পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আসলে একটি মহৎ আন্দোলনের সমতুল্য। একটি সমগ্র জাতির সাংস্কৃতিক ও সামাজিক আন্দোলনের তরঙ্গবেগে ইহার উদ্ভব। অন্য পক্ষে, জাতির পুনরুজ্জীবনের সাধনায় বহু বার ইহা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করিয়াছে। আদিযুগের শ্রেষ্ঠ বিশ্বকোষ-সংকলক ছিলেন বারো (১১৬-২৭ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ)। তিনি জাতিতে রোমক। গ্রীসের সাংস্কৃতিক দাসত্বের উর্ধ্বে ওঠার যে প্রবল আকাক্ষা রোমক জাতির চৈতন্যকে অধিকার করিয়াছিল, তাহারই প্রবর্তনায় তাহারা গ্রীক সংস্কৃতি অধিগত ও আত্তীকৃত করিতে থাকে। বিশ্বকোষ প্রণয়নে বারবোর প্রচেষ্টা সেই প্রবর্তনারই পরিণাম। পরবর্তীকালে ইওরোপীয় রেনেসাঁস আন্দোলনের যুগেও ইহার বহু উদাহরণ মিলিবে। মাতৃভাষায় কোষগ্রন্থ প্রণয়নের সূত্রপাত এই যুগেই। প্রথম ইংরেজ মুদ্রাকর উইলিয়াম ক্যাক্সটনের (১৪২২-৯১ খ্রী) নাম ইংল্যাণ্ডের রেনোসের ইতিহাসে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। তিনিই আবার ইংরেজী ভাষায় বিশ্বকোষ (‘মিরর অফ দি ওয়ার্ল ড’, ১৪৮১ খ্রী) সংকলনের কাজে পথিকৃৎ।

 বিশ্বকোষ যে কি প্রবল সাংস্কৃতিক ও সামাজিক আন্দোলন সৃষ্টি করিতে পারে, ফরাসী বিশ্বকোষ ‘আঁসিক্লোপেদি’ (১৭৫১-৭২ খ্র) তাহার প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। সামন্ততন্ত্র, যাজকসংঘ, স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র এবং সমগ্রভাবে মধ্যযুগীয় ধ্যানধারণার বিরুদ্ধে এত বৃহৎ, এত সংগঠিত এবং এত স্পর্ধিত আঘাত ইতিপূর্বে হানা হয় নাই। ফলে কেবল মধ্যযুগীয় ভাবাদর্শেরই নহে, পুরাতন সমাজব্যবস্থারও ভিত্তিমূল কঁপিয়া ওঠে। ষে ফরাসী বিপ্লব মানব-ইতিহাসে যুগান্তর প্রবর্তন করে, তাহা অনেকাংশে ফরাসী বিশ্বকোষ আন্দোলনের দান।

 কেবল নূতন ভাবাদর্শের জোয়ার আনয়নের দিক দিয়াই নহে, নিছক সংগঠনের দিক হইতে বিচার করিলেও মনে হয়, ফরাসী বিশ্বকোষ রীতিমত আন্দোলনের রূপ পরিগ্রহ করিয়াছিল। পূর্বতন কোষগ্রন্থগুলি ছিল প্রধানতঃ ব্যক্তিবিশেষের একক প্রচেষ্টার ফল। ফরাসী বিশ্বকোষেই প্রথম বহু লেখকের সংঘবদ্ধ ও সমবেত সাধনা যুক্ত হইল। যে লেখকগোষ্ঠীকে দিদেবর ও দালাবেয়র প্রথমে জড়ো করিয়াছিলেন, তন্মধ্যে রুশশা ও অবাক (Holbach) ব্যতীত আর কেহই প্রখ্যাত ছিলেন না। পরে ‘আসিলোপেদি’র বিরুদ্ধে রাজরোষ ও যাজকসংঘের আক্রোশ যত তীব্র হইতে লাগিল, ফরাসী চিন্তাজগতের দিকপালগণ তত উৎসাহের সহিত উহার লেখকরূপে যোগ দিতে লাগিলেন। চতুর্থ খণ্ডে আসিলেন তুর্গো, দুক্লো, বর্দো, বুলাজে; পঞ্চম খণ্ডে ভোলতেয়ার, মারমেতেল, ফারুবোনে, দেলেয়ের; ষষ্ঠ খণ্ডে যোগ দিলেন দ্য ব্রস, সঁ-লাবেয়র, মোবুলে, নেকার, কেনে। উক্ত চিন্তানায়কগণ লোকমানসে একই আন্দোলনভুক্ত লেখকরূপে এতই চিহ্নিত হইয়া গিয়াছিলেন যে যৌথভাবে তাহারা এনসাইক্লোপিডিস্ট’ বা ‘বিশ্বকোষপন্থী বলিয়া অভিহিত হইতে থাকেন।

 বিশ্ববিদ্যা সংকলনের কর্মোদ্যোগ ক্রমে কি বিরাট প্রতিষ্ঠানে পরিণত হইতে পারে, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা তাহার দৃষ্টান্তস্থল। ১৭৬৮-৭১ খ্রীষ্টাকে ৩ খণ্ডে ইহার প্রথম প্রকাশ। তখন উহার মোট শব্দসংখ্যা ছিল ৩০০০০ ০০। বর্তমানে উহা ২৪ খণ্ডের এবং ৩৮০ ০০ ০০০ শব্দ সংবলিত কোষগ্রন্থে রূপান্তরিত হইয়াছে। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের ৮২০০-এরও অধিক বিশেষজ্ঞের সংঘবদ্ধ সহযোগিতা ব্রিটানিকার সাফল্যের মূলে। ১৯২৯ খ্রীষ্টাব্দে একটি স্থায়ী সম্পাদকীয় দপ্তর প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। ঐ দপ্তরে পৃথিবীর সকল প্রান্ত হইতে জ্ঞানবিজ্ঞানের নূতন নূতন তথ্য সংগৃহীত হয়। সেই সকল নূতন তথ্যের আলোকে ব্রিটানিকার প্রবন্ধ গুলি ১৯৩৩ খ্রীষ্টাব্দ হইতে ক্রমাগত পরিমার্জিত, পরিবর্ধিত বা পরিবর্জিত হইতেছে। ইহাকেই বলে ‘কনটিয়াস এডিটিং বা বিরতিহীন সম্পাদনা। নূতন সংস্করণ প্রকাশ না

[ ৮ ]