পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
১৫৭

গােলমাল চলিতে লাগিল—তাঁহার মন অত্যন্ত অধীর হইয়া উঠিল। সহসা দ্রুতবেগে তাঁহার কারাগারের দ্বার খুলিয়া গেল। কে একজন তাঁহার অন্ধকার গৃহে প্রবেশ করিল—তিনি চমকিয়া উঠিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন—“কে ও?”

 সে উত্তর করিল, “আমি সীতারাম, আপনি বাহির হইয়া আসুন।”

 উদয়াদিত্য কহিলেন—“কেন?”

 সীতারাম কহিল—“যুবরাজ কারাগৃহে আগুন লাগিয়াছে, শীঘ্র বাহির হইয়া আসুন!” বলিয়া তাঁহাকে ধরিয়া প্রায় তাঁহাকে বহন করিয়া কারাগারের বাহিরে লইয়া গেল।

 অনেক দিনের পর উদয়াদিত্য আজ মুক্ত স্থানে আসিলেন—মাথার উপরে সহসা অনেকটা আকাশ দেখিতে পাইলেন, বাতাস যেন তাহার বিস্তৃত বক্ষ প্রসারিত করিয়া তাঁহাকে আলিঙ্গন করিতে লাগিল। চোখের বাধা চারিদিক হইতে খুলিয়া গেল। সেই অন্ধকার রাত্রে, আকাশের অসংখ্য তারকার দৃষ্টির নিম্নে, বিস্তৃত মাঠের মধ্যে কোমল তৃণজালের উপর দাঁড়াইয়া সহসা তাঁহার মনের মধ্যে এক অপরিসীম অনির্ব্বচনীয় আনন্দের উদয় হইল। সেই আনন্দে কিয়ৎক্ষণ নিস্তব্ধ থাকিয়া তাহার পর সীতারামকে জিজ্ঞাসা করিলেন —“কি করিব, কোথায় যাইব?” অনেক দিন সঙ্কীর্ণ স্থানে বদ্ধ ছিলেন, চলেন ফেরেন নাই—আজ এই বিস্তৃত মাঠের মধ্যে আসিয়া অসহায় ভাবে সীতারামকে জিজ্ঞাসা করিলেন “কি করিব? কোথায় যাইব?” সীতারাম কহিল —“আসুন, আমার সঙ্গে আসুন!”

 এদিকে আগুন খুব জ্বলিতেছে। বৈকালে কতকগুলি প্রজা প্রধান কর্ম্মচারীদের নিকট কি-একটা নিবেদন করিবার জন্য আসিয়াছিল। তাহারা প্রাসাদের প্রাঙ্গণে একত্র বসিয়াছিল—তাহারাই প্রথমে আগুনের গােল তােলে। প্রহরীদের বাসের জন্য কারাগারের কাছে একটি দীর্ঘ