NS বৈকুণ্ঠের উইল একপ্ৰান্ত হইতে-কাহারো শুনিতে কিছুমাত্র অসুবিধা না হয় সে দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখিয়া পুনরায় বলিল, ফখন-তখন শুধু রাশ রাশ টাকা যোগাবার বেলাতেই দাদা। আমার মামাদেরও দু-পাঁচটা পাশ করে বেরুতে দেখচি ত। কিন্তু সাবধান করে দিতে গেলেই তখন বড় তেতো লাগত। তা বাবু, তেতোই লাগুক আর মিষ্টিই লাগুক, নিজের টাকা আমন করে অপব্যয় হ’তে থাকলে নিজের ছেলেপিলের মুখ চেয়ে আমি কিছু আর চিরকালটা মুখ বুজে থাকতে পারি নে। মুখুঢ় দাদা পেয়েচে, যত পেরেচে, তত ঠকিয়েচে। ঠকাগ, আমার কি ? ওর নিজের ছেলেমেয়েই পথে বসবে। বলিয়া বড়বে। সত্য সত্যই চলিয়া গেল । গোকুল হাত-পা ছুড়িয়া লাফাইয়া উঠিল। অনুপস্থিত স্ত্রীকে লক্ষ্য করিয়া গর্জন করিতে লাগিল । কি! আমি মুখ্য ? কোন শালা বলে ? এ সব বিষয়-সম্পত্তি করলে কে ? আমি না বেন্দ ? আমার চােখে ধূলো দিয়ে টাকা আদায় করে নিয়ে যাবে।--বেন্দার বাপের সাধ্যি আছে ? আমি বড়, সে ছোট। সে চারটি পাশ করে থাকে ত আমি দশটা পাশ করতে পারি, তা জানিস? আমি মুখু ? বাড়ি ঢুকলে দরওয়ান দিয়ে তাকে দূর করে দেব-দেখি, কে তাকে রাখে! এমনি অসংলগ্ন এবং নিরর্থক কতা-কি সে অবিশ্ৰান্ত চীৎকার করিতে লাগিল। ভবানী সেই যে নীরব হইয়া ছিলেন, আর কথা কহিলেন না। বহুক্ষণ পৰ্য্যন্ত একভাবে পাথরের মত ঘসিয়া থাকিয়া, এক সময়ে ধীরে ধীরে উঠিয়া গেলেন।
পাতা:বৈকুন্ঠের উইল - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৩
অবয়ব