পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাঠান রাজত্ব সম্বন্ধে নানা কথা VG প্ৰাধান্যকালে বাদ সাহিগণ একেবারে বাঙ্গালী বনিয়া গিয়াছিলেন, তাহদের দলিলপত্ৰও অনেক সময়ে বাঙ্গলা ভাষায় লিখিত হইত। শের সাহের কামানের উপর বাঙ্গলা অক্ষরে তাহার নাম ও উপাধি পাওয়া গিয়াছে। ২৩ শত বৎসর পূর্বে ত্রিপুররাজ্যোিব তাম্রশাসনগুলি বঙ্গভাষায় ও বঙ্গাক্ষরে উৎকীর্ণ হইতে ; সে সময়ে মুসলমানেরাই বাঙ্গলার এই বিস্তারের সহায়তা করিয়াছিলেন বলিয়া মনে হয়। তাহারা হিন্দুর পুরাণ ও অপরাপর শাস্ত্রের মৰ্ম্ম জানিবার জন্য আগ্রহশীল ছিলেন। সংস্কৃত সম্পূৰ্ণ অনধিগম্য এবং বাঙ্গলা তাহদের কথ্য ভাষা ও সুখপাঠ্য ছিল, এজন্য তঁাহাবা হিন্দুর শাস্ত্ৰগ্ৰন্থ তৰ্জমা করিতে উপযুক্ত পণ্ডিতদিগকে নিযুক্ত করিয়াছিলেন। হিন্দুর গান ও উৎসবাদি মুসলমান বাদাসাহের দরবারে অবিরত উৎসাহ পাইত। এইভাবে কীৰ্ত্তন শুনিবার স্পৃহাবশতঃ গৌড়ের কোন সম্রাটু আমাদের কবিসম্রাট চণ্ডীদাসের হত্যার কারণ হইয়াছিলেন। রাজরাজড়ার সতত সংঘর্ষ ও নিববধি যুদ্ধবিগ্ৰহাদি-উত্থানপতন প্ৰভৃতি রাজকীয় পতাকার নিত্য পরিবর্তনশীল অবস্থান্তর পল্লীসমাজকে একেবারেই স্পশ করে নাই। ব্ৰাহ্মণ র্তাহার খড়ে। ঘরের মেজেয় মাদুর পাতিয়া খাগের কলম দিয়া তেরেট বা তালপত্রের উপর বেদবেদাঙ্গের ব্যাখ্যা লিখিয়া যাইতেন ; বৈয়াকরণ, তা কিক, ও নৈয়ায়িক যখন স্বীয় স্বীয় গ্রন্থেব, আলোচনায় নিযুণ্ড" থাকিতেন, তখন তাহারা মুক্ত কচ্ছ হইয়া তন্ময়ত্ব প্ৰাপ্ত হইতেন । বিলাস। তঁহাদের বাড়ীরত্রি সীমানায় প্রবেশ করিতে পারে নাই । তাহাদের খড়ো ঘরেব চালার উপর আলাবুলতা দুলিয়া তাঁহাদেব একান্ত উপেক্ষিত দারিদ্র্য ও সাংসারিক সিম্পৃক্ততা প্রমাণ কবিত। কোন কোন সমন্ধ এক একটা রাজনৈতিক ঝড় বহিয়া যাইত সত্য, কিন্তু তাহার ফল বেশীদিন থাকিত না । দেশের বাণিজ্যাদির উপরও বাদাসাহের কোনরূপ হাত দিতেন না । পাঠানোবা তরবারি লইয়। এদেশে প্রবেশ করিয়াছিলেন, এদেশে তরবানি তাহারা একাদিনও পরিত্যাগ করেন নাই, তাহারা বাদাসাহের বা তৎপ্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রয়োজনের জন্য শবীরে বম্মচৰ্ম্ম আটিয়া যুদ্ধক্ষেত্রের জন্যই উদ্যুত হইয়া থাকিতেন ; ইহার কৃষির কোন ধার ধারিতেন না । সুতরাং ধনশালী হিন্দুরাই তখন কৃষিপ্রধান বাঙ্গলাব একরূপ মালিক ছিলেন ; শুধু কৃষি পাঠােণশ্বৰ" পিঠা"ৰ নহে, ব্যবসায়-বাণিজ্য যাহা কিছু তাহ সমস্তই হিন্দুদের হাতে बांत्रिं ७ स्त्रर्थं । ছিল। ষ্টুয়াট সাহেব লিখিয়াছেন, “অধিকাংশ আফগানই তাহদেব জায়গীরগুলি ধনবান হিন্দুদের হাতে ছাড়িয়া দিতেন ; গৃহসুখে তাহদের কপালে বড় থাকিত না, কারণ প্রায়ই তাহদের নেতাদের আহবানে তাহাদিগকে গৃহ ছাড়িয়া যুদ্ধক্ষেত্রে যাইতে হইত, বিশেষ ইহাদের বাণিজ্যাদি কাৰ্য্যোব প্রবৃত্তি আদৌ ছিল না। এই জায়গীরগুলির ইজারা সমস্তই ধনশালী হিন্দুরা লইতেন এবং ইহারাই ব্যবসায়-বাণিজ্যের সমস্ত সুবিধা ভোগ করিতেন।” (খুঁয়ার্টের বাঙ্গালা ইতিহাস, বঙ্গবাসী সংস্করণ, ১৯১০ খৃঃ, পৃঃ ১৯০ । ) এই সকল কারণে বঙ্গদেশে কোন স্বর্ণখনি না থাকিলেও মহাসমৃদ্ধির জন্য এদেশ “সোণার বাঙ্গল” উপাধি পাওয়ার যোগ্য হইয়াছিল। ষ্টুয়ার্ট সাহেব ১৪৮৯ খৃঃ অব্দের এবং তৎসন্নিহিত সময়ের বৃহৎ বঙ্গ/ ৪৭