পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩১৭.djvu/২২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪শ বর্ষ, নবম সংখ্যা । চয়ন—চন্দ্রলোক । ዓጽእ চন্দ্রলোক । এই বঙ্গদেশের সাহিত্যে চন্দ্রদেবের প্রভাব অপরিসীম । বর্ণনায়, উপমায়, বিচ্ছেদে, মিলনে,— অলঙ্কারে, অনুপ্রাসে,—সুধাকর, হিমাংশু, শশাঙ্ক, কলঙ্ক, প্রভৃতি নহিলে কিছুতেই চলে না। কিন্তু এই বিংশ শতাব্দীতে এইরূপে কেবল সাহিত্য কুঞ্জে লীলাখেলা করিয়া, চক্সের নিস্তার নাই। বিজ্ঞান দৈত্য সে পথ ঘেরিয়া বসিয়া আছে । যখন অভিমনু শোকে, ভদ্রাঞ্জন অত্যন্ত কাতর, তথম র্তাহাদিগের প্রবোধীর্থ কথিত হইয়াছিল যে, অভিমনু্য চন্দ্রলোকে গমন করিয়াছেন । আমরাও যখন নীলগগন সমুদ্রে এই সুবর্ণের দীপ দেখি, তখন মনে করি, বুঝি এই সুবর্ণময় লোকে সোনার মানুষ সোনার থালে সোনার মাছ ভাজিয়া সোনার ভাত খায়, হীরার সরবত পান করে, এবং অপূৰ্ব্ব পদার্থের শয্যায় শয়ন করিয়া স্বপ্নগুস্ত নিদ্রায় কাল কাটায়। বিজ্ঞান বলে, তাহা নহে—এ পোড়া লোকে যেন কেহ যায় ন—এ দগ্ধ মরুভূমি মাত্র । বালকের শৈশবে পড়িয়া থাকে, চন্দ্র উপগ্রহ। কিন্তু উপগ্রহ বলিলে, সৌরজগতের চন্দ্রের প্রকৃত সম্বন্ধ নির্দিষ্ট হইল না । পৃথিবী ও চন্দ্র যুগলগ্রহ। উভয়ে এক পথে, একত্র স্বৰ্য্য প্রদক্ষিণ করিতেছে— উভয়েই উভয়ের মাধ্যাকর্ষণ কেন্দ্রের বশবৰ্ত্তী—কিন্তু পৃথিবী গুরুত্বে চন্দ্রের একাশিগুণ, এজন্ত পৃথিবীর আকর্ষণী শক্তি চন্দ্রপেক্ষ এত অধিক, যে সেই যুক্ত আকর্ষণে কেন্দ্র পৃথিবীস্থিত ; এবং এজন্যই চন্দ্র পৃথিবীর প্রদক্ষিণকারী উপগ্রহ। সাধারণ পাঠকে বুঝিবেন, যে চন্দ্র একটা ক্ষুদ্রতর পৃথিবী ; ইহার ব্যাস ১০৫• ক্রোশ ; অর্থাৎ পৃথিবীর ব্যাসের চতুর্থাংশের অপেক্ষা কিছু বেশী । এই ক্ষুদ্র পৃথিবী আমাদিগের পৃথিবী হইতে এক বিংশতি সহস্ৰ ক্রোশ—ত্রিশ সহস্ৰ যোজন মাত্র। গাগনিক গণনায় এ দূরত্ব অতি সামান্ত—এ পাড়া ও পাড়া মাত্র। ত্ৰিশটা পৃথিবী গায় গায় সাঙ্গাইলে চক্সে গিয়া লাগে । চন্দ্ৰ পৰ্য্যন্ত রেলওয়ে যদি থাকিত, তাহা হইলে ঘণ্টায় বিশ মাইল বেগে, দিন রাfত্র চলিলে, পঞ্চাশ দিনে পৌছান যাইত । হতরাং আধুনিক জ্যোতির্বিদগণ চন্দ্রকে অতি নিকটবৰ্ত্তী মনে করেন । র্তাহাদিগের কৌশলে এক্ষণে এমন দূরবীক্ষণ নিৰ্ম্মিত হইয়াছে যে চন্দ্রাদিকে চক্ষু দ্বারা আমরা যত বড় দেখি সেই দুরবাণে তাহার অপেক্ষ ২৪• • গুণ বৃহত্তর দেখায় । ইহার ফল এই দাড়াইয়াছে, যে চন্দ্র যদি আমাদিগের নেত্র হইতে পঞ্চাশং ক্রোশমাত্র দূরবত্তী হইত, তাল হইলে আমরা চন্দ্রকে যেমন স্পষ্ট দেখিতাম, এক্ষণেও ঐ সকল দূরবীক্ষণ সাহায্যে সেইরূপ স্পষ্ট দেখিতে পাই । চন্দ্র যপি মেমারি ষ্টেশনে আসিয়া বাস করিতেন, তাহা হইলে কলিকাতা বাণীরা তাহীকে যেমন স্পষ্ট দেখিতেন, ত্রিংশৎ সহস্র ষোজন দূরবত্তী চন্দ্রকে জ্যোতিৰ্ব্বিদেরা এক্ষণে তেমনি দেখিতেছেন । এইরূপ চাফুষ প্রত্যক্ষে, চন্দ্ৰ পাষাণময়, আগ্নেয়গিরি পরিপূর্ণ, একটি সুবৃহৎ জড়পিণ্ড। তাহার কোথাও অত্যুন্নত পৰ্ব্বতাবলী—কোথাও গভীর গহ্বররাজি । আমরা পৃথিবীতে দেখি যে যাহা রৌদ্রদীপ্ত, তাহাই দূর হইতে উজ্জ্বল দেখায়! চন্দ্রও রৌদ্র প্রদীপ্ত বলিয়৷ উজ্জ্বল। এবং যে স্থানে রৌদ্র লাগে না সে স্থান উজ্জলতা প্রাপ্ত হয় না। চন্দ্রের কলায় কলায় হ্রাস বৃদ্ধি এই কারণেই খটিয়া থাকে। চন্দ্রের যে স্থান উন্নত সেই স্থানেই প্রচুর পরিমাণে রৌদ্র লাগে বলিয়া—আমরা তাহ অতু্যচ্ছ্বল দেখি—যে স্থানে রৌদ্র প্রবেশ করে না—সে স্থান গুলিই "কলঙ্ক”— অথবা “মৃগ”—প্রাচীনদিগের মতে সেই গুলিই "কদমতলায় বুড়ী, চরকা কাটিতেছে।" চন্দ্রের বহির্ভাগের এরূপ সুক্ষ্মামুহুঙ্ক অনুসন্ধান হইয়াছে যে তাহার ফলে এখন চন্দ্রের উৎকৃষ্ট মানচিত্র প্রস্তুত। তাহার পর্বতাবলী ও প্রদেশ সকল সেই মানচিত্রে বিশেষ বিশেষ নামে পরিচিত এবং তাছার পর্বত্ত