পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩১৭.djvu/১২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪শ বর্ষ, অষ্টম সংখ্যা । পোষ্যপুত্র। ७¢१ পোষ্যপুত্র। গড়ের মাঠের নির্জন রাস্ত ছাড়াইয়া একখানা গাড়ি আফিস কোয়ার্টারের জনহীন প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড বাড়িগুলাকে অতিক্রম করিয়া অল্পক্ষণেব মধ্যেই লোক চলাচল পূর্ণ আলোকিত হাওড়ার পুলের নিকট আসিয়া পড়িল,হঠাৎ সেই সময়ে স্তব্ধ শান্তি বিস্মিতনেত্রে বাহিরের পানে চাচিয়া দেখিল । সমস্ত পথটা দুজনেই নিস্তব্ধ হইয়া বসিয়াছিল, কাহারও সহিত একটি কথা পৰ্য্যস্ত কহে নাই, আসিবার সময়ে ও এই প্রকারে অtসিয়াছে কিন্তু সেবারে শান্তি সমস্ত পথটাই কাদিয়াছিল, এবারে সে কাদিতে পারে নাই । হেমেন্দ্র ও একবার চাহিয়া দেখিল, রাস্তার ধারে আলোকাধার হইতে অত্যুজ্জ্বল, তীব্র একটা আলোকের ছটা গাড়ির ভিতবকার অন্ধকার ভেদ কবিয়া তাহদের মুখে পড়িল ; হেমেন্দ্র ক্ষি প্রহস্তে দরজাটা বন্ধ করিয়া কেহ দিল । শান্তি সন্দিগ্ধনেত্রে সেই অন্ধকারের মধ্যে স্বামীর মুখের ভাব দেখিতে চেষ্টা করিয়া জিজ্ঞাসা কবিল ; "হাবড়া ষ্টেশনে নিয়ে এলে যে ?” হেমেন্দ্র উত্তর দিল না, যেন শুনিতেষ্ট পায় নাই এমনি করিয়া বধিয়া রহিল। শাস্তির বুকট। এবার একটা কি যেন নূতন আশঙ্কার আভাষে হঠাৎ ধড়াস্ করিয়া উঠিল, চঞ্চল ভাবে সে পিছনদিকের একটা খড়খড়ি টানিয়া আবার উৎকণ্ঠিতনেত্রে বাহিরের দিকে চাহিল। গঙ্গার জলে সহস্ৰ বিঘ্যভালোক জলিতেছে, অগণ্য নক্ষত্র এখানে প্রভাহীন, সাদা ও লাল ফুলে গাথা মালার মতন পশ্চাতে আলোকের শ্রেণী পড়িয়া রহিয়াছে। শাস্তি ব্যগ্রস্বরে বলিয়া উঠিল “গাড়োয়ানটা ভুল করেচে, আমাদের সেয়ালদায় না নিয়ে গিয়ে কাবড়ায় নিয়ে এলো”—হেমেন্দ্র এবারে ও কোন উত্তর করিল না । গাড়ি আসিয়া যথাস্থানে থামিলে দরজা খুলিয়া হেমেন্দ্র গাড়ি হইতে নামিয়া দাড়াইল । শান্তিকে নামিবার চেষ্টা বিরহিত দেখিয়া বলিল “নেবে এসে একখানা গাড়ি বোধ হচ্চে দাড়িয়ে রয়েছে ।” শান্তি নামিল না বরং গদির উপর একটু হইয়া বসিল । হেমেন্দ্রের ললাট মেঘাচ্ছন্ন হইয়াই ছিল, শাস্তির অবাধ্যতায় গভীর বিরক্তিতে তাহা আরো কুঞ্চিত হইয়া উঠিল ; তথাপি সংযতভাবে শাস্তির অঙ্গ স্পশ করিয়া ডাকিল “শান্তি গুন্‌চে। নেবে এসো” । শান্তি এবার দ্রুতকণ্ঠে বলিল “কোথায় আমায় নিয়ে যাচ্চ তা না বল্লে আমি নাববো না ।” শান্তির স্বরের দৃঢ়তায় ও কথার ধরণে হেমেন্দ্র প্রথমটা একটু থতমত খাইয়া গেল। তাহার মুখের উপরে এমন জোরের সহিত প্রতিবাদ করা যে কাহার ও পক্ষে সম্ভ । হইতে পাবে নাই, বিশেষতঃ শাস্তির মুখে এমন উদ্ধত স্বর সে একদিনমাত্র শুনিয়াছিল বটে কিন্তু সেদিনকার সে ভৎসন নারী হৃদয়ের উদ্যত অভিমানশ্রুরাশির মতনই প্রেমপুর্ণ, কিন্তু আজ তাহার মধ্যে একি কঠোরতা একি বিচারকের অলজঘ্য আদেশের কঠিন শক্ত