পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪
ব্যঙ্গকৌতুক

 দেবতাগণ বহুল চিন্তা ও তর্কের পর ষ্ট্যাটিষ্টিক্‌স্ দেখিয়া অবশেষে স্থির করিলেন, এখনো সময় হয় নাই। কারণ, এখনো সময়ে সময়ে বারুণীর প্রাখর্য্য নিবারণের জন্য দুর্ব্বল মানব বরুণের সহায়তা প্রার্থনা করিয়া থাকে।

 তখন ধর্ম্ম বলিলেন, “লোকাচারকে আমার অধীনস্থ কর্ম্মচারী বলিয়া জানিতাম, কিন্তু সে তো আমার সঙ্গে পরামর্শমাত্র না করিয়া আপন ইচ্ছামত যাহা-তাহা করে, তবে সেই ছোঁড়াটাকেই সিংহাসন ছাড়িয়া দিলাম।” বায়ু কহিলেন, “পৃথিবীতে এখন ঊনপঞ্চাশ দিকে ঊনপঞ্চাশ বায়ু বহিতেছে, চাই কি, এখন আমি অবসর লইতে পারি!” আদিত্য কহিলেন, “মানবসমাজে বিস্তর খদ্যোত উঠিয়াছে, তাহারা মনে করিতেছে, সূর্য্য না হইলেও আমরা একলা কাজ চালাইতে পারি, আলোকিত করিবার ভার তাহাদের উপর দিয়া আমি অস্তাচলে বিশ্রাম করিতে ইচ্ছা করি।” ভগবান চন্দ্রমা শুক্লপ্রতিপদের কৃশমূর্ত্তি ধারণ করিয়া কহিলেন, “নরলোকে কবিরা তাঁহাদের প্রেয়সীর পদনখরকে আমা অপেক্ষা দশগুণ প্রাধান্য দিয়া থাকেন, অতএব, যে পর্য্যন্ত কবিরমণীমহলে পাদুকার সম্পূর্ণ প্রচলন না হয়, সে পর্য্যন্ত আমি অন্তঃপুরে যাপন করিতে চাই। এমন কি, ভোলানাথ শিব অর্দ্ধনিমীলিত নেত্রে কহিলেন, “আমা অপেক্ষা বেশি গাঁজা টানে পৃথিবীতে এমন লোকের তো অভাব নাই, সেই সমস্ত সংস্কারকদিগের উপর আমার প্রলয়কার্য্যের ভার দিয়া আমি অনায়াসে নিশ্চিন্ত থাকিতে পারি। এমন কি, আমি নিশ্চয় জানি, আমার ভূতগুলারও কোনো প্রয়োজন হইবে না!”

 সর্ব্বশেষে যখন শুভ্রবসনা অমলকমলাসনা সরস্বতী উঠিয়া বীণানিন্দিত মধুরস্বরে দেবসমাজে তাঁহার নিবেদন আরম্ভ করিলেন, তখন দেবগণ দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিলেন এবং মহেন্দ্রের সহস্র চক্ষুর পল্লব সিক্ত হইয়া উঠিল।