পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১০৬
ভারতবর্ষ।

তাহার সন্তানদের গৃহপ্রত্যাবর্ত্তনের প্রতীক্ষা করিয়া আছে; গৃহে আমাদিগকে ফিরিতেই হইবে, বাহিরে আমাদিগকে কেহ আশ্রয় দিবে না এবং ভিক্ষার অন্নে চিরকাল আমাদের পেট ভরিবে না।



অত্যুক্তি।

 পৃথিবীর পূর্ব্বকোণের লোকেরা, অর্থাৎ আমরা, অত্যুক্তি অত্যন্ত ব্যবহার করিয়া থাকি; আমাদের পশ্চিমের গুরুমশায়দের কাছ হইতে এ লইয়া আমরা প্রায় বকুনি খাই। যাঁহারা সাত-সমুদ্র পার হইয়া আমাদের ভালর জন্য উপদেশ দিতে আসেন, তাঁহাদের কথা আমাদের নতশিরে শোনা উচিত। কারণ, তাঁহারা যে কেবল কথা বলিতে জানেন তাহা নহে—কি করিয়া কথা শোনাইতে হয়, তাহাও তাঁহাদের অবিদিত নাই। আমাদের কানের উপর তাঁহাদের দখল সম্পূর্ণ।

 আচারে-উক্তিতে আতিশষ্য ভাল নহে, বাক্যে-ব্যবহারে সংযম আবশ্যক, এ কথা আমাদের শাস্ত্রেও বলে। তাহার ফল যে ফলে নাই, তাহা বলিতে পারি না। ইংরেজের পক্ষে আমাদের দেশশাসন সহজ হইত না, যদি আমরা গুরুর উপদেশ না মানিতাম। ঘরে বাহিরে, এতদিনের শাসনের পরেও, যদি আমাদের উক্তিতে কিছু পরিমাণাধিক্য থাকে, তবে ইহা নিশ্চয়, সেই অত্যুক্তি অপরাধের নহে, তাহা আমাদের একটা বিলাসমাত্র।

 আসল কথা, সকল জাতির মধ্যেই অত্যুক্তি ও আতিশয্য আছে। নিজেরটাকেই অত্যন্ত স্বাভাবিক ও পরেরটাকেই অত্যন্ত অসঙ্গত বোধ


  • দিল্লিদরবারের উদ্যোগকালে লিখিত।