পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

অচ্ছদ সরােবর শ্রাবস্তী নগরী এই নদীর উপর অবস্থিত ছিল। ইহাকে। পঞ্চ মহানদীর অন্যতম বলা হইত। পালি সাহিত্যে এই। নদীর নাম সুবিখ্যাত। সংস্কৃত বৌদ্ধগ্রন্থে ‘অজিরবতী। এই আকারে উল্লেখ আছে। সম্ভবতঃ ইহাকে ঐরাবতীও। বলা হইত এবং তাহা হইতেই রাপ্তি নামের উদ্ভব। হইয়াছে। রমেশচন্দ্র মজুমদার। অচ্ছেদ সরােবর কাশ্মীরের অন্তর্গত মার্তণ্ড হইতে। ১০ কিলোমিটার ( ছয় মাইল) দূরবর্তী বিখ্যাত সরােবর। বর্তমানে ইহা ‘আচ্ছাবল’ নামে পরিচিত। বাণভট্টের কাদম্বরীতে এই সরােবরের বর্ণনা রহিয়াছে। এই সরােবরের তীরে সিদ্ধাশ্রম অবস্থিত ছিল। ü Nundo Lal Dey, The Geographical Dictionary of Ancient and Mediaeval India, London, 1927. অজ অযােধ্যাপতি সূর্যবংশীয় রাজা, রঘুর পুত্র, দশরথের পিতা ও রামচন্দ্রের পিতামহ। ইনি বিদভরাজের কন্যা ইন্দুমতীকে বিবাহ করেন। একদা আকাশপথে গমনশীল মহর্ষি নারদের বীণাগ্রভাগ হইতে এক দিব্য পুষ্পমাল্য উদ্যানে বিহাররত ইন্দুমতীর বক্ষে নিপতিত হইলে তিনি প্রাণত্যাগ করেন। কালিদাস রঘুবংশ মহাকাব্যের অষ্টম সর্গে পত্নীবিয়ােগে অজবিলাপ বর্ণনা করিয়াছেন। তারাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য অজন্টা, অজিঙ্কা ভারতবর্ষের প্রত্নকীর্তিরাজির মধ্যে অজণ্টার (২০৩০' অক্ষাংশ এবং ৭৫”৪৫ দ্রাঘিমাংশ) শৈলখাত (rock-cut) গুহাবলী ভারতীয় চিত্রকলার চরম উৎকর্ষের নিদর্শনরূপে বিশ্ববিশ্রুত। উনবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে গুহাগুলি নৃতন করিয়া আবিষ্কৃত হয়। চৈনিক পরিব্রাজক হিউএন্-ৎসা এই বৌদ্ধকেন্দ্রের একটি সুন্দর বিবরণ লিপিবদ্ধ করিয়াছিলেন। তাহার পর দীর্ঘকাল অজণ্টার উল্লেখ ইতিহাসে বা ভ্রমণকাহিনীতে প্রায় নাই বলিলেই হয়। | মহারাষ্ট্র রাজ্যের অন্যতম জেলা-সদর ঔরঙ্গাবাদ হইতে প্রায় ১০১ কিলােমিটার ( ৬৩ মাইল ) এবং সেন্টাল রেলওয়ের জলগাও স্টেশনের প্রায় ৫৫ কিলােমিটার ( ৩৪ মাইল) দূরবর্তী ফদাপুর গ্রাম হইতে প্রায় ৬ কিলোমিটার (৪ মাইল) দূরে এই গুহাবলী। পূর্বোক্ত স্থানদ্বয় হইতে নিয়মিত বাস চলাচলের ব্যবস্থা আছে। গুহাগুলি ২৮________________

অণ্টা হইতে অজণ্টা গ্রামটির দূরত্ব প্রায় ১১ কিলােমিটার | ( ৭ মাইল )। ৭৬ মিটার ( ২৫০ ফুট) উচ্চ একটি খাড়া পাহাড়ের পার্শ্বদেশ কাটিয়া গুহাগুলি নির্মিত। প্রায় ৫৪৯ মিটার ( ৬০০ গজ) ব্যাপিয়া অর্ধবৃত্তাকারে গুহাগুলি অবস্থিত ; বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে নির্মিত হওয়ায় পূর্ব-পরিকল্পনার অভাব পরিলক্ষিত হয়। ফলে ইহাদের মেঝে অনুভূমিক নয় ; ৮ নং গুহা সর্বনিম্নে এবং ২৯ নং | সর্বোচ্চে। পূর্বে প্রায় প্রত্যেক গুহাই নিজস্ব সােপানের দ্বারা নীচে প্রবহমান নদী ওয়াঘােরার সহিত সংযুক্ত ছিল। | এই সােপানগুলির মাত্র দুইটি এখন অবশিষ্ট। অসমাপ্ত গুহাসহ গুহার সংখ্যা মােট ৩০। তন্মধ্যে ৫টি | ( গুহা নং ৯, ১০, ১৯, ২৬ এবং ২৯ ) চৈত্যগৃহ; অবশিষ্ট | ২৫টি সংঘারাম। বৌদ্ধ শৈলখাত স্থাপত্যধারার দুইটি | বিশিষ্ট পর্বে ইহার। নির্মিত। দুই পর্বের মধ্যে প্রায় চার শতাব্দীর ব্যবধান। প্রথম পর্বভুক্ত ৬টি গুহাই ( ৮, ৯, ১০, ১২, ১৩ ও ১৫-এ ) খ্রীষ্টপূর্ব যুগের এবং প্রাচীনতমটি (১০) খ্ৰীষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের। ইহাদের মধ্যে ৯ ও ১০ সংখ্যক চৈত্যগৃহ এবং বাকিগুলি সংঘারাম। চৈত্যগৃহদ্বয়ের দ্বারের উপরিভাগে ‘চৈত্য-গবাক্ষ’ নামে পরিচিত | একটি অশ্বনালাকার বাতায়ন বহির্ভাগের বৈশিষ্ট্যদ্যোতক। চৈত্যগৃহের অভ্যন্তরে স্তম্ভশ্রেণীর আসন (ground-plan) শূপের আকৃতিবিশিষ্ট। ছাদের নীচের পিঠ অর্ধবৃত্তাকার ; পূর্বে ইহার গায়ে কাঠের কড়ি-বরগা লাগানো ছিল। | চৈত্যগৃহ হইল দেবায়তন। প্রথম পর্বের এই দুইটি দেবায়তনেই আরাধ্য বস্তু হইল একটি করিয়া শৈলখাত সূপ ; কেননা এই যুগে বুদ্ধমূর্তিপূজার প্রথা প্রচলিত হয় নাই। সংঘারামে শ্ৰমণমণ্ডলীর সমাবেশের জন্য একটি সুপ্রশস্ত দরদালান এবং ইহার তিনদিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আবাসিক প্রকোষ্ঠ নির্মিত হইয়াছিল।

প্রায় চারি শতাব্দীব্যাপী নিষ্ক্রিয়তার পর পুনরায় নবােদ্যমে ব্যাপকতর শৈলখাত স্থাপত্যকর্মের সূত্রপাত হয় চতুর্থ-পঞ্চম শতাব্দীতে। অধিকাংশ গুহা নির্মিত হয় বাকাটকদের রাজত্বকালে। এই দ্বিতীয় পর্বে ১১ ও ৭ সংখ্যক গুহাদ্বয়ে পরীক্ষামূলক ধাপ অতিক্রান্ত হইলে সংঘারাম গঠনরীতির মান নির্ধারিত হয়। প্রথমে অলিন্দ, অলিন্দের পশ্চাতে একটি স্তম্ভযুক্ত প্রশস্ত মণ্ডপ এবং মণ্ডপের তিনদিকে প্রকোষ্ঠশ্রেণী ; মণ্ডপের পিছনের সারির কেন্দ্রস্থ প্রকোষ্ঠে বুদ্ধমূর্তি উৎকীর্ণ। এই আদর্শে গঠিত হইলে ও সংঘারামগুলির প্রায় প্রত্যেকটিতেই কিছু না কিছু বিশিষ্টতা বিদ্যমান। ৬ সংখ্যক গুহাটি দ্বিতল। এই সময়কার সংঘরামের

২৮