পাতা:বৌদ্ধধর্ম - হরপ্রসাদ শাস্ত্রী.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নির্বাণ বৌদ্ধধর্মের নির্বাণ বুঝিতে গেলে অনেকগুলি কথা বুঝিতে হয় ; এবং সেই সকল কথা বুঝিয়া উঠাও অতি কঠিন। মোটামুটি ধরিতে গেলে নির্বাণ শব্দে নিবিয়া যাওয়া বুঝায়। প্ৰদীপ যেমন নিবিয়া যায়, তেমনিই মানুষ নিবিয়া গেল। প্ৰদীপ নিবিয়া গেলে কিছু থাকেনা ; মানুষ নিবিয়া গেলেও কিছুই থাকে না । এ কথাটা, শুনিতে যত সোজা, ভাল করিয়া বুঝিতে গেলে তত সোজা নয়। প্ৰদীপ নিবিয়া গেল, আর কিছু নাই, একেবারে শেষ হইয়া গেল ; কিন্তু মানুষ নিবিয়া গেলে কি সেইরূপ একেবারে শেষ হইয়া যায় ? একেবারে ‘নিহিল’ হইয়া যায় ? একেবারে ‘এনিহিলেসন’ হইয়া যায় ? একেবারে “নাস্তি’ হইয়া যায় ? এইখানেই গোল বাধিল । আমি একেবারে থাকিব না, এবং সেইটিই আমার জীবনের প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য হইবে ? আমি তপ জপ, ধ্যান ধারণা করিব, শুদ্ধ আমার অস্তিত্বটি বিলোপ করিবার জন্য ? এ ত বড় শক্ত কথা । অনেকে মনে করেন, বুদ্ধ এইরূপ আত্মার বিনাশই নিৰ্বাণ শব্দের অর্থ করিয়াছিলেন। এইজন্য অনেক পাদরী সাহেবেরা বলেন বৌদ্ধের নিহিলবাদী বা বিনাশবাদী। বুদ্ধ নিজে কি বলিয়াছেন, তাহা আমাদের জানিবার উপায় নাই। র্তাহার নির্বাণের পাচি শত বৎসর পরে লোকে তঁাহার বক্তৃতার যেরূপ রিপোর্ট দিয়াছে, তাহাই আমরা দেখিতে পাই। তাছাও, আবার, তিনি ঠিক যে ভাষায় বলিয়াছিলেন, সে ভাষার কিছুই পাওয়া যায় না । পালি ভাষায় তাহার যে রিপোর্ট তৈয়ারি হইয়াছিল, সেই রিপোর্টমাত্র পাওয়া যায়। তাহাতেও ঐরূপ প্ৰদীপ নিবিয়া যাওয়ার সহিতই নির্বাণের তুলনা করে। কিন্তু লোকে বুদ্ধদেবকে অনেকবার জিজ্ঞাসা করিয়ছিল যে নির্বাণের পর কি থাকে। সুতরাং নির্বাণে যে একেবারে সব শেষ "হইয়া যায়, তাহার শিষ্যেরা সেটা ভাবিতেও যেন ভয় , পাইত ।