পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

অব্দ প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল এইরূপ বিশ্বাসের কোনও ভিত্তি নাই। কারণ এই সংবতের প্রথম বৎসর বিভিন্ন মতানুসারে ১১০৮ হইতে ১১১৯ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে পড়ে। কিন্তু লক্ষ্মণসেন ইহার ৬০/৭০ বৎসর পরে সিংহাসনে আরােহণ করেন। সম্ভবতঃ রাজা বিজয়সেন যখন মিথিলা জয় করেন তখন পৌত্র লক্ষ্মণসেনের জন্মসংবাদ পাইয়া এই ঘটনাকে স্মরণীয় করিবার জন্য এই অব্দ প্রচলন করিয়াছিলেন। মিথিলার বাহিরে এই অব্দের বিশেষ প্রচলন ছিল না। কতকগুলি প্রাচীন শিলালিপিতে লক্ষ্মণসেনের অতীতরাজ্যসংবতের উল্লেখ আছে। সম্ভবতঃ তাঁহার রাজ্য বিনষ্ট হওয়ার তারিখ ( আনুমানিক ১২০০ খ্রী) হইতে ইহার গণনা আরম্ভ। বঙ্গদেশে বলালি সন ও পরগনাতি সন নামে দুইটি অব্দ প্রচলিত ছিল ; ইহাদেরও আরম্ভ আনুমানিক ১২০০ খ্রী হইতে। | ৬২২ খ্রীষ্টাব্দের ১৬ জুলাই শুক্রবার হইতে হিজরা অব্দ গণিত হয়। ঐ বৎসর মহম্মদ মক্কা হইতে মদিনায় গমন করেন এবং সেই স্মৃতি রক্ষা করিবার জন্য এই অব্দ প্রচলিত হয়। ১২টি চান্দ্রমাসে অর্থাৎ ৩৫৪ দিনে ইহার বৎসর পূর্ণ হয়। খলিফা উমর ৬৩৮-৬৩৯ খ্রীষ্টাব্দে এই অব্দের প্রচলন করেন। অনেকে মনে করেন যে হিজরা প্রথমে সৌর-চান্দ্রিক হিসাবে গণনা করা হইত, কিন্তু মলমাস নির্ণয়ে ঐকমত্যের অভাবে ১০ হিজরার পর হইতে (অর্থাৎ মহম্মদের মৃত্যুর পর হইতে ) সম্পূর্ণ চান্দ্র হিসাবে এই অব্দ গণিত হইয়া আসিতেছে। এই মত ধরিলে ৬২২ খ্রীষ্টাব্দের ১৯ মার্চ শুক্রবার বাসন্ত ক্রান্তিপাত দিবসের পরদিন হইতে এই অব্দের আরম্ভ।

| দাক্ষিণাত্য হইতে আগত সেন রাজবংশ বঙ্গ দেশে শকাব্দ প্রচলিত করেন। পরে মুসলমানদের আগমনের পর এ দেশে রাজকার্যে হিজরা অব্দ ব্যবহৃত হইতে থাকে, যদিও শিক্ষিত সম্প্রদায় শকাব্দই ব্যবহার করিতেন। কিন্তু হিজরা অব্দ ৩৫৪ দিনে পূর্ণ হয় বলিয়া উহার বর্ষারম্ভ বৎসরের যে কোনও সময়েই হইতে পারে। পরন্তু ৩২২ বৎসর পর পর হিজরী সনে এক বৎসর করিয়া বৃদ্ধি পাইতে থাকে। ইহাতে রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত রাজকার্যের অসুবিধা হয়। এইজন্য সম্রাট আকবরের সময়ে হিজরাকেই ৩৬৫ দিনে গণনা করিবার ব্যবস্থা হয়। ১৫৫৬ খ্রীষ্টাব্দের হিজরাসংখ্যা ৯৬৩-র সহিত তৎপরবর্তী। সৌরবংসসংখ্যা যােগ করিলে বর্তমান কালের বঙ্গাব্দ পাওয়া যায়। উত্তর ভারতের ফসলী এবং উড়িষ্যার বিলায়তী ও আমলীরও ঐ একই রূপ উৎপত্তি, কেবলমাত্র বর্ষারম্ভকালের কিছু পার্থক্য দেখা যায়। এই সকল

________________

অব্দ অব্দের আরম্ভকাল বঙ্গাব্দের প্রায় ৭ মাস পূর্বে। বিলায়তী কন্যাদি হইতে, আমলী ভাদ্র শুক্লদ্বাদশী হইতে এবং ফসলী অব্দ ভাদ্র কৃষ্ণপ্রতিপদ হইতে আরম্ভ হয়। দক্ষিণ ভারতীয় ফসলীর বর্ষসংখ্যা বঙ্গাব্দ হইতে ৩ সংখ্যা অধিক এবং আরম্ভকাল আষাঢ়। চট্টগ্রামে প্রচলিত মগী অব্দ ৬৩৮ খ্রীষ্টাব্দে আরম্ভ | হইয়াছে। নেপালে প্রচলিত নেওয়ার অব্দের আরম্ভ কাল ৮৭৯ খ্রীষ্টাব্দ। ইহা কার্তিক শুক্ল প্রতিপদ হইতে | গণিত হয়। কেরলে প্রচলিত কোল্লাম্ অব্দের আরম্ভকাল ৮২৪ খ্রী। ইহা দক্ষিণ মালাবারে সিংহাদি হইতে এবং | উত্তর মালাবারে কন্যাদি হইতে গণিত হয়। কোল্লাম অব্দকে পরশুরামের অব্দও বলা হয়। আদিতে পরশুরামের অব্দসংখ্যা হাজারের অধিক হইলে হাজার বাদ দিয়া গণনা করিবার পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। বহির্ভারতীয় অব্দের মধ্যে খ্ৰীষ্টাব্দই প্রধান। ইহা বর্তমানে পৃথিবীর সর্বত্র প্রচলিত। ডাইওনিসিয়াস এক্সিজাস কর্তৃক ৫৩০ খ্রীষ্টাব্দে ইহা প্রথম প্রচলিত হয়। ইহার আদি গণনা করা হইয়াছিল তৎকালে জ্ঞাত যীশু খ্রীষ্টের জন্মকাল হইতে। কিন্তু পরবর্তী গবেষণায় জানা যায়, যে বৎসর হইতে খ্ৰীষ্টাব্দ গণনা করা হয়, যীশু সম্ভবত তাহার ৪ বৎসর পূর্বে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। এ দেশে যেমন কল্পিত গ্ৰহযুতির ভিত্তিতে কল্যব্দ | প্রবর্তিত হইয়াছিল, পাশ্চাত্ত্য দেশেও সেইরূপ ৭৪৭ খ্ৰীষ্ট পূর্বাব্দের ২৬ ফেব্রুয়ারি হইতে প্রায় ঐরূপ ভিত্তিতেই এক কাল গণনা পদ্ধতি প্রবর্তিত হয়। তৎকালে ব্যাবিলনে | নাবু নাজির নামে এক রাজা ছিলেন। তাহার নামানুসারে ইহাকে নবােনাসার অব্দ বলা হয়। কিন্তু এই অব্দ কল্যব্দের ন্যায় মাত্র জ্যোতির্বিদগণের মধ্যেই প্রচলিত ছিল। গ্রীক ওলিম্পিয়াড আরম্ভ হয় ৭৭৬ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে

এবং রােম নগরীর পত্তন হয় ৭৫৩ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে। এই | দুইটি তারিখও অব্দ গণনায় ব্যবহৃত হইত। সেলুকাসের রাজত্বকাল হইতে এক অব্দ গণনা প্রচলিত হয়। তাহার আরম্ভকাল ৩১২ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ। ইহুদীদিগের বিশ্বাস অনুযায়ী পৃথিবীর সৃষ্টিকাল ৩৭৬১ খ্রীষ্টপূর্ব ৭ অক্টোবর। তদনুযায়ী তাহাদের এক অব্দ প্রচলিত আছে। এক ফরাসী পণ্ডিত | যােসেফ স্ক্যালিগার একই অব্দ দ্বারা অতি প্রাচীন কাল হইতে ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহ লিপিবদ্ধ করিবার সুবিধার জন্য ১৫৮২ খ্রীষ্টাব্দে এক কাল গণনা পদ্ধতির প্রবর্তন করেন এবং তাঁহার পিতার নামে উহাকে জুলিয়ান অব্দ নামে অভিহিত করেন। ইহার আরম্ভকাল ৪৭১৩ খ্রষ্টপূর্বাব্দের ১ জানুয়ারি। জাপানে প্রচলিত জাপানী
৯১