পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩১৭.djvu/১৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪শ বর্ষ, অষ্টম সংখ্যা । আমাদের এই অধঃপতিত সমাজের জন্ত র্তাহার চক্ষুতে যে অশ্রুর অভাব ছিল না তাহা স্পষ্টষ্ট প্রতীয়মান হয় । কবিতা হিসাবে সেগুলির স্থান খুব উচ্চে ন হইতে পারে— ভাবের নূতনত্বে, চিন্তার বিশালতায় তাহ। পরিণত মস্তিষ্কের উপযুক্ত না-ও হইতে পারে কিন্তু ভাই বলিয়া বাঙ্গলার জাভীয় সাহিত্য এগুলিকে কখনও উপেক্ষা করিতে পরিবে न' ।। নবযুগের পুণ্য মন্ত্ৰে নিৰ্জ্জীব বাঙ্গালা যে দিন সজীব ও চঞ্চল হইয়া উঠিল সেদিনও তাহাতে রজনীকাস্তের কৃতিত্ব বা প্রভাব কম ছিল না। নিত্য নুতন সঙ্গীতে তিনি মাতৃপূজার অর্ঘ্য রচনা করিয়া দিতেন আর সমগ্র বঙ্গদেশ তাহারই কণ্ঠের সহিত কণ্ঠ মিলাষ্টয়া সেই তীব্রতাহীন খাটি স্বদেশী উপহারে মাতৃচরণ অর্চনা কবিত। জীবনের শেষ মুহূৰ্ত্তে ও কবি র্তাহার দেশ মাতাকে বিস্মৃত কষ্টতে পারেন নাই। একনিষ্ঠ পুজক যেমন মৃত্যু কালে তাহার পাথরের ঠাকুবকে বিশ্বস্ত হস্তে সপিয়া যায় রজনীকান্তও তেমনি করিয়া মৃত্যুব পুৰ্ব্বে যথার্থ-উপযুক্ত সস্তানের হাতে তাহার দেশমাতাকে অপণ করিয়া গিয়াছেন। মৃত্যুবিবর্ণ কবির “কুমার, করুণানিধে, দেখো র’ল দেশ”—এ প্রার্থনা ভক্তের প্রার্থনা—সাধকের প্রার্থনা—একথা কেহই অস্বীকার করিতে পারিবে না। দীর্ঘদিন হইতে কান্ত কবি ক্যান্সার রোগে ভুগিতেছিলেন। এই রোগই তাহাকে আমাদের ভিতর হইতে কাড়িয়া লইয়া তিল তিল করিয়া মৃত্যুর মুখে তুলিয়া כי כל কবি রজনীকান্ত সেন । o দিয়াছে। প্রায় ছয় মাস পূর্বে র্তাহার নাক দিয়া নিশ্বাস লইবার ক্ষমতা রুদ্ধ হইয়া যায় । গলায় অস্ত্র করিয়া কৃত্রিম উপায়ে তাহাকে এতদিন জীবিত রাখা হইয়াছিল । তাহার চিরমুখর কণ্ঠ সেই দিন হইতেই চিরনিৰ্ব্বাক । আর গত ২৮শে ভাদ্র রাত্রি ৮—৩০ মিনিটের সময় তাহার বুকের স্পন্দন ও চিরদিনের জন্ত থামিয়া গিয়াছে। অনাহারই কান্ত কবির জীবন নাটকের শেষ অঙ্কের যবনিকা এত সত্বর টানিয়া দিয়াছে । কবি র্তাহার জীবনের শেষ অঙ্কে, অমৃত আনন্দময়ী, অভয় এবং বিশ্রাম এই পুষ্প চতুষ্টয়ে তাহার চিরারাধ্যা বীণাপাণির পূজার শেষ অর্ঘ্যরচনা করিয়া গিয়াছেন ।—যে মায়ের সাধনায় তাহার সমস্ত জীবন ব্যয়িত হুইয়াছে সেই মায়ের পূজা করিতে করিতেই তিনি মায়ের কোলে মিশিয়া গিয়াছেন । বাঙ্গালীর গীতি কবিতায় রজনীকাস্তের স্থান কোথায় তাহ নির্দেশের সময় এখনও আসে নাই । কবে আসিবে আমরা তাস্থাও বলিতে পারি না ! আমাদের শোকসন্তপ্ত হদয় কেবল এই মাত্র বলিতে পারে যে, তিনি আমাদের কবি—সমাজেব কবি—-বাঙ্গলার কবি ছিলেন—তিনি যেখানেক্ট থাকুন সেখান হইতেই আমাদের ভাক্ত প্রীতি ভালবাসাব অর্ঘ্য গ্রহণ করিবেন। “Thy thoughts, when thou art gone, Love itself shall slumber on.” তুমিও যবে মরিবে তবে আমাদের এবুকে চিরাভিনব স্মৃতিটি তব ঘুমায়ে রবে স্বথে । ঐহেমেন্দ্রলাল রায় ।