পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

অন্ধকূপ-হত্যা অবরােহী, সিগময়েড প্রভৃতি অংশে বিভক্ত। দৈর্ঘ্যে প্রথমাংশটি প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার, দ্বিতীয়াংশটি প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার, তৃতীয়াংশটি প্রায় ২৫ সেন্টিমিটার। বৃহদন্ত্রের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর গ্রন্থিগুলি কেবল শ্লেষ্ম। ক্ষরণ করে এবং কোনও এজাইম ক্ষরণ করে না। অবশ্য কোলােন-এ বিভিন্ন জীবাণু সেলুলােজ প্রভৃতি শর্করা ও প্রােটিনকে ভাঙিতে পারে ও কয়েকটি ভিটামিনও প্রস্তুত করিতে পারে। এতদ্ব্যতীত বৃহদন্ত্র খাদ্য হইতে জল শােষণ করিয়া লয়। ফলে খাদ্যের অপাচ্য অংশগুলি জমাট বাঁধিয়া মলের সৃষ্টি করে। বৃহদন্ত্র হইতে ইহা মলনালীতে যায়। মলনালী প্রায় ১০ হইতে ১২ সেন্টিমিটার দীর্ঘ। এখান হইতে মল মলদ্বার দিয়া দেহের বাহিরে যায়। মলদ্বারটি প্রায় ২৫ হইতে ৩৫ সেন্টিমিটার দীর্ঘ ও একটি পেশীবন্ধনীর দ্বারা সুরক্ষিত। অজিতকুমার রায়চৌধুরী

অন্ধকূপ-হত্যা হলওয়েল-বর্ণিত হত্যাকাণ্ড। তাহার 760 ( Narrative of the Black Hole atr ) সিরাজুদ্দৌলা ফোর্ট উইলিয়াম অধিকার করিবার পর ১৭৫ ৬ খ্রী ২০ জুন কলিকাতার ১৪ ৬ জন ইংরেজ অধিবাসীকে ‘অন্ধকূপ’ নামে পরিচিত ৫৪৯ সেন্টিমিটার ( ১৮ ফুট ) দীর্ঘ ও ৪৫২ সেন্টিমিটার ( ১৪ ফুট ১০ ইঞ্চি) প্রশস্ত এক ক্ষুদ্র কক্ষে সমস্ত রাত্রি আবদ্ধ করিয়া রাখেন। ফলে বন্দীদের মধ্যে ১২৩ জন শ্বাসরুদ্ধ হইয়া মৃত্যুমুখে পতিত হয়। কিন্তু পরবর্তী কালে ঐতিহাসিক অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় এই কাহিনীর সত্যতা এবং এই সম্পর্কে নবাবের দায়িত্বের বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করিয়াছেন। প্রথমতঃ ২০ জুন সন্ধ্যায় নবাবের সৈন্যবাহিনীর হস্তে ১৪৬ জন ইওরােপীয় বন্দী থাকা সম্ভব ছিল না, ইহা ইংরেজ লেখকদের প্রদত্ত বিবরণ হইতেই জানা যায়। দ্বিতীয়তঃ ২৬৭ বর্গফুট আয়তনবিশিষ্ট কক্ষে ১৪৬ জন ব্যক্তির স্থান সংকুলান কোনক্রমেই সম্ভব নহে। ভােলানাথ চন্দ্র ইহা পরীক্ষা করিয়া দেখাইয়াছিলেন। প্রকৃত পক্ষে ঐ সময়ে যুদ্ধজনিত বিশৃঙ্খলার ফলে ও শাসনতান্ত্রিক ব্যর্থতা এবং নথিপত্র খােয় যাওয়ার দরুন যাহারই মৃত্যু ঘটিয়াছে তাহারই নাম অন্ধকূপে নিহতদের তালিকাভুক্ত করা হয়। অধিকন্তু অন্ধকুপ নবাবের সৃষ্ট কোনও কারাকক্ষ নহে। ইংরেজরাই ঐ কক্ষে বন্দীদের আবদ্ধ রাখিত। যে সকল সৈন্য নবাবের সৈন্যবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করিয়াছিল, উহাদের কেহ কেহ মত্তাবস্থায় নবাবের সৈন্যদের আক্রমণ করায় তাহাদের আবদ্ধ করিবার

________________

অন্ধশিক্ষা প্রয়ােজন দেখা দেয়। এইরূপ বন্দীর সংখ্যাও ৬০ জনের অধিক হইতে পারে না। সম্ভবতঃ কয়েকজন বন্দী অবস্থায় মৃত্যুমুখে পতিত হয়। একজন মাত্র মহিলার এইরূপ | বন্দীদশা ঘটিয়াছিল। কিন্তু তিনি অক্ষত অবস্থায় মুক্তি পাইয়াছিলেন। অন্ধকূপ-হত্যার জন্য সিরাজুদ্দৌলা প্রত্যক্ষভাবে দায়ী ছিলেন এমন কোনও প্রমাণ নাই। নিহত ব্যক্তিদের স্মৃতিরক্ষাৰ্থ ডালহৌসি স্কোয়ারের উত্তর-পূর্ব কোণে অন্ধকূপের নিকটবর্তী স্থানে এক স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হইয়াছিল। পরবর্তী কালে সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলনের ফলে এই স্মৃতিস্তম্ভ অপসারিত হয়। সৌরীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য | অন্ধশিক্ষা নানাদেশের বহু শিক্ষাবিৎ বিভিন্ন উপায়ে অন্ধদের শিক্ষাদানের চেষ্টা করিয়াছেন। স্পেনদেশের ফ্রান্সিস্কো লুকাস কাঠের উপর খােদিত অক্ষর দ্বারা অন্ধশিক্ষার প্রয়াস পান। ইহা ছাড়া শক্ত কাগজ কাটিয়া অক্ষর তৈয়ারি করা প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতিও প্রচলনের প্রচেষ্টা হয়। ফরাসী দেশের লুই ব্রেইল (১৮০৯১৮৫২ খ্র) বাল্যকালে দুর্ঘটনায় অন্ধ হইয়া যান। পরবর্তী জীবনে তিনি অন্ধশিক্ষার যে পদ্ধতি আবিষ্কার করেন তাহাকে ব্রেইল-পদ্ধতি বলা হয়। ইহাতে কাগজে ছয়টি উন্নত বিন্দুর সমাহারে অক্ষর, ছেদচিহ্ন ও সংখ্যা প্রভৃতি লিখিত হয়। বিশেষভাবে প্রস্তুত সচ্ছিদ্র একটি ধাতব পাতের সাহায্যে পঙক্তি ঠিক রাখিয়া নরম কাগজে ধাতব লেখনীর দ্বারা এই পদ্ধতিতে লিখিতে হয়। ইহা ছাড়া বিশেষভাবে প্রস্তুত টাইপরাইটার যন্ত্রের সাহায্যেও ব্রেইল । পদ্ধতিতে লেখা যায়। এই পদ্ধতিতে লিখিত ও মুদ্রিত পুস্তক গুলি অঙ্গুলির সাহায্যে অনুভব করিয়া পড়িতে হয়। এই পদ্ধতি পরিমার্জিত হইয়া বর্তমানে সকল সভ্যদেশেই গৃহীত হইয়াছে। একদিকে ব্রেইল-পদ্ধতির দ্বারা যেমন অন্ধের সম্মুখে বহির্জগতের জ্ঞান-বিজ্ঞানের ভাণ্ডার উন্মুক্ত করিয়া দেওয়া হইয়াছে, অপর দিকে তেমনি বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষার দ্বারাও অন্ধ ব্যক্তির জীবিকার্জন সহজ করা হইয়াছে।

ভারতে অন্ধশিক্ষার গােড়াপত্তন করেন প্রধানতঃ | ইওরােপীয় মিশনারীগণ। স্বাধীনতা লাভের পরে ভারত সরকারের শিক্ষাবিভাগ অন্ধশিক্ষার ব্যবস্থা ও প্রসারে উদ্যোগী হন। ভারত সরকারের উদ্যোগে ও ইউনেস্কোর সহায়তায় ১৯৫১ খ্রীষ্টাব্দে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় ব্ৰেইলপদ্ধতির প্রচলন করা হয়। ইহা ‘ভারতী ব্রেইল’ নামে
৬০