________________
অনাগারিক ধর্মপাল সারা জীবন তাহার শরীরে সেই রােগের আক্রমণের। সম্ভাবনা থাকে না। | রােগ-বীজাণু যখন আবিষ্কৃত হয় নাই, তখন ইংল্যাণ্ডে জেনার-ই সর্বপ্রথম (১৭৯৬ খ্রীষ্টাব্দে) বসন্ত রােগের বিরুদ্ধে শরীরে অনাক্রম্যতা সৃষ্টির উপায় উদ্ভাবন করেন। | ভ্যাকসিনেশনের সাহায্যে বসন্ত রােগ প্রতিরােধ করা যায়—জেনারের এই আবিষ্কারের বিষয় পাস্তুর জানিতেন। অ্যাম্বুাক্স সম্পর্কে ককের বিস্ময়কর কার্যাবলীর কথা শুনিয়া তিনি গােরু, ভেড়া প্রভৃতির অ্যান্থাক্স রােগ প্রতিরােধ করিবার পন্থা উদ্ভাবনে সচেষ্ট হন। তিনি ককের পন্থা অনুসরণে অপেক্ষাকৃত দুর্বল অ্যান্থাক্স-জীবাণু পদেহে প্রবেশ করাইয়া অ্যান্থাক্সের বিরুদ্ধে অনাক্রম্যতা সৃষ্টি করিতে সক্ষম হন। ইহার পর পাস্তুর মানুষ ও পশুদের ভয়াবহ জলাতঙ্ক রোগের বিরুদ্ধে অনাক্রম্যতা সৃষ্টির ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেন। এইভাবে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টায় ক্রমশঃ ডিপথেরিয়া, পীতজ্বর, টাইফয়েড, নিউমােনিয়া, হুপিং কাশি, লক-জ, মেনিঞ্জাইটিস, হাম প্রভৃতি অনেক রােগের প্রতিরােধক ব্যবস্থা উদ্ভাবিত হইয়াছে। | আজকাল কতকগুলি রোগ-প্রতিরােধক চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে অনাক্রম্যতা সৃষ্টির ব্যবস্থা করা হইয়া থাকে। এই কারণেই এই সকল রােগে মৃত্যুর সংখ্যা যথেষ্ট হ্রাস পাইয়াছে। শরীর সুস্থ ও সবল রাখিবার উপায় হিসাবে অর্জিত অনাক্রম্যতা বিজ্ঞানের একটি শ্রেষ্ঠ অবদান। | গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য। অনাগারিক ধর্মপাল (১৮৬৪-১৯৩৩ খ্র) অনাগরিক ধর্মপাল অনিক যুগে সিংহলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জাতীয়তাবাদী এবং ধর্মীয় নেতা। একাধারে তিনি সমাজ-সংস্কারক, শিক্ষাবিং, লেখক এবং বাগ্মী। তিনি ১৮৬৪ খ্রীষ্টাব্দের ১৭ সেপ্টেম্বর সিংহলের কলম্বাে শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৩৩ খ্রীষ্টাব্দের ২৯ এপ্রিল বারাণসীর সারনাথে দেহরক্ষা করেন। তিনি ছিলেন কলম্বাের ধনী এবং অন্যতম শ্রেষ্ঠ। ব্যবসায়ী মুদালিয়র ডি. সি. হেওয়াবিতরনের জ্যেষ্ঠ পুত্র। সেন্ট টমাস স্কুলে তিনি শিক্ষালাভ করেন। সরকারি করণিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া তিনি শিক্ষাদপ্তরে যােগদান করেন, কিন্তু পরে বৌদ্ধধর্মের সেবার্থে চাকুরি ছাড়িয়া দেন। তিনি ১৮৯১ খ্রীষ্টাব্দে ভারতবর্ষে অবস্থিত বিভিন্ন । বৌদ্ধতীর্থগুলি পরিভ্রমণ করেন। বুদ্ধগয়ায় যাইয়া তিনি সেখানে বৌদ্ধদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার এবং ভারতবর্ষে বৌদ্ধধর্মের পুনরুজ্জীবনের ব্রত গ্রহণ করেন। এই
________________
অনাত্মবাদ বৎসরেই তাহার উদ্যোগে মহাবােধি সমাজের প্রতিষ্ঠা হয়। ১৮৯৩ খ্রীষ্টাব্দে শিকাগাের ধর্ম-মহাসভায় যােগদান করিয়া বৌদ্ধধর্মের প্রবক্তা হিসাবে তিনি প্রভৃত সুনাম অর্জন করেন। বৌদ্ধধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, জার্মানী, ফ্রান্স, ইটালী, থাইল্যাণ্ড, ব্ৰহ্মদেশ, চীন, | জাপান এবং আরও অনেক দেশ পরিভ্রমণ করিয়াছিলেন। | তাহার চেষ্টায় গয়া, বুদ্ধগয়া এবং সারনাথে পান্থশালা নির্মিত হয়। সারনাথে একটি শিল্প-বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার | কৃতিত্বও তঁাহার। এতদ্ব্যতীত তিনি কলিকাতা ও সারনাথে বৌদ্ধ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। তাহারই চেষ্টায় লণ্ডনে বৌদ্ধ মিশন স্থাপিত হয়। প্রথম মহাযুদ্ধের সময়ে | বৃটিশ সরকার কর্তৃক তিনি অন্তরীণ হন। অনাগরিক | ধর্মপাল ভারতবাসীর নৈতিক, আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং শিক্ষা ও শিল্প বিষয়ক জাগরণের জন্য অবিরাম সংগ্রাম করিয়া গিয়াছেন। তাহার প্রাপ্য পৈতৃক সম্পত্তির | সাহায্যে তিনি অনাগরিক ধর্মপাল ট্রাস্ট’ -এর প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৩১ খ্রীষ্টাব্দে সারনাথে তিনি বৌদ্ধভিক্ষু ব্ৰত গ্রহণ করেন এবং এই স্থানেই হার দেহাবসান হয়। মৃত্যুর পূর্বে তিনি বলিয়াছিলেন যে, ভারতে বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য তাহাকে আরও পঁচিশবার এই দেশে জন্মগ্রহণ করিতে হইবে। দেবপ্রিয় বলিসিংহ অনাত্মবাদ একটি দার্শনিক মতবাদ। ইহা নৈরাত্মবাদ নামেও পরিচিত। চার্বাক এবং বৌদ্ধ দার্শনিকগণ এই মতের সমর্থক। তাহাদের মধ্যে একাধিক বিষয়ে মতবিরােধ বিদ্যমান ; তথাপি তাহারা কোনও না কোনও প্রকারে আত্মার অস্তিত্ব অস্বীকার করিয়াছেন।
অনাত্মবাদের আলােচনায় প্রথমে আত্মা বিষয়ে নৈয়ায়িকগণের মত বর্ণনা করা যাইতে পারে। কারণ, এই মত সাধারণ মানুষের সহজ বিশ্বাসের অনুরূপ। ন্যায়মতে প্রতিটি মানুষ দেহ এবং আত্মার মিলনে গঠিত। ঘট ও পট যেমন দ্রব্য এবং রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ যেমন তাহাদের গুণ, সেইরূপ দেহ ও আত্মা দুইটিই দ্রব্য এবং তাহাদের দুইটিতেই বিভিন্ন গুণ ও কর্ম বর্তমান। কোনও ব্যক্তির সত্তার সম্পূর্ণ পরিচয় দিতে হইলে সেই ব্যক্তির দেহ এবং দেহ হইতে ভিন্ন আত্মার উল্লেখ করিতে হয়। কোনও ব্যক্তির জ্ঞান, ইচ্ছা, প্রযত্ন প্রভৃতির আশ্রয় তাহার দেহ হইতে পারে না। অতএব ইহাদের আশ্রয়রূপে দেহাতিরিক্ত কোনও দ্রব্য স্বীকার করিতে হয় এবং সেই দ্রব্যই আত্মা- কারণ ‘অহম্ জ্ঞানের বিষয়রূপেও