বসন্তরায় ব্যাকুল হইয়া বলিয়া উঠিলেন “আপনার মনে লুকাইয়া কাঁদে?”
সুরমা। “আজ বিকালে আমার কাছে কত কাঁদিতে ছিল।”
বসন্তরায়। “বিভা আজ বিকালে কাঁদিতেছিল?”
সুরমা। “হাঁ!”
বসন্তরায়। “আহা, তাহাকে একবার ডাকিয়া আন, আমি দেখি!”
সুরমা বিভাকে ধরিয়া আনিল। বসন্তরায় তাহার চিবুক ধরিয়া কহিলেন, “তুই কাঁদিস কেন দিদি? যখন তাের যা’ কষ্ট হয় তাের দাদা মহাশয়কে বলিস্ না কেন? তা হ’লে আমি আমার যথাসাধ্য করি? আমি এখনই যাই, প্রতাপকে বলিয়া আসি গে!”
বিভা বলিয়া উঠিল, “দাদামহাশয়, তােমার দুটি পায়ে পড়ি আমার বিষয়ে বাবাকে কিছু বলিও না। দাদামহাশয়, তােমার পায়ে পড়ি যাইও না!”
রলিতে বলিতে বসন্তরায় বাহির হইয়া গেলেন; প্রতাপাদিত্যকে গিয়া বলিলেন, “তােমার জামাতাকে অনেক দিন নিমন্ত্রণ কর নাই ইহাতে তাহার প্রতি নিতান্ত অবহেলা প্রকাশ করা হইতেছে। যশােহর-পতির জামাতাকে যতখানি সমাদর করা উচিত, ততখানি সমাদর যদি তাহাকে না করা হয়, তবে তাহাতে তোমারই অপমান। তাহাতে গৌরবের কথা কিছুই নাই।”
প্রতাপাদিত্য পিতৃব্যের কথায় কিছু মাত্র দ্বিরুক্তি করিলেন না। লােকসহ নিমন্ত্রণ-পত্র চন্দ্রদ্বীপে পাঠাইবার হুকুম হইল।
অন্তঃপুরে বিভা ও সুরমার কাছে আসিয়া বসন্তরায়ের সেতার বাজাইবার ধুম পড়িয়া গেল।
“মলিন মুখে ফুটুক হাসি জুড়াক্ দু নয়ন!”
বিভা লজ্জিত হইয়া কহিল, “দাদামহাশয়, বাবার কাছে আমার কথা সমস্ত বলিয়াছ?” বসন্তরায় গান গাহিতে লাগিলেন,