হই, তবে এবার আমার স্বামীকে তাঁহার পিতার হাত হইতে রক্ষা কর। আমি যে তাঁহাকে আজ এই বিপদের মধ্যে বিদায় দিলাম, সে কেবল তাের ভরসাতেই মা! তুই যদি আমাকে বিনাশ করিস্, তবে পৃথিবীতে তােকে আর কেহ বিশ্বাস করিবে না।” বলিতে বলিতে কাঁদিয়া উঠিল। সুরমা সেই অন্ধকারে বসিয়া কতবার মনে মনে “মা” “মা” বলিয়া ডাকিল, কিন্তু মনে হইল যেন মা তাহার কথা শুনিতে পাইলেন না! মনে মনে তাঁহার পায়ে যে পুস্পাঞ্জলি দিল মনে হইল যেন, তিনি তাহা লইলেন না, তাঁহার পা হইতে পড়িয়া গেল। সুরমা কাঁদিয়া কহিল “কেন মা, আমি কি করিয়াছি?” তাহার উত্তর শুনিতে পাইল না। সে সেই চারিদিকের অন্ধকারের মধ্যে দেখিতে পাইল, প্রলয়ের মুর্ত্তি নাচিতেছে! সুরমা চারিদিক শূন্যময় দেখিতে লাগিল। সে একাকী সে ঘরে আর বসিয়া থাকিতে পারিল না। বাহির হইয়া বিভার ঘরে আসিল।
বসন্তরায় কাতর স্বরে কহিলেন—“দাদা এখনাে ফিরিল না, কি হইবে?”
সুরমা দেয়ালে ঠেস দিয়া দাঁড়াইয়া কহিল, “বিধাতা যাহা করেন!”
রামচন্দ্র রায় তখন মনে মনে তাঁহার পুরাতন ভৃত্য রামমােহনের সর্ব্বনাশ করিতেছিলেন! কেন না, তাহা হইতেই এই সমস্ত বিপদ ঘটিল। তাহার যত প্রকার শাস্তি সম্ভব তাহার বিধান করিতেছিলেন। মাঝে মাঝে একবার চৈতন্য হইতেছে যে, শাস্তি দিবার বুঝি আর অবসর থাকিবে না।
উদয়াদিত্য তরবারি হস্তে অন্তঃপুর অতিক্রম করিয়া রুদ্ধদ্বারে গিয়া সবলে পদাঘাত করিলেন—কহিলেন, “কে আছিস্?”
বাহির হইতে উত্তর আসিল “আজ্ঞা, আমি সীতারাম!”
যুবরাজ দৃঢ় স্বরে কহিলেন—“শীঘ্র দ্বার খােল।”
সে অবিলম্বে দ্বার খুলিয়া দিল। উদয়াদিত্য চলিয়া যাইবার উপক্রম