পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/১১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
অভিধম্মপিটক
অভিনবগুপ্ত
অভিধম্মকোশে বসুবন্ধু অভিধর্মের প্রায় সকল বিষয়েরই আলােচনা করিয়াছেন। প্রধানতঃ সর্বাস্তিবাদী বৌদ্ধগণের জন্য রচিত হইলেও অভিধম্মকোশের দার্শনিক উৎকর্ষের জন্য ইহা সকল সম্প্রদায়ভুক্ত বৌদ্ধগণেরই একটি অবশ্যপাঠ্য গ্রন্থ হিসাবে স্বীকৃত হইয়াছে। গ্রন্থকার স্বয়ং এই গ্রন্থের একটি ভাষ্যও লিখিয়াছিলেন। খ্ৰীষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে ভারতবর্ষে এই গ্রন্থ এতদূর সমাদৃত ছিল যে মহামতি বাণভট্ট তাঁহার হর্ষচরিতে একটি আশ্রম বর্ণনা প্রসঙ্গে বলিয়াছেন যে আশ্রমের শুকপক্ষীগণ অভিধম্মকোশ আবৃত্তি। করিতেছিল। | এই গ্রন্থের মূল সংস্কৃত পু থি এখনও পাওয়া যায় নাই। সৌভাগ্যক্রমে পণ্ডিতপ্রবর যশেমিত্র রচিত এই গ্রন্থের টাকা ‘স্টুটাৰ্থাভিধম্মকোশব্যাখ্যা পাওয়া গিয়াছে এবং ইহা অভিধম্মকোশের পুনরুদ্ধারে সাহায্য করিয়াছে। ৮টি খণ্ডে রচিত এই গ্রন্থে আচার্য বস্তুবন্ধু অতি সুন্দর ও সহজ ভাবে ধাতু, ইন্দ্রিয়, কর্ম, জ্ঞান, ধ্যান প্রভৃতি বিষয়ের ব্যাখ্যা ও আলােচনা করিয়াছেন। এই গ্রন্থের শেষ অধ্যায়ে আত্মা (soul) সম্বন্ধে বৌদ্ধ মতবাদের একটি অতি মূল্যবান আলােচনা রহিয়াছে। পরমার্থ ও হিউএন্-ৎসা-কৃত এই গ্রন্থের দুইটি চৈনিক অনুবাদ পাওয়া যায়।
বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

অতিধমপিটক পিটক দ্র

অভিন্মাবতার উরগপুরবাসী বুদ্ধদত্তকৃত অভিধম্ম গ্রন্থ। চোড় দেশে এই গ্রন্থ লিখিত হয়। ইহা অভিধম্ম শিক্ষার ভূমিকাবিশেষ। বুদ্ধঘােষের বিশুদ্ধিমগ্‌গের সহিত ইহার সাদৃশ্য আছে। কিন্তু বুদ্ধঘােষের রচনার কোনও কোনও অংশের ন্যায় বুদ্ধদত্তের আলােচনা জটিল বা অস্পষ্ট নহে। তাঁহার ভাষা সুস্পষ্ট এবং শব্দসম্পদে সমৃদ্ধ। এই গ্রন্থের অধিকাংশই পদ্যে নিবদ্ধ, শুধু স্থানে স্থানে গঙ্গাকারে গ্রন্থকারের স্বীয় ব্যাখ্যান আছে। গ্রন্থের দুইটি টীকা পাওয়া যায়- ১. মহাবিহারবাসী বাচির মহাসামিকত এবং ২. সারিপুত্তশিষ্য সুমঙ্গলকৃত।

শৈলেন্দ্রনাথ মিত্র

অভিধান কোষ ঐ

অভিনবগুপ্ত কাশ্মীরীয় আচার্য অভিনব গুপ্ত ভারতবর্ষের মধ্যযুগের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ মনীষাসম্পন্ন পুরুষ। পণ্ডিতগণের মতে তাহার আবির্ভাবকাল আনুমানিক খ্ৰীষ্টীয় ৯৫ ০-৯৬০ অব্দের মধ্যে। অভিনবগুপ্ত
নানাশাস্ত্রে পারদর্শী ছিলেন এবং অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করিয়া গিয়াছেন। সেই সকল গ্রন্থমধ্যে তিনি আপনার বংশপরিচয়, বিদ্যালাভের বিবরণ, বিভিন্ন গ্রন্থরচনার ইতিহাস প্রভৃতি বহুবিধ জ্ঞাতব্য তথ্য বিবৃত করিয়া গিয়াছেন। তাহা হইতে আমরা তাহার জীবনেতিহাস সম্বন্ধে যাহা জানিতে পারি, অতি সংক্ষেপে তাহাই উল্লিখিত হইল। তাহার পূর্বপুরুষ মহাপণ্ডিত অত্রিগুপ্ত ছিলেন কান্যকুজের অধিবাসী। তিনি কাশ্মীরাধিপতি ললিতাদিত্য কর্তৃক আনুমানিক খ্ৰীষ্টীয় ৭৪০ অব্দে কাশ্মীর দেশে নীত হন এবং সেই দেশেই বিতস্তা তীরবর্তী প্রবরপুর নামক নগরীতে রাজপ্রদত্ত ভূমিতে নিবাস কল্পনা করেন। তাঁহারই বংশে খ্রষ্টীয় ১০ম শতাব্দীর প্রারম্ভে বরাহগুপ্তের জন্ম হয়। ইনি ছিলেন অভিনবগুপ্তের পিতামহ। তাহার ঔরসে অভিনবগুপ্তের পিতা নরসিংহগুপ্ত (অপর নাম চুখথুলক) জন্মগ্রহণ করেন। ইহারা সকলেই নানাশাস্ত্রে সুপণ্ডিত ছিলেন। অভিনবগুপ্তের জননীর নাম ছিল বিমলা বা বিমলকলা। অতি বাল্যকালেই তাহার জননী লােকাস্তরিত হন। তখন পিতাই তাহাকে লালন-পালন করেন। পিতার নিকট তিনি অতিগহন শব্দশাস্ত্র বা ব্যাকরণে নিরতিশয় প্রাধান্য লাভ করেন—‘পিত্রা স শব্দগহনেকৃতসম্প্রবেশঃ। ইহা ছাড়া তিনি বিভিন্ন শাস্ত্র অধ্যয়নে প্রবৃত্ত হন। যেমন ভূতিরাজের নিকট ব্ৰহ্মবিদ্যা, লক্ষ্মণগুপ্তের নিকট কাশ্মীরের ক্রম ও ত্রিক বা প্রত্যভিজ্ঞদর্শন, ভট্টেরাজের নিকট গীতা, সাহিত্য ও অলংকারশাস্ত্র, | ভট্টােত বা ভট্টতৌতের নিকট নাট্যশাস্ত্র প্রভৃতি বিচিত্র| বিদ্যা আয়ত্ত করেন। তাঁহার বিদ্যার্জনস্পৃহার যেন সীমা ছিল না। তর্ক, বৈশেষিক, বৌদ্ধ, জৈন ও বৈষ্ণবদর্শনও তিনি বিভিন্ন গুরুর সেবার দ্বারা আয়ত্ত করিয়াছিলেনএমনই ছিল তাহার শাস্ত্রকৌতূহল। ইহার জন্য তাঁহাকে কাশ্মীর দেশ ত্যাগ করতঃ দেশান্তরেও ভ্রমণ করিতে হইয়াছিল। তিনি অনন্যসাধারণ শিবভক্ত ছিলেন; নিরন্তর সাধনার দ্বারা তিনি শিবম্বভাব বা মহেশ্বরভাব প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। যে পাঁচটি শাস্ত্রোক্ত চিহ্নের দ্বারা সাধকের হৃদয়ে রুদ্রশক্তি সমাবেশ প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে বলিয়া অনুমিত হয়- যেমন, সুনিশ্চলা রুদ্রভক্তি, মসিদ্ধি, সর্বতত্ত্ববশি, প্রারব্ধ কার্যনিষ্পত্তি এবং কবিত্ব ও সর্বশাস্ত্ৰাৰ্থবেতৃত্ব—সেই সকলই অভিনবগুপ্তপাদের ক্ষেত্রে সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হইত। জয়রথ অভিনব গুপ্তচিার্য রচিত ‘তালােক’ গ্রন্থের টীকায় বলিয়াছেন—

“সমস্তং চেদং চিহ্নজাত অস্মিম্নেব গ্রন্থকারে প্রাদুরভূদিতি প্রসিদ্ধি। যদগুরবঃ

৯৪