাপাহাড় ) রাজ-কন্যার পাণিগ্রহণ করেন। সুতরাং ত্রিপুর-রাজের সঙ্গে কাছাড়, মণিপুর ও জৈন্তাপাহাড়-রাজের আদান-প্ৰদানের সম্বন্ধ হইয়াছিল। আচোঙ্গ রাজার পুত্ৰ ডাঙ্গর ফার ১৮টি পুত্র জন্মে ; ইহাদের কাহাকে রাজ্যদান করিবেন, এই সমস্যায় তিনি বিব্রত হইয়া পড়েন ; অবশেষে স্থির করিলেন, যিনি সৰ্ব্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান তিনিই রাজ্যের অধিকারী হইবেন । বুদ্ধির শ্রেষ্ঠত্ব নিরূপণ করিবার জন্য তিনি ১৮টি পুত্ৰকেই একস্থানে খাওয়াইতে বসাইয়া কুকুর-রক্ষককে ত্রিশটি অভুক্ত কুকুর ছাড়িয়া দিতে ইঙ্গিত কবিলেন। ক্ষুধাৰ্ত্ত কুকুরগুলি ছুটিয়া আসিয়া কুমারগণের পাত্ৰে মুখ দিল, সুতরাং তঁাহারা খাদ্যতাগ করিযী উঠিয়া পড়িলেন ; সৰ্ব্বকনিষ্ঠ পুত্র রত্ন ফা। কিন্তু আসন ত্যাগ করিলেন না, কুকুর তদীয় অন্নপাত্রের সন্নিহিত দেখিয়া তিনি দূর হইতে ভাত ছড়াইয়া দিতে লাগিলেন, তাহাতে কুকুরগুলি দূরেই রহিয়া গেল, ইতিমধ্যে তিনি আহার সমাধা করিয়া ফেলিলেন। কনিষ্ঠ পুত্রের বুদ্ধির পবিচয় পাইয়া রত্ন ফাকে গৌড়েশ্বরের সভায় পাঠাইয়া দিলেন এবং বাকী ১৭ জনের মধ্যে রাজ্য বিভাগ করিয়া তাহাদিগকে “রাজাফা” নামক জ্যেষ্ঠ পুত্রের অধীনে শাসনকৰ্ত্তা নিযুক্ত করিলেন। রাজাফা যৌবরাজ • পাইয়া “রাজনগরে স্বীয় রাজধানী স্থাপন করিলেন। তৎপরে নিম্নলিখিত স্থানগুলির শাসনভার অপরাপর কুমারদের মধ্যে বিভাগ করিয়া দিলেন-(১) কাইচরঙ্গ (২) আচরঙ্গ (৩) তারক (৪) বিশালগড় (৫) ঘুটিমুড়া (৬) নাকি বাড়ী (৭) আগরতলা ( “আগরফা পুত্রে রাজা আগরতলা দিল” --ডাঙ্গফাখণ্ড, রাজমাল; ) (৮) মধুগ্রাম (৯) ধৰ্ম্মনগর (১০) থানাংচি (১১) ধোপাপাথর (১২) লাউগঙ্গা (১৩) মোহিত্নীগঙ্গা (১৪) বরাক নদীতীর অবধি (১৫) তেলাই কাজ (১৬) মণিপুর। রাজাফী-সকলের উপরে ; তিনি রাজনগরে বাস স্থাপন করিলেন, তাহা পূর্বেই উক্ত হইয়াছে। এই প্রদেশগুলি এক বহু বিস্তৃত রাজ্যের সীমা প্রদর্শন করে। এক দিকে পদ্মানদী-অপর দিকে নাগা-পাহাড়। উত্তরে খাসিয়া পাহাড় এবং দক্ষিণে সমুদ্র-মোটামুটি এই ভাবে সীমা নির্দেশ করা যাইতে পারে। রত্নফা বহুসৈন্য ও ধনরত্ন লইয়া গৌড়ে গমন করেন। গৌড়েশ্বরের সঙ্গে ডাঙ্গরফার বিশেষ সৌহার্দ্য ও মৈত্রী ছিল এবং রত্নফা তথায় থাকিয়া রাজনীতি শিখিতে পরিবেন,- “যে সমযে এই যুদ্ধ ত্রিপুরায় হইল। গৌড়দেশে সেনাৰংশী রাজগণ ছিল।”-ত্রিপুর-বংশাবলী।