ফুরিয়েছে জীবনের ছুটি;
ফিরিয়ে নে তাের নয়ন দুটি,
নাম ধরে আর ডাকিস্নে ভাই,
যেতে হবে ত্বরা করে!”
“ঐ দেখ, ঐ দেখ, বিভার রকম দেখ! দেখ্ বিভা, তুই যদি অমন করিয়া কাঁদবি ত—” বলিতে বলিতে বসন্তরায়ের আর কথা বাহির হইল না। তিনি বিভাকে শাসন করিতে গিয়া নিজেকে আর সামলাইতে পারিলেন না, তাড়াতাড়ি চোখের জল মুছিয়া হাসিয়া কহিলেন, “দাদা, ঐ দেখ ভাই সুরমা কাঁদিতেছে! এই বেলা ইহার প্রতিবিধান কর; নহিলে আমি সত্য সত্যই থাকিয়া যাইব; তােমার জায়গাটি দখল করিয়া বসিব। ঐ দুই হাতে পাকাচুল তােলাইব, ঐ কানের কাছে এই ভাঙা দাঁতের পাটির মধ্য হইতে ফিস্ফিস্ করিব, আর কানের অত কাছে গিয়া আর যদি কোন প্রকার অঘটন সংঘটন হয় তবে তাহার দায়ী আমি হইব না!”
বসন্তরায় দেখিলেন, কেহ কোন কথা কহিল না, তখন তিনি কাতর হইয়া তাঁহার সেতারটা তুলিয়া লইয়া ঝন্ ঝন্ করিয়া বিষম বেগে বাজাইতে সুরু করিলেন। কিন্তু বিভার চখের জল দেখিয়া তাঁহার সেতার বাজাইবার বড়ই ব্যাঘাত হইতে লাগিল, তাঁহার চোখ মাঝে মাঝে ঝাপ্সা হইয়া আসিতে লাগিল, মাঝে মাঝে বিভাকে এবং উপস্থিত সকলকে তিরস্কারচ্ছলে রাশ রাশ কথা বলিবার বাসনা হইতে লাগিল, কিন্তু আর কথা যােগাইল না, কণ্ঠ রুদ্ধ হইয়া আসিল, সেতার বন্ধ করিয়া নামাইয়া রাখিতে হইল। অবশেষে বিদায়ের সময় আসিল।
উদয়াদিত্যকে দীর্ঘকাল আলিঙ্গন করিয়া শেষ কথা এই বলিয়া গেলেন, “এই সেতার রাখিয়া গেলাম দাদা, আর সেতার বাজাইব না। সুরমা ভাই সুখে থাক; বিভা—” কথা শেষ হইল না, অশ্রু মুছিয়া পাল্কীতে উঠিলেন।