পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
অন্ধ্র প্রদেশ
অন্ধ্র প্রদেশ

পরিচিত। ভারতী ব্রেইল পদ্ধতি অনুযায়ী উপযুক্ত পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের এবং শিক্ষাপযােগী আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি তৈয়ারির জন্য দেরাদুনে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হইয়াছে। দেরাদুনে বয়স্ক অন্ধদের সর্বভারতীয় শিক্ষণকেন্দ্র আছে। অন্ধদের শিক্ষার সুবিধার জন্য কিছু কিছু বৃত্তিদানের ব্যবস্থাও আছে। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে অন্ধদের শিক্ষার জন্য চারিটি বিদ্যালয় আছে। ইহাদের মধ্যে কলিকাতা অন্ধবিদ্যালয় অন্যতম। বিদ্যালয়গুলি প্রধানত: আবাসিক। ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও অন্ধশিক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা

আরতি দাশ

অন্ধপ্রদেশ দ্রাবিড় ভাষাগােষ্ঠীর অন্তর্গত তেলুগু যাঁহাদের মাতৃভাষা, তাহারা এখন আপনাদিগকে এবং আপনাদের দেশকে ‘আ’ বলিয়া থাকেন। কিন্তু প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে ও লেখমালায় ‘অন্ধ’ নাম সুপ্রচলিত। বাংলায় তেলুগু ভাষাকে ‘তেলেগু এবং তেলুগুভাষীদিগকে কখনও কখনও ‘তেলিঙ্গা’ বলা হয়। মধ্যযুগের সংস্কৃত গ্রন্থ ও লেখাদিতে এই জাতি এবং দেশ বুঝাইতে অনেক সময় তিলিঙ্গ, তেলঙ্গ, তৈলঙ্গ, ত্ৰিলিঙ্গ প্রভৃতি নাম ব্যবহৃত হইত। ১৩৫৮ খ্ৰীষ্টাব্দের একখানি তাম্রশাসনে বলা হইয়াছে যে, মহারাষ্ট্রের পূর্বে, কান্যকুজের দক্ষিণে, কলিঙ্গের পশ্চিমে এবং পাণ্ড্যদেশের উত্তরে তিলিঙ্গদেশ অবস্থিত। তৈলঙ্গ ব্রাহ্মণেরা পঞ্চদ্রাবিড় সংজ্ঞক ব্রাহ্মণগােষ্ঠীর একটি প্রধান শাখা। | ঐতরেয় ব্রাহ্মণের একটি কাহিনীতে বলা হইয়াছে যে, মহর্ষি বিশ্বামিত্রের অভিশাপের ফলে তাহার কতকগুলি পুত্রের অপত্যগণ ‘অন্ধ্র প্রভৃতি নীচজাতিতে পরিণত হয় এবং আর্যদেশের প্রান্তভাগে বাস করিতে থাকে। ইহা হইতে মনে হয় যে, অতি প্রাচীন কালে অন্ধ্রজাতি আর্যাবর্তের দক্ষিণে বিন্ধ্যপর্বতের সন্নিকটে বাস করিত। পরে তাহার। ধীরে ধীরে দক্ষিণ দিকে সরিয়া গিয়াছিল। খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে মৌর্যসম্রাট অশােক ( আনুমানিক ২৬৯-২৩২ খ্রীষ্টপূর্ব ) তদীয় লেখাবলীতে মগধ সাম্রাজ্যের অন্তর্গত উল্লেখযােগ্য জাতিসমূহের মধ্যে অন্ধ্রদিগের নাম করিয়াছেন।

আনুমানিক ১৮৭ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে মৌর্য বংশ উচ্ছেদ করিয়া শুঙ্গবংশীয় ব্রাহ্মণগণ মগধ সাম্রাজ্য অধিকার করেন। উহার ১১২ বৎসর পর কাধ্যায়ন বংশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। কথায়ন বংশ ৪৫ বৎসর রাজত্ব করিবার পর খ্ৰীষ্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীর উত্তরাধে অজাতীয় সিমুক দক্ষিণাপথ

ও মালব অঞ্চলে শাতবাহন রাজবংশের অধিকার | প্রতিষ্ঠিত করেন। সিমুক প্রথমে শেষ কাধ্যায়নরাজ সুশর্মার সামন্ত ছিলেন। শতবাহনেরা আপনাদিগকে ‘দক্ষিণাপথেশ্বর’ বলিতেন। তাহাদের রাজধানী ছিল গােদাবরী নদীর তীরবর্তী প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ আধুনিক মহারাষ্ট্র প্রদেশের ঔরঙ্গাবাদ জেলার অন্তর্গত পৈঠন। ব্রাহ্মণরক্ত সংস্রবের জন্য শাতবাহনরাজগণ ব্রাহ্মণত্বের দাবি করেন; কিন্তু গোড়া সমাজপতিরা তাহাদিগকে শূদ্র মনে করিতেন। সিমুকের ভ্রাতুস্পুত্র প্রথম শতকর্ণি মহাপরাক্রান্ত নরপতি ছিলেন। উত্তরে মালব হইতে দক্ষিণে কৃষ্ণা নদী পর্যন্ত তাহার সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল। তিনি রাজসূয় এবং অশ্বমেধ যজ্ঞের অনুষ্ঠান করিয়াছিলেন। খ্ৰীষ্টীয় প্রথম শতাব্দীর মধ্যভাগে শাতবাহন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে বৈদেশিক শক রাজগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ১২০-১২৪ খ্রীষ্টাব্দে ক্ষহরাত বংশীয় শক নরপতি নহপানের সামন্ত ঋষভদত্ত উত্তর-মহারাষ্ট্রের নাসিক-পুনা অঞ্চল শাসন করিতেছিলেন। নহপান স্বয়ং সম্ভবতঃ কুষাণ সম্রাটগণের সামন্ত ও পশ্চিমভারতের শাসনকর্তা ছিলেন। কিন্তু শাতবাহন বংশীয় গৌতমীপুত্র শাতকণি ( আনুমানিক ১০৬-১৩০ খ্রী) নহপানকে পরাজিত ও নিহত করিয়া উত্তরে মালব ও কাঠিয়াবাড় পর্যন্ত অধিকার করেন। পূর্বতন শাতবাহন রাজ্যের উত্তরাংশে গৌতমীপুত্রের | অধিকার দীর্ঘকাল স্থায়ী হয় নাই। নহপানের পতনের পর ১৩০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যেই কাদমক বংশীয় শকরাজ চষ্টন | এবং তদীয় পপৗত্র ও সহকারী রুদ্রদাম। গৌতমীপুত্রের রাজ্য আক্রমণ করেন। রুদ্রদামার হস্তে বারংবার পরাজিত | হইয়া গৌতমীপুত্র শতকণি শকরাজের কন্যার সহিত স্বীয় পুত্রের বিবাহ দিয়া সন্ধি করিতে বাধ্য হন। কেবলমাত্র নাসিক-পুনা অঞ্চলে শাতবাহন অধিকার বজায় রহিল। পশ্চিম ভারতের অন্যান্য জনপদে রুদ্রদামার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হইল। কাদমকেরা উজ্জয়িনী নগরীতে রাজধানী | স্থাপন করিয়া পশ্চিম ভারত শাসন করিতে থাকেন। কিন্তু গৌতমীপুত্রের উত্তরাধিকারীগণের আমলে উত্তরে | শক রাজ্যের কিয়দংশ এবং দক্ষিণে কৃষ্ণা-গুন্টর অঞ্চলে শাতবাহন অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। তাহারা ব্রাহ্মণ্য| ধর্মাবলম্বী হইলেও অমরাবতী ও নাগার্জুনি কোণ্ডার বৌদ্ধ বিহারসমূহের পৃষ্ঠপােষক ছিলেন।

খ্ৰীষ্টীয় তৃতীয় শতাব্দীর প্রথম ভাগে শাতবাহন বংশের | পতন ঘটিলে সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যের উদ্ভব হয়। ইহাদের মধ্যে নাগার্জুনি কোণ্ডা উপত্যকায়
৬১