পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/৬৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

উষ্ণতা দেওয়ার চেষ্টা হইয়া থাকে। সেইহেতু পদার্থবিজ্ঞানে সকল অবস্থা বা ধর্মকে মােটামুটি পরিমাণগত রূপ দেওয়া হইয়াছে। কোনও বস্তুর মধ্যে যে উত্তাপ ও শীতল ভাব লক্ষিত হয়, তাহার তীব্রতা নির্ণয়ার্থ যে পরিমাপক সংজ্ঞা নির্দিষ্ট হইয়াছে, তাহাকে পদার্থবিদ্যায় উষ্ণতা বা টেম্পারেচার বলে। সুতরাং উষ্ণতা বস্তুর একটি বিশেষ অবস্থা যাহার দ্বারা বস্তুর মধ্যে পরিমাণগত ভাবে উত্তপ্ততার পরিমাপ করা হয়। উষ্ণতা বৃদ্ধি করিতে বস্তুর যাহা প্রয়ােজন, তাহাকে আমরা তাপ বা হীট বলিয়া থাকি। অবস্থান্তর না হইলে অর্থাৎ কঠিন হইতে তরল অথবা তরল হইতে বায়বীয় এইরূপ পরিবর্তন না ঘটিলে কোনও বিশেষ বস্তুর ক্ষেত্রে সমান তাপে সমান উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। এক গ্রাম বস্তুর এক একক উষ্ণতা বৃদ্ধি করিতে যে তাপের প্রয়ােজন হয় তাহাকে স্পেসিফিক হীট বলা হয়। বিভিন্ন প্রকারের বস্তুর স্পেসিফিক হীট -এর মান বিভিন্ন। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, যেমন বেশি উচ্চতার স্থান হইতে কম উচ্চতার স্থানে তরল পদার্থ প্রবাহিত হয়, সেইরূপ বেশি উষ্ণতার বস্তু হইতে কম উষ্ণতার বস্তুর প্রতি তাপ প্রবাহিত হয়। ইহা পদার্থের একটি বিশেষ ধর্ম। বস্তুর অবস্থান্তর না ঘটিলে সমান উষ্ণতার সহিত সমান আয়তন পরিবর্তন হয়, মােটামুটি ইহা ধরা যাইতে পারে। এই ধর্মের উপর ভিত্তি করিয়াই সাধারণতঃ পরােক্ষভাবে উষ্ণতা নির্ধারণ করা হইয়া থাকে। যে যন্ত্রের সাহায্যে উষ্ণতার মাপ নির্ধারণ করা হয় তাহাকে উষ্ণতাপরিমাপক যন্ত্র বা থার্মোমিটার বলে। | উষ্ণতা পরিমাপের বিভিন্ন স্কেল আছে- তাহার মধ্যে সেন্টিগ্রেড, ফারেনহাইট, রেমার, কেলভিন ( অবসলুট ) ও র্যাঙ্কিন -এর নাম করা যাইতে পারে। এই সকল স্কেলে বরফজল ও ফুটন্ত জলের উষ্ণতার মানের নিম্নরূপ ব্যবস্থা আছে : সেন্টি. ফারেন. রেমার কেভিন র্যাঙ্কিন হিমাঙ্ক। • ৩২ • ২৭৩ ৪৯১ ফুটনাঙ্ক ১০০ ২১২ ৮ ৩৭৩ ৬৭১ দুই মানের মধ্যকাব ভাগ ১০০ ১৮০ ৮০ ১০০ ১৮০ সহজেই দেখানাে যায়, কোনও বস্তুর উষ্ণতা প্রথম তিন স্কেলে ক খ গ দ্বারা সূচিত হইলে তাহাদের পারস্পরিক সম্বন্ধ এইরূপ হইবে : ১৮০

________________

উষ্ণ প্রস্রবণ | উষ্ণ প্রস্রবণ ভূমির অভ্যন্তরস্থ জলরাশি ধারাপথে ভূমির উপরিতলে উৎক্ষিপ্ত হইলে তাহাকে প্রস্রবণ বলে। কোনও প্রস্রবণের জলরাশির তাপাঙ্ক (টেম্পারেচার) স্থানীয় জলবায়ুর গড় তাপাঙ্ক হইতে অন্তত: ১০ সেন্টিগ্রেডের অধিক হইলে উহাকে উষ্ণ প্রস্রবণ বলা হয়। যে প্রস্রবণের জলে দ্রবীভূত পদার্থের পরিমাণ অধিক (১০ ০০-এ ১ ভাগের অধিক) তাহাকে খনিজ প্রস্রবণ বলে। অধিকাংশ উষ্ণ প্রস্রবণই খনিজ প্রস্রবণ এবং অধিকাংশ খনিজ প্রস্রবণই উষ্ণ। উষ্ণ প্রস্রবণ হইতে ভূগর্ভের যে জলরাশি (গ্রাউণ্ড ওয়াটার) নির্গত হয় তাহার উত্তাপের দ্বিবিধ কারণ থাকা সম্ভব। ১. বৃষ্টির জলের যে অংশ ( মিটি ওরি ওয়াটার ) ভূমির অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তাহা ভূতলের কোনও উত্তপ্ত শিলার সংস্পর্শে আসিয়া তাপ গ্রহণ করিতে পারে। ২. পৃথিবীর অভ্যন্তরস্থ যে গলিত উত্তপ্ত পদার্থ ( ম্যাগমা) হইতে আগ্নেয় শিলার জন্ম হয়, তাহার সহিত সংশ্লিষ্ট জলে ( ‘জুভেনাইল ওয়াটার’ বা ‘সদ্যোজাত জল’ ) যথেষ্ট উষ্ণতা থাকে। উক্ত সদ্যোজাত জল’ ভূমির অভ্যন্তরস্থ অন্য জলরাশির সহিত মিশ্রিত হইয়া উহাকে উষ্ণ করিয়া তােলে। কোনও উষ্ণ প্রস্রবণের জলে সদ্যোজাত জলের পরিমাণ কত তাহাও নির্ণয় করা যায়। যদি বৃষ্টিপাতের হ্রাসবৃদ্ধির সহিত কোনও প্রস্রবণের জলের পরিমাণ হ্রাসবৃদ্ধি পায় তবে উহাতে বৃষ্টির জলেরই প্রভাব অধিকতর। এইরূপ ক্ষেত্রে প্রস্রবণের জলে দ্রবীভূত সিলিকা, চুন ও লবণ ব্যতীত অন্য কিছু থাকে না। কিন্তু যদি প্রস্রবণের জলের পরিমাণের সহিত বৃষ্টিপাতের কোনও সম্পর্ক না থাকে এবং যদি জলে দ্রবীভূত কার্বন ডাইঅক্সাইড, গন্ধক, বােরিক অ্যাসিড ইত্যাদি পাওয়া যায় তাহা হইলে ম্যাগমা-সংশ্লিষ্ট সদ্যোজাত জল’ই উষ্ণতার কারণ। যে সকল উষ্ণ প্রস্রবণ হইতে ফুটন্ত জলরাশি কিছুক্ষণ অন্তর প্রবল বেগে উর্ধ্বে উৎক্ষিপ্ত হয় তাহাদিগকে গেজার ( geyser ) বলে। পৃথিবীর অভ্যন্তরে সঞ্চিত এক বৃহৎ জলস্তম্ভের নিম্নভাগের তাপাঙ্ক জলের স্ফুটনাঙ্ক ( যাহা ভূপৃষ্ঠের নিম্নে অধিক চাপের জন্য ১০ ০ সেন্টিগ্রেডের অধিক) অতিক্রম করিলে সেইস্থানের জলরাশি বাষ্পে পরিণত হয়। ফলে তাহার আয়তন বহু গুণ বৃদ্ধি পায়। পরিচলনক্রিয়ায় এই অতিপিত জলের কিয়দংশ উপর দিকে উঠিতে আরম্ভ করে এবং স্তম্ভের উপরিভাগের কিছু জল নির্গত হইয়া যায়। ফলে জলস্তম্ভের নিম্নাংশে চাপ কমিয়া যায় এবং একই সময়ে অনেক পরিমাণে জল ( যাহা

৬৭
৬৬৭