পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রাচীন দেবতার নূতন বিপদ
৩৩

হইয়া এক প্রকার গায়ের জোরে আমাদের সে কাজ কাড়িয়া লইয়াছে। অতএব উক্ত ডিপার্ট্‌মেণ্ট হইতে আমাদের নাম কাটিয়া আজ হইতে সেই প্রবল শক্তি নূতন দেবতার নাম বাহাল হৌক্‌!”

 সর্ব্বসম্মতিক্রমে তাহাই স্থির হইল।

 তখন যম উঠিয়া কহিলেন,“এতোকাল আমিই নরলোকের সর্ব্বাপেক্ষা ভয়ের কারণ ছিলাম, কিন্তু এখন সেখানে আমা অপেক্ষা ভয় করে এমন সকল প্রাণীর উদ্ভব হইয়াছে। অতএব, পুলিস্ দারোগাকে আমার যমদণ্ড ছাড়িয়া দিয়া আমি অন্য হইতে কাজে ইস্তফা দিতে চাই।”

 অধিকাংশ দেবতার মতে যমরাজের প্রস্তাব নিতান্ত অসঙ্গত না হইলেও ব্যাপারটা গুরুতর বিধায় আগামী মীটিংয়ে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আপাতত স্থগিত রহিল।

 কার্তিকেয় উঠিয়া কহিলেন, “গুরুদেবের বক্তৃতার পর আমাকে আর অধিক কিছু বলিতে হইবে না। আমি দেবসেনাপতি। কিন্তু দেবগণকে রক্ষা করা আমার অসাধ্য হইয়া উঠিয়াছে, অতএব, হয় আমার পোষ্ট্ এবলিশ্ করিয়া এষ্টাব্লিশ্‌মেণ্ট্‌ কমানো হোক্, নয় কোনো সাময়িক পত্রের সম্পাদকের উপর স্বর্গরক্ষাকার্য্যের ভার দেওয়া হৌক্। এমন কি, আমার বহুকালের ময়ুরটিও আমি বিনামূল্যে তাঁহাদিগকে ছাড়িয়া দিতে প্রস্তুত আছি। ইহার পেখম ছড়াইলে তাঁহাদের অনেকটা বিজ্ঞাপনের কাজ হইবে।”

 দেবতাদের সম্মতিক্রমে সেনাপতির পোষ্ট্ এবলিশ্ হইল, এখন হইতে ময়ুরের খোরাকী তাঁহার নিজের তহবিল হইতে পড়িবে।

 বরুণ উঠিয়া অশ্রুজল বর্ষণ করিয়া কহিলেন—“নরলোকে আমার কি আর কোনো প্রয়োজন আছে? খোলাভঁটিবাহিনী বারুণী আমাকে উচ্ছেদ করিবার সঙ্কল্প করিয়াছে। এই বেলা মানে মানে সময় থাকিতে সরিতে ইচ্ছা করি।”