পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ব্যঙ্গকৌতুক

 পিঁপ্‌ড়ে সমাজ সম্বন্ধে আমার বিস্তর অনুমানলব্ধ অভিজ্ঞতা আছে। ডেঞেদের সন্তানস্নেহ আছে অতএব পিঁপ্‌ড়েদের তা কখনই থাক্‌তে পারে না, কারণ তারা পিঁপ্‌ড়ে, কেবলমাত্র পিঁপ্‌ড়ে, পিঁপ্‌ড়ে ব্যতীত আর কিছুই নয়। শােনা যায়, পিঁপড়েরা মাটিতে বাসা বানাতে পারে―স্পষ্টই বােধ হ’চ্চে তা’রা ডেঞে জাতির কাছে থেকে স্থপতি বিদ্যা শিক্ষা ক’রেচে—কারণ তারা পিঁপ্‌ড়ে—সামান্য পিঁপ্‌ড়ে, সংস্কৃত ভাষায় যাকে বলে পিপীলিকা।

 পিঁপ্‌ড়েদের দেখে আমার অত্যন্ত মায়া হয়—ওদের উপকার করবার প্রবৃত্তি আমার অত্যন্ত বলবর্তী হ’য়ে উঠে। এমন কি আমার ইচ্ছা করে, সভ্য ডেঞেসমাজ কিছুদিনের জন্য ছেড়ে, দলকে-দল ডেঞে ভ্রাতৃবৃন্দকে নিয়ে পিঁপ্‌ড়েদের বাসার মধ্যে বাসস্থাপন করি এবং পিঁপ্‌ড়েসংস্কার কার্য্যে ব্রতী হই—এতদূর পর্যন্ত ত্যাগস্বীকার কর্ত্তে আমি প্রস্তুত আছি। তাদের শর্করকণা গলাধঃকরণ ক’রে এবং তাদের বিবরের মধ্যে হাত পা ছড়িয়ে কোনােক্রমে আমরা জীবনযাপন ক’র্‌তে রাজি আছি, যদি এতেও তা’রা কিছুমাত্র উন্নত হয়!

 তা’রা উন্নতি চায় না—তা’রা নিজের শর্করা নিজে খেতে এবং নিজের বিবরে নিজে বাস ক’র্‌তে চায়—তা’র কারণ, তা’রা পিঁপ্‌ড়ে, নিতান্তই পিঁপড়ে! কিন্তু আমরা যখন ডেঞে, তখন আমরা তাদের উন্নতি দেবােই, এবং তাদের শর্করা আমরা খাবো ও তাদের বিবরে আমরা বাস ক’র্‌বো! আমরা এবং আমাদের ভাইপাে, ভাগ্‌নে, ভাইঝি ও শ্যালকবৃন্দ।

 যদি জিজ্ঞাসা কর তাদের শর্করা আমরা কেন খাবো এবং তাদের বিবরে কেন বাস ক’র্‌বো। তবে তা’র প্রধান কারণ এই দেখাতে পারি যে তা’রা পিঁপড়ে এবং আমরা ডেঞে। দ্বিতীয়, আমরা নিঃস্বার্থ ভাবে পিঁপড়েদের উন্নতিসাধনে ব্রতী হ’য়েচি, অতএব আমরা তাদের শর্করা