পাতা:ব্যথার দান – কাজী নজরুল ইসলাম.pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ব্যথার দান

  দু’-এক দিন ভাবি হয় ত মায়ের এই অন্ধ স্নেহটাই আমাকে আমার এই বড়-মা দেশটাকে চিন্‌তে দেয় নি। বেহেশ্‌ত্‌ হ’তে আবদেরে ছেলের কান্না যা শুনতে পাচ্ছেন কি না জানি নে, কিন্তু এ আমি নিশ্চয় ক’রে বলতে পারি, যে, মা’কে হারিয়েছি বলেই— মাতৃ-স্নেহের ঐ মস্ত শিকলটা আপনা হ’তে ছিঁড়ে গিয়েছে বলেই আজ মা’র চেয়েও মহীয়সী আমার জন্মভূমিকে চিনতে পেরেছি। তবে এও আমাকে স্বীকার করতে হবে,— মা’কে আগে আমার প্রাণ-ভরা শ্রদ্ধা-ভক্তি-ভালবাসা অন্তরের অন্তর থেকে দিয়েই আজ মা’র চেয়েও বড় জন্মভূমিকে ভালবাসতে শিখেছি। মা’কে আমি ছোট করচি নে। ধরতে গেলে মা-ই বড়। ভালবাসতে শিখিয়েছেন ত মা। আমার প্রাণে স্নেহের সুরধুনী বইয়েছেন ত মা। আমাকে কাজে-অকাজে এমন ক’রে সাড়া দিতে শিখিয়েছেন যে মা। মা পথ দেখিয়েছেন, আর আমি চলেছি সেই পথ ধ’রে। লোকে ভাব্‌ছে কি খামখেয়ালী পাগল আমি! কি কাঁটা-ভরা ধ্বংসের পথে চলেছি আমি। কিন্তু আমার চলার খবর মা জানতেন, আজ সে-কথা শুধু আমি জানি।

 আমায় লোকে ঘৃণা করছে? আহা, আমি ঐ ত চাই। তবে একটা দিন আসবেই যে দিন লোকে আমার সঠিক খবর জানতে পেরে দু’-ফোটা সমবেদনার অশ্রু ফেল্‌বেই ফেল্‌বে। কিন্তু আমি হয় ত তা আর দেখতে পাব না। আর তা দেখে