পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/১১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
অভঙ্গ
অভয়দেবসুরি

অব্দের আরম্ভকাল ৬৬১ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ। ব্ৰহ্মদেশে প্রচলিত অব্দের আরম্ভকাল ৬৩৮ খ্রীষ্টাব্দ। ইহা ব্যতীত আরও অনেক অব্দ ভারতে ও অন্যান্য দেশে প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেইগুলি তত প্রসিদ্ধি লাভ করে নাই বলিয়া উল্লিখিত হইল না।

নির্মলচন্দ্র লাহিড়ী

অভঙ্গ মারাঠী সন্ত কবিদের ভক্তিগীতির নাম অভঙ্গ। ১৩শ হইতে ১৮শ শতক ব্যাপী যে ধর্মীয় অভুত্থান ( ভাগবত ধর্ম ) মহারাষ্ট্রে দেখা দিয়াছিল, ভক্তি আন্দোলনের দ্বারা তাহা বিশেষরূপে চিহ্নিত। অভঙ্গগুলিই সে সময়ে ভগবদগীত ও ভাগবতপুরাণের দর্শন সাধারণ্যে পৌছাইয়। দিবার বাহন হইয়া উঠিয়াছিল। অভঙ্গের ছন্দোরূপটি প্রকৃতপক্ষে ওবি নামক আরও পুরাতন জনপ্রিয় এক ছন্দ হইতে উদ্ভূত। অভঙ্গ ছন্দের অল্প কয়েকটি বিধি আছে। সর্বাধিক প্রচলিত রূপটিতে দেখি, ছয় অক্ষরের তিনটি চরণ ও চার অক্ষরের হ্রতর চতুর্থ চরণ। এই রূপটিতে, দ্বিতীয় তৃতীয় চরণ মিত্রাক্ষর হয়। দৈর্ঘ্য বিষয়ে অভঙ্গের কোনও নিদিষ্ট সীমা নাই । বাঁধাধরা ছন্দোরূপের হাত হইতে অব্যাহতি এবং গীতিস্পন্দকে আত্মস্থ করিয়া লইবার বিশেষ প্রবণতার ফলেই সম্ভবতঃ ইহার ব্যাপক ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা ঘটিতে পারিয়াছে। আদি মারাঠী কবি ছিলেন মুকুন্দরাজ (১২শ শতক)। তঁাহার কয়েকটি অভঙ্গ ও আমরা পাইতেছি। অতএব বুঝা যায়, মারাঠী কবিতার সঙ্গে সঙ্গেই অভঙ্গ গুলির সূত্রপাত। জ্ঞানেশ্বর, একনাথ এবং রামদাসও অভঙ্গ রচনা করিয়াছেন, তবে তাহাদের প্রসিদ্ধতর রচনাবলী ওবি ছন্দেই লিখিত। নামদেবই প্রথম রচনা প্রাচুর্যের দ্বারা অভঙ্গকে এক গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদায় উন্নীত করেন। তাঁহার অভঙ্গ শিখদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ শ্রীগুরুগ্রন্থসাহেবে অন্তর্ভুক্ত হইবার দুর্লভ সম্মান অর্জন করিয়াছে। নামদেবের পর ক্রমশঃ এক বিরাট সন্তগােষ্ঠী দেখা দিল। জীবনের নানা নিম্ন স্তর হইতে ইহারা আগত ; কুম্ভকার, কর্মকার, ক্ষৌরকার, মালী, তেলী, পরিচারিকা, অচ্ছুং- এমন কি মুসলমান কশাই এবং তন্তুবায়। ইহাদের রচিত অভঙ্গ যেন ভক্তির জগতে এক গণতন্ত্র আনিয়া দিল। ইহাদের কবিতার প্রধান গৌরব স্বতঃস্ফূতি আর প্রগাঢ় নিষ্ঠা। এইগুলির আর একটি বৈশিষ্ট্য, দার্শনিক ভাবনা প্রকাশ করিবার জন্য ইহারা আপন আপন বৃত্তিজগৎ হইতে গৃহীত শব্দাবলীর সুন্দর ব্যবহার করিয়াছেন।

অভঙ্গলেখকদের চূড়ামণি ছিলেন তুকারাম (১৭শ শতক)। কিংবদন্তী অনুযায়ী তাঁহার রচনার সংখ্যা যাহাই হউক, তাহার প্রায় ৪৫ ০ ০ অভঙ্গ এখন পাওয়া যাইতেছে। এইগুলির ভিত্তি রচনা করিয়াছিল তাহার প্রত্যক্ষ অধ্যাত্ম অভিজ্ঞতা, দার্শনিক অন্তদৃষ্টি এবং মানবপ্রকৃতি ও সমকালীন সমাজপরিবেশ বিষয়ে তাহার গভীর উপলব্ধি। এমন কি খ্ৰীষ্টীয় প্রচারকেরাও এইগুলির প্রগাঢ় গীতলতা, প্রবল অভিব্যক্তি, গ্রামীণ বাগবিধি এবং চতুর রসবােধের আকর্ষণ উপেক্ষা করিতে পারেন নাই। স্যর আলেকজাণ্ডার গ্রান্ট বলিয়াছিলেন, যাহাদের মুখে মুখে তুকারামের গান ফেরে তাহাদের তাে বুঝানাে অসম্ভব যে নৈতিক মহিমায় হিন্দুধর্ম অপেক্ষা খ্ৰীষ্টধর্ম বড়। পরবর্তী ইতিহাসে অভঙ্গরচনার ক্ষেত্রে তুকারামের শ্রেষ্ঠত। অবিসংবাদিতরূপে স্বীকৃত হইয়াছে ( অভঙ্গবাণী প্রসিদ্ধ তুক্যাচী)। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নবরত্নমালা’য় (১৯০৭ খ্রী) তুকারামের কিছু কবিতার বঙ্গানুবাদ পাইতেছি। এই সন্তদের অনেক অভঙ্গই এখন প্রবাদ হিসাবে চলিয়া গিয়াছে। মহারাষ্ট্রের জনজীবনে এইগুলিই হইল স্তোত্র, এইগুলিই শাস্ত্র। ইহা ভিন্ন প্রার্থনাসমাজ জাতীয় সংস্কারক সম্প্রদায়ের কাছেও এই গুলিই ছিল বিশ্বাসের ভাণ্ডার। আধুনিক মারাঠী কবিগণও অভঙ্গের ছন্দোরূপটিকে অল্পস্বল্প ব্যবহার করিয়াছেন।

দ্ৰ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, নবরত্নমালা, কলিকাতা, ১৯০৭ ; যােগীন্দ্রনাথ বসু, তুকারাম চরিত, কলিকাতা, ১৯০১ ; Nicol Macnicol, Psalms of Maratha Saints, Calcutta, 1919; John S. Hoyland, Village Songs of Western India, London, 1934 ; J. Nelson Fraser & J. F. Edwards, The Life and Teachings of Tukaram, Madras, 1922 ; Mahadevasastri Joshi, Bharatiya Sanskriti Kosh, Poona, 1962 ; S. V. Kelkar, Maharashtriya Jnanakosha, Poona, 1924.

ওয়াই. এম. মুলে
অভয়দেবসূরি একজন প্রসিদ্ধ জৈন টীকাকার। তিনি একাদশ শতাব্দীতে জীবিত ছিলেন। মূলতঃ টীকাকার হইলেও তিনি জয়তিহুয়ণ’-স্তোত্র নামে প্রাকৃতভাষায় একখানি গ্রন্থও লিখিয়াছিলেন। কথিত আছে যে তিনি একবার বিশেষ অসুস্থ হইয়া পড়েন। তখন এই গ্রন্থখানি রচনা করেন এবং ইহার ফলে তিনি | আরােগ্যলাভ করেন। কেবল তাহাই নহে বহুকাল যাবৎ
৯২