পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩১৭.djvu/১৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

و o ۹ সর্পাকৃতি পথ, সুবিশাল হ্রদ গুচ্ছ, মৃদুর বিস্তৃত শুামল ক্ষেত্র, সরল মুদীর্ঘ পত্র মুকুট শোভিত, স্বরূপ সুন্দর নীল নির্যাস তরুসমাচ্ছন্ন স্তর বিগুস্ত পাহাড়পুঞ্জ, তৎগাত্রস্থিত রক্তবর্ণ খোলার ছাদবিশিষ্ট কুটীরাবলী ও অট্টালিকাসমূহ সকলই মনোহর। অধিক তর মনোহারী কেননা মেঘহীন শুভ্র মুনিৰ্ম্মল দিন, রৌদ্রদ্রব মুখকর শীত, বসন্তমধুর সুশীতল সমীরণ এবং স্বাস্থ্যপূর্ণ অনায়াস ভ্রমণ এই দৃপ্ত সৌন্দৰ্য্যকে আমাদের প্রকৃত উপভোগের মধ্যে আনিয়া দেয় । হিমালয় দেবালয়, তাহার কুর্ভেদ্য দুর্গম্য গুঢ় গম্ভীর রহস্তপূর্ণ সৌন্দর্য্যকে মানুষ সম্পূর্ণভাবে আপনার করিতে পারে না,—নীলগিরি মর্ত্যে যেন মানব উপভোগ্য নন্দনকানন । অন্তত দারজিলিং হইতে দূরে—বহুদূরে তাহার সৌন্দৰ্য্য যখন মানসনেত্রে অদৃশু, অপ্রত্যক্ষ, অস্পষ্ট, কাল্পনিক সামগ্ৰী, তপন নীলগিরির প্রত্যক্ষ, মুদৃশু, স্বগন্ধ, স্ববসন্ত উপভোগ করিতে করিতে আমার এইরূপ মনে হইয়াছিল । ইংরাজিতে যাহাকে ব্লগম বলে আমি তাহাকেই নীলনির্যাস বলিয়াছি । ইহা তালগাছের ন্তায় সরল সুদীর্ঘ কিন্তু ইহার গাত্রস্থিত সুদীর্ঘ সরু সরু বিরল শাখায় তেজপত্রের দ্যায় সুদীর্ঘ পত্রাবলী অলিম্বিত । শিরোভাগ পত্র ঘন, পত্রগুচ্ছ মুকুটের মত শোভাময়। এই বৃক্ষরাশি শৈশবে ও যৌবনে ভিন্নরূপ । শৈশবাবস্থায় ইহার পাতা লেবু পাতার স্তায় চ্যাপ্টা এবং আকাশের মত মুনীল আর বড় গাছে ইহা শুীমকান্তিময়। তরুণ ও বয়স্ক বৃক্ষকে একত্র পাশাপাশি দেখিলে বিশ্বাসই হয় না যে ইহারা ভারতী । পৌষ, ১৩১৭ একই জাতি। এই শিশু, কিশোর ও বয়স্ক তরুর সমাবেশে, শুাম ও নীলকাস্তির অপরূপ সম্মিলনে উৎকামনের বনস্থলী একদিকে বিচিত্র শোভাপন্ন অদ্যদিকে মুগন্ধে অমোদিত । এই সুগন্ধপত্রবিশিষ্ট নীলনির্যাস তরু স্বাস্থ্যকবিতায় এবং জলশোষণ গুণে নীলগিরির প্রধান ভূষণস্বরূপ। গুনা যায় উৎকামদের মাটীতে জলীয়তা পূৰ্ব্বে এত অধিক মাত্রায় ছিল যে রাস্তার যেখানে সেখানে খুড়িলেই চোরানদীর মত জল পাওয়া যাইত। পাহাড়ে যেখানে সেখানে নিঝর বস্থিত। রাস্তাঘাট গাড়ী ঘোড়ার ঘর্ষণ অধিক দিন সহ করিতে পারিত ন – শীঘ্রই ভাঙ্গিয়া চুরিয়া খারাপ হইয়া যাইত । কিন্তু বহুপরিমাণে নীলনির্যাসতরু রোপিত হওয়াও এই পাহাড়ের মাটী এত কঠিন ও নির্জল হইয়া পড়িয়াছে যে, এখন এখানে একরূপ জলাভাব বলিলেই হয়। মাটী খুড়িলে ত আর জল ওঠেই না, সহরের ব্যবহারের জন্ত রক্ষিত সরোবর হইতে কলে জল আসে । নীল নির্যাস তরু সজিনা গাছের ন্যায় অমর, মুড়াইয়া কাটিয়া ফেল, আবার মুল হইতে শাখা উঠিবে। ইহার শিকড়ে জল শোষণ করে পত্রে তারপিন তেল হয় । এ দেশে লোকের সর্দি হইলে ইহার পাতা জলে সিদ্ধ করিয়া সেই জলে স্নান করে । সহরের আশে পাশে যে সকল প্রাকৃতিক অরণ,ভূমি রক্ষিত সেখানে নীল নির্যাসের গাছ অপেক্ষাকৃত বিরল, অন্তান্ত নানাজাতীয় বন্তগাছেরই প্রাদুর্ভাব অধিক । এই সকল অরণ্যকে এখানে সোলা বলে । সোলায় অনেক পরিমাণে হিমালয়ের প্রকৃতি বিরাজিত।