পাতা:বৌদ্ধধর্ম - হরপ্রসাদ শাস্ত্রী.pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৌদ্ধ ধৰ্ম্ম


পারস্যের পশ্চিমে বৌদ্ধধর্মের প্রভাব নিতান্ত কম ছিল না। কারণ রোমান কাথলিকদিগের অনেক আচার ব্যবহার, রীতিনীতি, পূজা-পদ্ধতি বৌদ্ধদেরই মত। রোমান কাথলিকদের মধ্যে দুই জন 'সেন্ট' বা মহাপুরুষ আছেন, তাহাদের নাম ‘বারলাম' ও 'জোসেফট'। অনেক পণ্ডিত স্থির করিয়াছেন যে এই দুইটি শব্দ বৌদ্ধ ও বোধিসত্ত্ব শব্দের রূপান্তরমাত্র ।
অনেকে এই বৌদ্ধধৰ্ম্মের ইতিহাস লিখিবার চেষ্টা করিয়াছেন। কিন্তু কেহই ইচ্ছার সম্পূর্ণ ইতিহাস দিতে সক্ষম হন নাই। কারণ বৌদ্ধেরা বড় আপনাদের ইতিহাস লিখেন নাই। মুসলমানের সাত শত বৎসর ভারতবর্ষে রাজত্ব করিয়াছেন, কিন্তু তঁহারা ভারতের বৌদ্ধধৰ্ম্মের নামও শুনেন নাই। তবকতিনাশিরী ওদন্তপুরী বিহার ধ্বংস হইবার ইতিহাস দিয়াছেন । তিনি বলেন, মহম্মদি বক্তিয়ার ঐ বিহারটাকে কেল্লা বলিয়া মনে করিয়াছিলেন এবং যখন উহার মধ্যে প্রবেশ করিয়া সমস্ত “দুর্গারক্ষী সৈন্য” বধ করিয়া ফেলিলেন, তখন দেখিলেন, সৈন্যদিগের চেহারা আর এক রকম ; তাহাদের সব মাথা মুড়ান ও পরনে গেরুয়া কাপড় । তখন তিনি মনে করিলেন, ইহারা "সব মাথা মুড়ান ব্রাহ্মণ" ! আবুল ফজল এত বড়, "আইনি আকবরী” লিখিয়া গিয়াছেন, তাহাতেও বৌদ্ধধৰ্ম্মের নাম গন্ধ পাওয়া যায় না। বৌদ্ধদের ইতিহাস লিখিবার চেষ্টা হিন্দুতে করে নাই, মুসলমানেরাও করে নাই, বৌদ্ধেরও বড় করে নাই ; করিয়াছেন ইউরোপীয় পণ্ডিতেরা, আর সেই ইউরোপীয়দিগের শিষ্য শিক্ষিত ভারতসন্তান। কিন্তু ইহাদের চেষ্টা কিরূপ হইতেছে? শুনা যায় এককালে কোন অন্ধনিবাসের লোকে হাতী দেখিতে ইচ্ছা করিয়াছিল। সকলেই অন্ধ, সুতরাং তাহাদের জীবন্ত হাতী দেখান কঠিন। সেইজন্য অধ্যক্ষ অন্ধগুলিকে একটি মরা হাতীর কাছে লইয়া গেলেন। কানারা হাত বুলাইয়া হাতী দেখিতে লাগিল। কেহ শুঁড়ে হাত বুলাইল, কেহ কাণে হাত বুলাইল, কেহ দাঁতে হাত বুলাইল, কেহ মাথায় হাত বুলাইল, কেহ পিঠে হাত বুলাইল, কেহ পায়ে হাত বুলাইল, কেহ লেজে হাত বুলাইল সকলেরই হাতী দেখা শেষ হইল। শেষে