পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৮
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

 রুক্মিণী হাসিতে লাগিল, সীতারাম বুক ফুলাইয়া কহিল, “না, তা হইবে না, হাসিলে হইবে না, জবাব দাও! সুভদ্রা যদি বােনই হইল তবে সুভদ্রা হরণ হইল কি করিয়া।”

 সীতারামের বিশ্বাস যে, সে এমন প্রবল যুক্তি প্রয়ােগ করিয়াছে যে, ইহার উপরে আর কথা কহিবার যাে নাই।

 রুক্মিণী অতি মিষ্টস্বরে কহিল, “দূর মূর্খ।”

 সীতারাম গলিয়া গিয়া কহিল, “মূর্খই ত বটে তােমার কাছে আমি ত ভাই হারিয়াই আছি, তােমার কাছে আমি চিরকাল মূর্খ!” সীতারাম মনে মনে ভাবিল, খুব জবাব দিয়াছি, বেশ কথা যােগাইয়াছে।

 আবার কহিল, “আচ্ছা ভাই, কথাটা যদি তােমার পছন্দ না হইল, কি বলিয়া ডাকিলে তুমি খুসী হইবে, আমাকে বল!”

 রুক্মিণী হাসিয়া কহিল, “বল প্রাণ।”

 সীতারাম কহিল, “প্রাণ!”

 রুক্মিণী কহিল, “বল প্রিয়ে।”

 সীতারাম কহিল, “প্রিয়ে!”

 রুক্মিণী কহিল, “বল প্রিয়তমে!”

 সীতারাম কহিল, “প্রিয়তমে!”

 রুক্মিণী কহিল, “বল প্রাণপ্রিয়ে।”

 সীতারাম কহিল, “প্রাণপ্রিয়ে!”

 “আচ্ছা ভাই প্রাণ-প্রিয়ে, তুমি যে টাকাটা দিলে, তাহার সুদ কত লইবে?”

 রুক্মিণী রাগ করিল, মুখ বাঁকাইয়া কহিল, “যাও যাও, এই বুঝি তােমার ভালবাসা! সুদের কথা কোন্ মুখে জিজ্ঞাসা করিলে?”

 সীতারাম আনন্দে উচ্ছ্বসিত হইয়া কহিল, “না না, সে কি হয়?