পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

অভিনগুপ্ত “অকস্মাৎ সর্বশাস্ত্রার্থজ্ঞত্বাং লক্ষ্মপঞ্চক। যস্মিচ্ছীপূর্বশাস্ত্রোক্তমদৃশ্যত জনৈঃ স্ফুট।” অভিনবগুপ্ত আজীবন ব্রহ্মচর্য পালন করিয়াছিলেন। সংসারপাশে আপনাকে বদ্ধ হইতে দেন নাই- ‘দারাসুত-প্রভৃতি-বন্ধকথামনাপ্ত। কাশ্মীরীয়গণের নিকট তিনি সাক্ষাৎ ভৈরবাবতাররূপে পরিচিত। কথিত আছে, পরিণতবয়সে তিনি দ্বাদশশত শিষ্যসমভিব্যাহারে শ্রীনগর সমীপস্থ ভৈরব গুহায় প্রবেশ করতঃ স্বেচ্ছায় দেহ বিসর্জন দিয়া মুক্তিলাভ করেন। আচার্য অভিনবগুপ্ত শৈব আগমশাস্ত্র, প্রত্যভিজ্ঞদর্শন এবং অলংকার ও নাট্যশাস্ত্রের উপর অগণিত গ্রন্থ রচনা করেন। তন্মধ্যে ‘বােধ-পঞ্চদশিকা’, ‘মালিনীবিজয়বার্তিক, ‘পরাত্রিংশিকা-বিবরণ’, ‘তালােক’, ‘তন্ত্রসার’, ‘ধ্বন্যালােকলােচন’, ‘অভিনবভারতী’, ‘ভগবদগীতার্থসংগ্রহ’, ‘পরমার্থসার’ এবং প্রত্যভিজ্ঞাবিমশিনী’ নামক নিবন্ধরাজি সর্বাধিক প্রসিদ্ধ। ইহা ছাড়া ‘ক্রমস্তোত্র’, ভৈরবস্তব’ প্রভৃতি দার্শনিক স্তোত্রও তাহারই রচিত। দার্শনিক ও সাধক অভিনবগুপ্তপাদের পরিচয় বর্তমান প্রসঙ্গের বহিভূত। আমরা শুধু সাহিত্যমীমাংসক অভিনবগুপ্তের মতবাদ সম্বন্ধে এই প্রসঙ্গে অতি সংক্ষেপে কিছু আলােচনা করিব। | অভিনবগুপ্ত তাহার ‘লােচন'-ব্যাখ্যার অবতরণিকাশ্লোকে বলিয়াছেন— “ভট্টেরাজচরণাজতাধিবাসহৃদ্যতােহভিনবগুপ্তপদাভিধােহহম্। যৎকিঞ্চিদপ্যনুরণন্ ফুটয়ামি কাব্যা | লােকং স্বলােচননিযােজনয়া জনস্য।” সুতরাং ইহা হইতে স্পষ্টই অনুমিত হয় যে তিনি ‘ধ্বন্যালােক’ (বা ‘কাব্যালােক’ ) গ্রন্থখানি ভট্টেন্দুরাজের নিকট অধ্যয়ন করিয়াছিলেন। তাহার টীকা ‘কাব্যালােকলােচন’, ‘সহৃদয়ালােক-লােচন’ বা ‘ধ্বন্যালােক-লােচন’ রূপে পরিচিত। লােচন’-ব্যাখ্যার পূর্বেও ধ্বন্যালােকের উপর আর একখানি টীকা ছিল ; তাহার নাম চন্দ্রিকা। অভিনবগুপ্ত তাহার একটি শ্লোকে উক্ত টাকার উপর সশ্লেষ কটাক্ষ করিয়া বলিয়াছেন— “কিং লােচনং বিনালােকো ভাতি চন্দ্ৰিকয়াপি হি।

তেনাভিনবগুপ্তোহয়ং লােচনােন্মীলনং ব্যথাৎ ॥” ‘চন্দ্রিকা’কার যে তাহারই এক পূর্ব-সগােত্র ছিলেন তাহাও অভিনবগুপ্ত স্পষ্টতঃই উল্লেখ করিয়াছেন। লােচন’-টীকার বহুস্থলে চন্দ্রিকা’কারের ব্যাখ্যা আলােচিত ও খণ্ডিত হইয়াছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই প্রাচীন টাকাখানি মহিমভট্টের সময় হইতেই লুপ্ত।

________________

অভিনবগুপ্ত ইহা নিঃসন্দেহ যে, অভিনবগুপ্তের ‘লােচন’-টীকাখানি না থাকিলে ‘ধ্বন্যালােক’গ্রন্থের পঠন-পাঠন ও উহার যথার্থ তাৎপর্য অনুধাবন অসম্পূর্ণ থাকিয়া যাইত। ‘লােচন’ গ্রন্থে অভিনবগুপ্ত আচার্য ভট্টনায়করচিত অধুনালুপ্ত হৃদয়দর্পণ’ নামক ধ্বনিধ্বংসগ্রন্থ হইতে বহু উক্তি উদ্ধারপূর্বক খণ্ডন করিয়াছেন। তাঁহার অন্যতম সাহিত্যগুরু ভট্টতােত (বা তৌত) -প্রণীত ‘কাব্য-কৌতুক নামক লুপ্ত অলংকারনিবন্ধ হইতেও বহু উক্তি উদ্ধৃত হইয়াছে। অভিনব গুপ্ত ‘কাব্য-কৌতুক’ গ্রন্থের উপর যে ‘বিবরণ’ নামক একখানি টীকাও রচনা করিয়াছিলেন তাহাও লােচন’-ব্যাখ্যায় স্পষ্টতঃই ঘােষিত হইয়াছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, এই মূল্যবান টীকাটিও আজ লুপ্ত। ‘লােচন’-টীকায় অভিনবগুপ্ত আপনার অপূর্ব দার্শনিক মনীষা ও সাহিত্যবােধের সাক্ষ্য রাখিয়া গিয়াছেন। তাহার পাণ্ডিত্যের পরিধি ও গভীরতা সত্যই বিস্ময়কর। ভারতীয় নাট্যশাস্ত্রের উপর অভিনব গুপ্তের ‘অভিনবভারতী’ নামক সুবৃহৎ ব্যাখ্যাও তাহার অপূর্ব মনীষার নিদর্শন। ইহা ‘নাট্যবেদ-বিবৃতি’ নামেও পরিচিত। পণ্ডিত রামকৃষ্ণ কবি কর্তৃক সম্পাদিত এই গ্রন্থটি গাইকোয়াড় সংস্কৃত গ্রন্থমালায় খণ্ডে খণ্ডে প্রকাশিত হইতেছে। এই পর্যন্ত তিনটি খণ্ড মুদ্রিত হইয়াছে। অভিনবগুপ্তের এই ব্যাখ্যা হইতেই প্রাচীন ভারতে নাট্যশাস্ত্রের আলােচনা কিরূপ ব্যাপক ছিল তাহার প্রমাণ পাওয়া যায়। এই সুবিশাল গ্রন্থের নানা স্থলে উদ্ভট, লােশ্লট, শম্বুক, ভট্টনায়ক, বার্তিককৃৎ, শ্ৰীহর্ষ প্রভৃতি প্রাচীন ব্যাখ্যাতৃগণের মতের উল্লেখ দেখিতে পাওয়া যায়। ভরতমুনির ‘বিভাবানুভাব| ব্যভিচারিসংযােগারসনিষ্পত্তিঃ- এই সুবিখ্যাত রসসূত্রের

যে বিভিন্ন ব্যাখ্যান প্রচলিত আছে, সেই সকলই অভিনবগুপ্তের ‘ভরত’-টীকা হইতেই আহৃত। নাট্যশাস্ত্রের | সম্পাদন ও ব্যাখ্যান প্রসঙ্গে অভিনবগুপ্ত বহু আদর্শ পুস্তক সংগ্রহ করতঃ মূল গ্রন্থের প্রকৃত পাঠোদ্ধার ও অর্থনিরূপণে ব্রতী হইয়াছিলেন। এই প্রচেষ্টায় তিনি উপাধ্যায় ভট্টতৌতের নিকট হইতে যে বহুমূল্য উপদেশ লাভে সমর্থ হইয়াছিলেন, তাহা অভিনবগুপ্ত স্বকণ্ঠে ঘােষণা করিতে কুণ্ঠিত হন নাই। পঠিতাৰ্দেশক্রমস্ত অস্মভুপাধ্যায়পরম্পরাগতঃ- ইত্যাদি উক্তি তাহার সাক্ষ্য। ভারতীয় নাট্যের তত্ত্ব (theory) ও প্রয়ােগ (practice ) উভয়ের আলােচনার পক্ষেই ‘অভিনব-ভারতী’র গুরুত্ব অসামান্য। | সাহিত্যবিচার সম্বন্ধে অভিনবগুপ্তের মতবাদ বিস্তৃত। | ভাবে আলােচনা এই স্থলে সম্ভব নহে। তিনি ধ্বনিকার
৯৫