পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

অবধূত আধুনিক অবধীতে নূতন নূতন সংযােজন হইলেও অবধী সাহিত্যের পাঠকের মনে শেষ পর্যন্ত যে ছাপ থাকিয়া যায় তাহা চন্দ্রভূষণের প্রগতিশীল কবিতা নয়, বলভদ্রের ব্য-কবিতা নয়, দ্বারকাপ্রসাদের কৃষ্ণকাব্যও নয়, তাহা সেই সুচিরাগত পল্লীসংগীত। হিন্দী সাহিত্য ভ্র। দ্র ত্রিলােকীনারায়ণ দীক্ষিত, অবধী ঔর উসকা সাহিত্য, দিল্লী, ১৯৫৪; ইন্দুপ্রকাশ পাণ্ডেয়, অবধী লােকগীত ঔর পরম্পরা, এলাহাবাদ, ১৯৫৭। বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য অবধূত বিচিত্র আচারবিশিষ্ট সাধক। যিনি একই সঙ্গে ত্যাগ ও ভােগের অনুসরণ করেন অথচ কোনওটিতেই আসক্ত হন না। তিনি অবধূত। সর্বপ্রকার প্রকৃতিবিকারকে উপেক্ষা করেন (অবধুনােতি) বলিয়া নাম অবধূত ( কাশীর সরস্বতী ভবন প্রকাশিত গােক্ষ সিদ্ধান্ত সংগ্রহ, পৃষ্ঠা ১)। অবধূত নানাপ্রকার- শৈবাবধত, কৌলাবধূত, গৃহস্থ, দিগম্বর, পরমহংস। গৃহস্থ সবস্ত্র সস্ত্রীক ভাবুক সাধক শুচি গুরুভক্তিরত জ্ঞানী নিষ্কাম শিবার্চনপরায়ণ। দিগম্বাবধৃত সর্বভােগী সর্বজাতির ধর্ম-কর্মে রত। গৃহস্থাবধূতের মদ্যগ্রহণ ও অগম্যাগমন নিষিদ্ধ, দিগম্বরের পক্ষে বিহিত। পরমহংস অপরিগ্রহ নিষেধবিধিরহিত আত্মভাবসন্তুষ্ট শােক-মােহশূন্য নিঃসঙ্গ কর্মত্যাগী। দ্র হরকুমার ঠাকুর, হরতত্ত্বদীধিতি, পঞ্চদশ কলা, কলিকাতা, ১৮৮১; শব্দকল্পদ্রুম। চিন্তাহরণ চক্রবর্তী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৭১-১৯৫১ খ্র) দ্বারকানাথ ঠাকুরের তৃতীয় পুত্র গিরীন্দ্রনাথের কনিষ্ঠপুত্র গুণেন্দ্রনাথের কনিষ্ঠ পুত্র। তাঁহার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা গগনেন্দ্রনাথ ও দ্বিতীয় ভ্রাতা সমরেন্দ্রনাথ। অবনীন্দ্রনাথের জীবন বাহিরের ঘাত-প্রতিঘাত অপেক্ষা বিশেষ কতকগুলি উপলব্ধি ও বিচিত্র রকমের ইন্দ্রিয়গত উদ্দীপনার দ্বারা অনেক পরিমাণে প্রভাবান্বিত বা নিয়ন্ত্রিত। | ‘আপন কথা’ ‘জোড়াসাঁকোর ধারে’ ‘ঘরােয়া এই তিনখানি পুস্তকের সাহায্যে শিল্পী অবনীন্দ্রনাথকে অতি ঘনিষ্ঠভাবে জানিতে পারা যায়। বিশেষভাবে আপন কথা’ বইখানিতে অবনীন্দ্রনাথ যেমনভাবে তাহার শৈশবের নানা উপলব্ধি চিত্রিত করিয়াছেন তাহার তুলনা বিরল।

রবীন্দ্রনাথের ‘জীবনস্মৃতি’ ও অবনীন্দ্রনাথের ‘আপন

________________

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর কথা’ বই দুইখানির সাহায্যে তৎকালীন জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের পরিবেশ সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা করা চলে। বাহিরের জগৎ হইতে অনেক পরিমাণে বিচ্ছিন্ন, দাসদাসী পরিবৃত শৈশবজীবন অবনীন্দ্রনাথের মনকে যে কল্পনাপ্রবণ অন্তমুখী করিয়া তুলিয়াছিল এ ব্যাপারে আশ্চর্য হইবার কোনও কারণ নাই। অবনীন্দ্রনাথের শৈশবের স্মৃতি প্রথমত; আলাে-ছায়ার জগৎকে কেন্দ্র করিয়া। প্রদীপের আলােয় পদ্মদাসী, চাদের আলো, আলাে অন্ধকারে ঢাকা ঘর বারান্দা, বিচিত্র আকারের আসবাবপত্র, পিতার লাল রঙের চটি জুতা, কর্মতৎপর দাস-দাসীর বিচিত্র গতিভঙ্গী এইসবের স্মৃতি অবনীন্দ্রনাথের শিল্পানুভূতির আদিম উপাদান। বয়ােবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অবনীন্দ্রনাথ দেখিয়াছেন পিতা গুণেন্দ্রনাথের শৌখিনতা ও বিলাসিতা। সেই সঙ্গে তাহার | স্মৃতিকে চিহ্নিত করিয়া রাখিয়াছিল পিসীর ঘরের দেওয়ালে টাঙানাে নানারকম পট। শৈশব ও কৈশােরের যে সকল ঘটনা তাহার মনে ছাপ ফেলিয়াছিল সেই সকল ঘটনা বিচিত্র রূপে রঙে সার্থক হইয়া প্রকাশ পাইয়াছিল তাহার উত্তরকালীন রচনাতে। অবনীন্দ্রনাথ একান্তভাবেই গৃহমুখী শিল্পী। যদিও মুশৌরি দার্জিলিং ডালহৌসি ভ্রমণ বা বাংলার সাহাজাদপুর | প্রভৃতি নানা স্থান দর্শন তাহার শিল্পকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করিয়াছে, তাহা সত্ত্বেও এই কথা স্বীকার করিতে হয় অবনীন্দ্রনাথ সকল সময়ই এই সকল অভিজ্ঞতাকে পারিবারিক পরিবেশের মধ্যেই নৃতন করিয়া উপভােগ করিয়াছেন। সংক্ষেপে, বাহিরের অভিজ্ঞতা পরিচিত পরিবেশে যে পর্যন্ত না অবনীন্দ্রনাথ অনুভব করিয়াছেন সেই পর্যন্ত কোনও অভিজ্ঞতাই শিল্পের উপাদান হইয়া উঠে নাই। অবনীন্দ্রনাথের শিল্পীজীবন কি ভাবে পুষ্ট ও বিকশিত হইয়াছিল সংক্ষেপে সেই বিষয়ে কিছু বলা দরকার। স্কুলকলেজ অপেক্ষা গৃহশিক্ষকের কাছেই অবনীন্দ্রনাথের প্রথমজীবনের শিক্ষা। ইংরেজী, ফরাসী, সংস্কৃত ও বাংলা ভাষা শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে অবনীন্দ্রনাথ কিছুকাল সংগীতচর্চা করিয়াছিলেন। কিন্তু চিত্রকলার প্রতি তাহার সহজাত আকর্ষণ অতি শৈশবকাল হইতেই লক্ষ্য করা যায়। পিতা গুণেন্দ্রনাথ এক সময় আর্ট স্কুলের ছাত্র ছিলেন। শৌখিন পরিবেশ ও শিল্পচর্চার আবহাওয়া অবনীন্দ্রনাথের প্রতিভার বিশেষ সহায়ক ছিল।

অবনীন্দ্রনাথের প্রথম শিক্ষক গিলার্ডি ছিলেন তৎ| কালীন আর্ট স্কুলের অন্যতম শিক্ষক। শিল্পী গিলার্জির
৮০