পাতা:ব্রজবিলাস - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬
প্রথম পরিশিষ্ট

সন্দিগ্ধ মনে ফিরিয়া যাইতেছেন; এমন সময়ে, পথিমধ্যে, স্মার্ত্তের সহিত সাক্ষাৎ হইলে, জিজ্ঞাসিলেন, পুতিব না পোড়াইব। তিনি পোড়াইতে বলিলেন। তখন সে ব্যক্তি কহিলেন, তবে বড় মহাশয় পুতিতে বলিলেন, কেন। স্মার্ত্ত, জ্যেষ্ঠের মান রক্ষার জন্য, কহিলেন, তিনি পরিহাস করিয়াছেন। অনন্তর তিনি, বাটীতে গিয়া, জ্যেষ্ঠকে কহিলেন, কি বুঝিয়া আপনি এমন ব্যবস্থা দিলেন; পোড়াইবার স্থলে পুতিতে বলা, অতি অন্যায় হইয়াছে। নৈয়ায়িক কহিলেন, আমি অনেক বিবেচনা করিয়াই, পুতিতে বলিয়াছি। পুতিয়া রাখিলে, যদি পোড়াইবার দরকার হয়, ভুলিয়া পোড়াইতে পারিবেক; কিন্তু, যদি পোড়াইতে বলিতাম, তখন পোড়াইয়া ফেলিলে, যদি পুতিবার দরকার হইত, তখন কোথায় পাইত।

 যেমন পোড়াইবার দরকার হইলে, তুলিয়া পোড়াইতে পারিবেক, এই বিবেচনা করিয়া, নৈয়ায়িক পুতিবার ব্যবস্থা দিয়াছিলেন; সেইরূপ, কবিরত্ন বলা আবশ্যক হইলে, প স্থানে ব করিলেই চলিবেক, এই বিবেচনায়, উত্তর কালের পথ পরিষ্কার রাখিয়া, আমি কপিরত্ন উপাধিই সাব্যস্ত করিলাম; পরে যদি প্রমাণ প্রয়োগ দ্বারা প্রতিপন্ন হয়, খুড় মহাশয় কবিরত্ন উপাধি পাইয়াছেন; তখন, পুর্ব্বোক্ত প্রণালীতে, প স্থানে ব করিলেই, সর্বাংশে নিখিরকিচ হইবেক।

 কপিরত্ন উপাধি সাব্যস্ত রাখিবার জন্য, যে প্রবল যুক্তি ও উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত দেখাইলাম, তাহা অকাট্য; কার বাপের সাধ্য, তাহাতে দন্তস্ফুট করে। এমন কি, “নবদ্বীপচন্দ্র, পণ্ডিতগণ্য, সুপ্রসিদ্ধ বাগ্মী,” নৈয়ায়িক পালের গোদা, শ্রীযুত ভুবনমোহন বিদ্যারত্ন খুড় মহাশয়, সাহস করিয়া, ভাহার প্রতিবাদ করিতে অগ্রসর হইতে পারিবেন না।

 কিঞ্চ, শাস্ত্রকারেরাও ব্যবস্থা করিয়া রাখিয়াছেন,

“প্রথমোপস্থিতপরিত্যাগে প্রমাণাভাবঃ”।

যাহা প্রথম উপস্থিত, তাহার পরিত্যাগ অপ্রামাণিক।

বর্ণমালা পাঠ করিতে আরম্ভ করিতে, প প্রথম উপস্থিত হয়, তৎপরে ব; এমন স্থলে, প পরিত্যাগ করিয়া ব ধরিতে গেলে, অর্থাৎ কপিরত্ন না বলিয়া কবিরত্ন বলিলে, উপরি দর্শিত প্রামাণিক ব্যবস্থার অপ্রামাণ্য ঘটে।