পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/৬৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
উষ্ণ প্রস্রবণ
উর্মিলা দেবী
ইতিপূর্বেই স্ফুটনাঙ্কে ছিল। হঠাৎ বাষ্পে পরিণত হয়। এই অবস্থায় বিস্ফোরণ ঘটে এবং জলরাশি প্রবলবেগে উর্ধ্বে উংক্ষিপ্ত হইতে থাকে। একবার বিস্ফোরণ হইবার পর আবার যতক্ষণ না জলরাশি সঞ্চিত হইয়া যথেষ্ট গরম হইয়া উঠিতেছে ততক্ষণ আর বিস্ফোরণ হয় না। আইসল্যান্ড, আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র ও নিউজিল্যাণ্ডের গেজারগুলি প্রসিদ্ধ। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইয়ােলােস্টোন ন্যাশন্যাল পার্ক’-এ ৩০০০ উষ্ণ প্রস্রবণ ও ২০০ টি গেজার আছে। এই শতাব্দীর প্রথম ভাগে নিউজিল্যাণ্ডের একটি গেজার হইতে বিস্ফোরণের ফলে জলরাশি ১৩০০ ফুট উর্ধ্বে নিক্ষিপ্ত

উষ্ণ প্রস্রবণের জলে দ্রবীভূত পদার্থগুলি প্রস্রবণের মুখে জমিয়া স্পঞ্জের ন্যায় একপ্রকার ছিদ্রযুক্ত শিলার ( সিন্টার) সৃষ্টি করে। ইহা প্রধানতঃ দুই প্রকার . সিলিকাযুক্ত ( সিলিশাস) এবং চুনযুক্ত ( ক্যালকেরিয়াস)। কোনও কোনও প্রস্রবণের মুখে বিচিত্র বর্ণের শৈবালজাতীয় উদ্ভিদ ( অ্যালজি) সঞ্চিত হইয়া বর্ণোজ্জ্বল পটভূমি রচনা করে। | জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইণ্ডিয়ার বৈজ্ঞানিক। প্রকৃতিকুমার ঘোষ ব্যাপক অনুসন্ধান করিয়া ভারতের খনিজ ও উষ্ণ প্রস্রবণ সম্পর্কে বিশদ তথ্য আহরণ করেন ও ১৯৪৮ খ্ৰীষ্টাব্দে ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের ভূতত্ত্ব শাখার সভাপতির ভাষণে উক্ত বিষয়ে আলােচনা করেন। তাহার অনুসন্ধানের ফলে দেখা গিয়াছে যে, ভারতের খনিজ প্রস্রবণগুলি প্রধানতঃ চারিটি অঞ্চলে বিন্যস্ত: ১. বিহারের কয়লাখনিগুলির সীমানার সমান্তরাল অঞ্চল এবং রাজগীর ও মুঙ্গের। ২. ভারতের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত রত্নগিরি, থানা, কোলাবা প্রভৃতি অঞ্চল। ৩. সিন্ধু-বেলুচিস্তান অঞ্চল (বর্তমানে পাকিস্তানের অন্তর্গত)। ৪. হিমালয় অঞ্চল। এতদ্ভিন্ন আরও কয়েকটি বিচ্ছিন্ন স্থানে (যেমন, পূর্ব পাকিস্তানের চট্টগ্রামে) উষ্ণ প্রস্রবণ আছে।

জলের প্রকৃতি অনুসারে ভারতের উষ্ণ প্রস্রবণগুলিকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা যায়। ১. বিশুদ্ধ জলের প্রস্রবণ: ইহাতে দ্রবীভূত পদার্থ অতি অল্প। রাজগীরের ব্ৰহ্মকুণ্ড ইহার দৃষ্টান্ত। ২. ক্ষারযুক্ত জলের প্রস্রবণ: দ্রবীভূত পদার্থের মধ্যে সােডা, পটাশ প্রভৃতি ক্ষারজাতীয় ( অ্যালক্যালাইন) পদার্থই প্রধান। হাজারিবাগের গান্ধোয়ানি ক্ষারযুক্ত জলের প্রস্রবণ। ৩ গন্ধযুক্ত জলের প্রস্রবণ: গন্ধক ‘সদ্যোজাত জলে’র উপস্থিতি প্রমাণ করে। হাজারিবাগের দুয়ারি ও সুরজ কুণ্ডের জল গন্ধযুক্ত। ৪. লবণাক্ত জলের প্রস্রবণ: ইহাতে দ্রবীভূত লবণই
পরিমাণে সর্বাধিক। মহারাষ্ট্রের কুণ্ডগুলি ইহার দৃষ্টান্ত। যথা, উনহেরা (কোলাবা), উনহারা (রত্নগিরি) ও বজ্রেশ্বরী ( থানা)।

ইহা ব্যতীত কাংড়া উপত্যকায় অবস্থিত জ্বালামুখীর প্রস্রবণের জল আয়ােডিনযুক্ত এবং মহারাষ্ট্রের কিছু কুণ্ডের জলে তেজস্ক্রিয় পদার্থ বর্তমান। কুণ্ডের জলে রােগ নিরাময় হয় বলিয়া লােকপ্রসিদ্ধি আছে। প্রস্রবণের জলে গন্ধক, আয়ােডিন প্রভৃতি মিশ্রিত থাকে বলিয়া সম্ভবতঃ এরূপ ধারণার উৎপত্তি। অবশ্য তেজস্ক্রিয় পদার্থগুলির প্রভাবও এরূপ লােকপ্রসিদ্ধির কারণ হইতে পারে।

শ্রমশিল্পের প্রয়ােজনে ও অন্যান্য কাজে অধুনা উষ্ণপ্রস্রবণের তাপশক্তি নানাভাবে ব্যবহৃত হইতেছে। উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করা যায়, আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঞ্চলের গেজারগুলির নিকট গভীর কূপ খনন করিয়া ভূগর্ভস্থ বাষ্পের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হইতেছে। শিবসুন্দর দেব প্রমুখ ভূতত্ত্ববি মনে করেন ভারতের কয়েকটি উষ্ণ প্রস্রবণও এরূপভাবে ব্যবহৃত হইতে পারে। বিশেষতঃ বক্রেশ্বর ও সাঁওতাল পরগনার তাতলােই প্রস্রবণগুলি হইতে তাপশক্তি উৎপাদন সম্ভবপর বলিয়া তাহাদের ধারণা।

ভারতের অধিকাংশ উষ্ণ প্রস্রবণ তীর্থমাহাত্ম্যমণ্ডিত।

নীল বন্দ্যোপাধ্যায়


উর্মিলা দেবী (১৮৮৩-১৯৫৬ খ্রী) পিতা ভুবনমােহন দাস, মাতা নিস্তারিণী দেবী। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন ইহার অগ্রজ। জন্ম ১৮৮৩ খ্ৰীষ্টাব্দের ৩ ফেব্রুয়ারি। আদি নিবাস ঢাকা বিক্রমপুরের অন্তর্গত তেলিরবাগ গ্রাম। স্বামী অনন্তনারায়ণ সেন।

অসহযােগ আন্দোলনে যে তিনজন বাঙালী মহিলা প্রথম আইন অমান্য করিয়া স্বাধীনতা-সংগ্রামের ইতিহাসে স্মরণীয় হইয়া আছেন, উর্মিলা দেবী তাহাদের অন্যতম। ১৯২১ খ্রীষ্টাব্দের ৭ ডিসেম্বর উমিলা দেবী, সুনীতি দেবী ও দেশবন্ধুর সহধর্মিণী বাসন্তী দেবী সরকারি নিষেধ অমান্য করিয়া কলি কাতার রাজপথে খদ্দর বিক্রয় করেন এবং তৎকালীন যুবরাজের আগমন উপলক্ষে ২৪ ডিসেম্বর হরতাল পালন করিবার আহ্বান জানান। পুলিশ তাহাদের গ্রেপ্তার করে। ইহার ফলে বিশেষ আলােড়নের সৃষ্টি হয় এবং এই দৃষ্টান্তে উদ্বুদ্ধ হইয়া বঙ্গের অন্যত্রও অনেক মহিলা অসহযােগ আন্দোলনে যােগ দেন। অতঃপর এই সময়ে উর্মিলা দেবী কলিকাতায় যে নারী-কর্মমন্দির প্রতিষ্ঠা

৬৬৮