পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
left
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
১১৭

বরঞ্চ পাইবার সম্ভাবনা আছে, সীতারামের হাতে দিলে সে সম্ভাবনা টুকুও নাই, এই প্রভেদ।

 মঙ্গলার এইরূপ অনুরাগের লক্ষণ দেখিয়া সীতারামের ভালবাসা একেবারে উথলিয়া উঠিল। সীতারাম রসিকতা করিবার উদ্যোগ করিল। বিনা টাকায় নবাবী করা ও বিনা হাস্যরসে রসিকতা করা সীতারামের স্বভাবসিদ্ধ। সে যাহা মুখে আসে তাহাই বলে, ও আর কাহারাে অপেক্ষা না করিয়া নিজেই হাসিতে থাকে। তাহার হাসি দেখিয়া হাসি পায়! সে যখন রাজবাড়ির প্রহরী ছিল, তখন আন্যান্য প্রহরীদের সহিত সীতারামের প্রায় মাঝে মঝে দাঙ্গাহাঙ্গামা বাধিবার উদ্যোগ হইত, তাহার প্রধান কারণ, সীতারাম যাহাকে মজা মনে করিত, আর সকলে তাহাকে মজা মনে করিত না। হনুমানপ্রসাদ তেওয়ারি পাহারা দিতে দিতে ঢুলিতে ছিল, সীতারাম আস্তে আস্তে তাহার পশ্চাতে গিয়া হঠাৎ পিঠে এমন এক কিল মারিল যে, সেই হাড়ভাঙ্গা রসিকতার জ্বালায় তাহার পিঠ ও পিত্ত এক সঙ্গে জ্বলিয়া উঠিল। সীতারাম উচ্চৈঃস্বরে হাসিতে লাগিল, কিন্তু হনুমানপ্রসাদ সে হাসিতে যােগ না দিয়া, কিলের সহিত হাস্যরসের প্রভেদ ও করুণ রসের সম্বন্ধ উদাহরণ দ্বারা সীতারামকে অতিশয় স্পষ্ট করিয়া বুঝাইয়া দিয়াছিল। সীতারামের রসিকতার এমন আরো শত শত গল্প এইখানে উদ্ধৃত করা যাইতে পারে।

 পূর্ব্বেই বলা হইয়াছে সীতারামের অনুরাগ সহসা উথলিত হইয়া উঠিল, সে রুক্মিণীর কাছে ঘেঁসিয়া প্রীতিভরে কহিল, ‘“তুমি আমার সুভদ্রা, আমি তােমার জগন্নাথ।”

 রুক্মিণী কহিল, “মর্ মিন্সে। সুভদ্রা যে জগন্নাথের বােন!”

 সীতারাম কহিল, “তাহা কেমন করিয়া হইবে? তাহা হইলে সুভদ্রাহরণ হইল কি করিয়া!”