পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিকট অবনীন্দ্রনাথ বিশেষভাবে প্যাস্টেল ড্রয়িং, ওয়াটার কালার ড্রয়িং শিক্ষা করিয়াছিলেন। গিলার্জির কাছে শিক্ষা শেষ করিয়া অবনীন্দ্রনাথ তাঁহার দ্বিতীয় শিক্ষক পামারের কাছে লাইফ স্টাডি, অয়েল পেন্টিং ইত্যাদি শিক্ষা করেন। অবনীন্দ্রনাথ যে সময়ে রীতিমত বিলাতী পদ্ধতিতে শিল্পচর্চা করিয়াছিলেন এবং স্টডিয়াে সাজাইয়া প্রতিকৃতি শিল্পী ( portrait painter) হইবার উদ্যোগআয়ােজন করিয়াছিলেন সেই সময় দেশী ছবির একখানি অ্যালবাম তিনি উপহার পান। ঠিক একই সময় কতকগুলি আইরিশ ইলুমিনেশন (Irish illumination) তিনি উপহার পান মার্টিন ডেন নামক এক মহিলার নিকট হইতে। দেশী ও বিদেশী ছবির একটি আশ্চর্য মিল অবনীন্দ্রনাথ লক্ষ্য করেন। দেশী ছবির ঔজ্জ্বল্য, বর্ণসমাবেশ, সূক্ষ্ম কারুকার্য অবনীন্দ্রনাথের শিল্পীমনকে এমনই অভিভূত করিয়াছিল যে তিনি দেশী ছবির আদর্শে ছবি আঁকিবার প্রয়াস পান। দেশী আদর্শে অবনীন্দ্রনাথের প্রথম রচনা কৃষ্ণলীলা চিত্রাবলী। এই চিত্রাবলীর কিছু অংশ অবনীন্দ্রনাথ তঁাহার শিক্ষক পামারকে যখন দেখান তখন তাহাকে বিলাতী পদ্ধতির পরিবর্তে নিজের আবিষ্কৃত পথই অনুসরণ করিতে উপদেশ দেন। | কৃষ্ণলীল চিত্রাবলীর রচনাকালে কলিকাতা আর্ট স্কুলের তৎকালীন অধ্যক্ষ ই. বি. হ্যাভেলের সঙ্গে তাহার পরিচয় ঘটে। হ্যাভেলের চেষ্টায় অবনীন্দ্রনাথ কলিকাতা আর্ট স্কুলের সহকারী অধ্যক্ষ পদ গ্রহণ করেন (১৮৯৮ খ্রী)। ইতিপূর্বে কোনও ভারতীয় শিল্পী ঐ পদ পান নাই। হ্যাভেলের সহযােগিতায় অবনীন্দ্রনাথ ভারতীয় শিল্প ভালভাবে অনুশীলন করেন। বজ্রমুকুট, ঋতুসংহার, বুদ্ধ। ও সুজাতা ইত্যাদি চিত্রে ভারতীয় আঙ্গিক ও আদর্শ অনুসরণের চেষ্টা আমরা লক্ষ্য করি। জাপানী অঙ্কনরীতি অবনীন্দ্রনাথ আয়ত্ত করেন টাইকানের নিকট হইতে ; অপর দিকে ভারতীয় ভাবধারা অবলম্বনে টাইকান কতকগুলি চিত্র রচনা করেন। ভারত ও জাপানের শিল্পীদের মধ্যে ভাবের আদানপ্রদানের প্রথম সূচনা হয় এই ভাবে। জাপানী প্রভাবকে সম্পূর্ণ আয়ত্ত করিয়া অবনীন্দ্রনাথের শিল্পরীতি যে পথে চালিত হইয়াছিল তাহার শ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত ওমর খৈয়ামের চিত্রাবলী। ওমর খৈয়ামের চিত্ররীতিতে অবনীন্দ্রনাথ যে নূতন কতকগুলি উপাদান ভারতীয় শিল্পীদের সামনে উপস্থিত করিয়াছিলেন তাহা একান্তভাবে ভারতীয় শিল্পের পরম্পরা দ্বারা বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রিত ছিল না। শিল্পগুরুরূপে অবনীন্দ্রনাথের জীবন শুরু হয়

= ১১১

________________

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৫ খ্ৰীষ্টাব্দে। এই সময় হইতে অবনীন্দ্রনাথের জীবন অনেক পরিমাণে কর্মতৎপর হইয়া উঠে এবং ভারতীয় শিল্পের নবজন্মদাতারূপে তিনি শিক্ষিতসমাজে স্বীকৃত হন। ১৯০৭ খ্ৰীষ্টাব্দে ই. বি. হ্যাভেল, স্যর জন উড্রফ, ভগিনী নিবেদিতা প্রভৃতির উদ্যোগে ওরিয়েন্টাল আর্ট সােসাইটির পত্তন হয়। অবনীন্দ্রনাথের প্রবর্তিত শিল্পআদর্শকে জাতীয় জীবনের সঙ্গে যুক্ত করাই ছিল এই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম লক্ষ্য। হ্যাভেলের ভারত ত্যাগের কিছুকাল পরে অবনীন্দ্রনাথ | আর্ট স্কুলের চাকরি হইতে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯১১ খ্ৰীষ্টাব্দে দিল্লী দরবার উপলক্ষে কলিকাতায় | যে আয়ােজন হয় সেই উপলক্ষে অবনীন্দ্রনাথ ও তাঁহার অনুবর্তীরা মণ্ডপসজ্জার ভার প্রাপ্ত হন এবং এই সময় ইংরেজ সরকারের নিকট হইতে অবনীন্দ্রনাথ সি. আই. ই. উপাধি পান। বঙ্গভঙ্গজনিত স্বদেশী আন্দোলনের সময়ে | যে স্বাদেশিকতা ও কর্মতৎপরতার উদ্ভব হইয়াছিল তাহার প্রভাব অবনীন্দ্রনাথের শিল্পীজীবনে যৎসামান্য। তিনি | কোনদিনই লােকনেতা হইয়া উঠিতে পারেন নাই। | জোড়াসাঁকো বাড়ির দক্ষিণের বারান্দায় শিল্পী অবনীন্দ্র| নাথকে আমরা ঘনিষ্ঠভাবে পাই। অবনীন্দ্রনাথের প্রভাবে জোড়াসাঁকো বাড়ি ক্রমশঃ একটি যেন প্রতিষ্ঠানের রূপ পাইয়াছিল। তাহার অতুলনীয় শিল্পসংগ্রহ হইতেই আনন্দ কুমারস্বামী Indian Drawing পুস্তকের উপাদান সংগ্রহ করিয়াছিলেন। হিসিডা, খাৎসুতা, কম্পু-আরাই ইত্যাদি | জাপানী শিল্পীদের সঙ্গে ভারতীয় শিল্পীদের পরিচয়ের সম্ভাবনা অবনীন্দ্রনাথ-গগনেন্দ্রনাথের বাসভবনকে কেন্দ্র করিয়াই প্রথম ঘটিয়াছিল। ১৯১২ খ্ৰীষ্টাব্দে গগনেন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথের উদ্যোগে ‘বিচিত্রা সভা'র পত্তন হয়। নানা দিক দিয়া একালের জীবনযাত্রায় ভারতীয় পরিবেশসৃজনের চেষ্টা এই সূত্রে শুরু হইয়াছিল। অবনীন্দ্রনাথ ও তাহার অনুবর্তীগণের শিল্পপ্রচেষ্টার নিদর্শন ভারতের বাহিরে প্রথম প্রদর্শিত হয় লণ্ডনে, পরে প্যারিস শহরে ১৯১৩ খ্রীষ্টাব্দে। উক্ত দুইটি প্রদর্শনীর মূল্য অসাধারণ। কারণ এই প্রদর্শনীর ফলে অবনীন্দ্রনাথগােষ্ঠীর শিল্পকৃতি সম্বন্ধে ইওরোপীয় ক্রিটিকেরা যে মতামত | প্রকাশ করিয়াছিলেন তাহা আজিও বহু ক্ষেত্রে স্বীকৃত। | টোকিয়াে শহরে অবনীন্দ্রনাথ ও তাহার অনুবতীগণের

ছবির প্রদর্শনী হয় ১৯১৯ খ্রীষ্টাব্দে। এ দেশে অবনীন্দ্রনাথ বিশেষভাবে পরিচিত ও স্বীকৃত হন তাহার এই সময়ের কাজে।
৮১