পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

অবধী সাহিত্য লিখিত, বিষয়— লােকভাষা অবধীর মাধ্যমে সংস্কৃত শিক্ষা। ইহাতে বহু প্রাচীন অবধী শব্দ ও বাক্য আছে। জৌনপুরের সুলতানদের সমৃদ্ধিকালে অধীর পরিপুষ্টি শুরু হয় এবং ঘােড়শ শতাব্দীতে এই ভাষায় অন্ততঃ দুইখানি উৎকৃষ্ট কাব্য রচিত হয়। একটি মালিক মহম্মদ জায়সী-র ‘পদুমাবৎ' (রচনাকাল আনুমানিক ১৫৪১ খ্রী)। এবং তুলসীদাসের ‘রামচরিতমানস' (রচনাকাল আনুমানিক ১৫৬৫ খ্রী)। হিন্দু ও মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের লেখকের রচনাতে সমৃদ্ধ অবধী সাহিত্য পুরাতন নব্য ভারতীয় আর্যসাহিত্যে বিশিষ্ট স্থান অধিকার করিয়াছিল। সুকুমার সেন অবধী সাহিত্য মধ্যযুগের হিন্দী সাহিত্যে ব্রজভাষার পরেই অবধীর স্থান। খড়ীবােলী ব্যবহারের পূর্ব পর্যন্ত অবধী ভাষার যাবতীয় রচনা হিন্দী সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত বলিয়াই পরিগণিত হয়। ইহার সর্বপ্রথম কাব্যগ্রন্থ কবি জগনিক বিরচিত ‘আলহা-খণ্ড। অলহা-উদলের বীরত্বকাহিনীপূর্ণ এই গ্রন্থ দ্বাদশ শতাব্দীর রচনা বলিয়া মনে করা হইলেও উনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত মৌখিক পরম্পরায় চলিয়া আসার ফলে ইহাতে প্রচুর ভাষাগত পরিবর্তন ঘটিয়াছে। ১৮৩৫ খ্রীষ্টাব্দে স্যার চার্লস্ ইলিয়ট ফররুখাবাদ ( ফরাক্কাবাদ) জিলার বিভিন্ন চারণ কবির মুখ হইতে আহা খণ্ডের কাহিনী সংগ্রহ করিয়া প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। তুলসীদাসের রামচরিতমানসের পরেই অবধ প্রদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় গ্রন্থ ‘আলহা-খণ্ড। আলহা খণ্ডের কথা ছাড়িয়া দিলে দামােদর পণ্ডিত বিরচিত “উক্তিব্যক্তি প্রকরণ' নামক গ্রন্থখানিকে অবধী সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন বলিয়া ধরা যাইতে পারে। আনুমানিক ১১৫০ খ্রীষ্টাব্দে লিখিত এই গ্রন্থখানির মুখ্য উদ্দেশ্য হইল অবধী ভাষার মধ্য দিয়া সংস্কৃতের শিক্ষাদান। ইহাকে ঠিক সাহিত্যগ্রন্থ বলা যায় না। উত্তর ভারতের অন্যতম সাহিত্যিক ভাষারূপে অবধীর বিকাশ হয় চতুর্দশ শতাব্দীতে।

অবধী সাহিত্যের একটি উল্লেখযােগ্য শাখা সুফীভাবধারায় অনুপ্রাণিত এবং প্রধানতঃ মুসলমান কবিদের রচিত প্রেমাখ্যান কাব্য। এই শাখার প্রথম গ্রন্থ ‘চায়ন’ ( চাবত ) বা লৌরচন্দা’ নামক একখানি প্রেমকাব্য। ১৩৭০ খ্রীষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে কবি মুল্লা দাউদ এই গ্রন্থখানি রচনা করেন। লােরিক ও চন্দার প্রণয়কাহিনী এই কাব্যের বিষয়বস্তু। নায়ক এক জায়গায় বলিতেছে : ‘আমি জাতিতে আহীর, আমার নাম লােরিকা।

________________

অবধী সাহিত্য শহদেব ভরের কন্যা চনার বিবাহ হয় ভবনের সঙ্গে। আমি ভবনের গৃহ হইতে চাকে লইয়া আসিয়া তাহাকে আমার স্ত্রী করি। সে পতিগৃহ ত্যাগ করিয়া আমার সঙ্গিনী হইল। এই গ্রন্থ এখনও পুরাপুরি লােকসমক্ষে প্রকাশিত হয় নাই এবং পরবর্তী প্রায় ১৩০ বৎসরের মধ্যে ইহার অনুসরণে কোনও কাব্য রচিত হইয়াছিল কিনা জানা যায় না। সেইজন্য কেহ কেহ ষােড়শ শতাব্দীকেই প্রেমকাব্যের আবির্ভাবকাল বলিয়া মত প্রকাশ করিয়াছেন। ষােড়শ শতকের গােড়াতেই কুতবন রচিত ‘মৃগাবতী’-তে ইহার সুচনা এবং ঐ শতকের মধ্যভাগে মালিক মহম্মদ জায়সী রচিত ‘পদুমাবৎ' গ্রন্থে ইহার পূর্ণ বিকাশ। মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের উপর এই ধারার প্রভাব লক্ষণীয়। হিন্দী সাহিত্যের অমর কবি তুলসীদাস ষােড়শ শতকের চতুর্থ পাদে অবধী ভাষায় তাহার সুপ্রসিদ্ধ ‘রামচরিতমানস' রচনা করেন। এই প্রসঙ্গে স্মরণীয়, বিংশ শতাব্দীর আগে অবধী ভাষায় কোনও কৃষ্ণচরিত কাব্য রচিত হয় নাই। কৃষ্ণলীলা যেন ব্রজভাষার জন্যই সুরক্ষিত ছিল। সন্ত কবিদের মধ্যে অবধী ভাষায় প্রথম সাহিত্য রচনা করেন সপ্তদশ শতকের মলুকদাস। অতঃপর মথুরাদাস, ধরণীদাস, চরণদাস প্রমুখ কবিদের মধ্য দিয়া এই ধারা বেশ কিছুকাল অব্যাহত ছিল। উনিশ শতকে ভারতে হরিশ্চন্দ্রের আবির্ভাব (১৮৫০১৮৮৫ খ্রী) এবং মহাবীরপ্রসাদ দ্বিবেদীর সম্পাদনায় সুপ্রসিদ্ধ হিন্দী মাসিকপত্র সরস্বতী’ প্রকাশের ( ১৯০০ | ফ্রী ) ফলে উত্তর ভারতে যে প্রবল হিন্দী আন্দোলন ( যথার্থভাবে বলিতে গেলে খড়ীবােলী-আন্দোলন ) গড়িয়া | উঠিল, তাহার সম্মুখে অবধী সাহিত্য আর তাহার পূর্ব| গৌরবে টিকিয়া থাকিতে পারিল না। অবধীভাষী কবিগণও খড়ীবােলী আয়ত্ত করিয়া হিন্দী সাহিত্যের | বৃহত্তর ক্ষেত্রে যােগদান করিলেন। ভারতের সহযােগী | প্রতাপনারায়ণ মিশ্র ইহার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। প্রতাপনারায়ণ তাঁহার নিজস্ব ভাষা অবধীতে কিছু কিছু রচনা করিলেও খড়ীবােলীই ছিল তাঁহার মুখ্য অবলম্বন। | বিংশ শতকের তৃতীয় দশক পর্যন্ত এইরূপ চলিল । | এই সময়ে অবধীর চর্চা থাকিলেও তাহা খুবই সামান্য। | খড়ীবােলীর আওতার মধ্যে থাকিয়া অবধী সাহিত্যে | যাহারা নূতন শক্তি ও প্রেরণা সঞ্চার করিলেন তাহারা

সকলেই বিংশ শতাব্দীর কবি। স্বর্গীয় বলভদ্র দীক্ষিত | (ছদ্মনাম ‘পঢ়ীস’) ইহাদের অগ্রগণ্য। পঢ়ীসের পদাঙ্ক | অনুসরণ করিয়া আসিলেন বংশীধর শুরু, চন্দ্রভূষণ ত্রিবেদী,
৭৮