পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩১৭.djvu/২২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪শ বর্ষ, নবম সংখ্যা । চয়ন— প্রতিহিংসা । ዓ©ö প্রতিহিংসা । ( গল্প ) আজ বিচারালয় লোকে লোকারণ্য । সারাদিন ধরিয়া সেই বিপুল জনতা কঠোর উৎকণ্ঠায় উদগ্রীব হইয়া বাদী ও প্রতিবাদী পক্ষের দীর্ঘ কাহিনীর প্রত্যেক কথাটিকে যেন সাগ্রহে গ্রাস করিতেছিল। এতক্ষণে জুরি তাহদের বিচার নিম্পত্তির জন্ত বিচার গৃহ ত্যাগ করিয়া নেপথ্যে গমন করিলেন দেখিয়া, সমাগত জনমণ্ডলী একটু বিশ্রামের অবসর লাভ করিল। এতগুলি উদ্বিগ্ন মুখের মধ্যে কেবল একখানি মুখ নিতান্তই নিরূদ্বিগ্ন স্থিব । সে মুখ সেই কাঠগড়ার মধ্যে শৃঙ্খলাবদ্ধ অভিযুক্ত অপরাধীর । একটা শ্রান্তি ও সন্দেহের কালিম চিহ্ন সেখানে এখনও স্পষ্টই প্রকাশ পাইতেছে সত্য, কিন্তু ইতিপূৰ্ব্বে সেখানে নৈরাণ্ডের ষে একটা নিবিড় ছায় দেখা গিয়াছিল এখন তাহা অপস্থত হইয়াছে, —এখন তাহাকে দেখিলেই মনে হয় সে অদৃষ্ট স্রোতে আত্মোৎসর্গ করিয়াছে, যেন এতক্ষণে বুঝিয়াছে ষে আজ ভাগ্যদেবীর সকল শক্তিই তাহার বিপক্ষ,—এই বিষম সংগ্রামে তাহার পরাজয় অনিবাৰ্য্য । এতক্ষণ সে আপনার নির্দোষিত প্রমাণ করিবার জন্ত প্রাণপণ সংগ্রাম করিয়াছে ; তাহার বিরুদ্ধে যে সকল অকাট্য প্রমাণ প্রদর্শিত হইয়াছে তাহার প্রত্যেকটির বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ করিয়া সে বার বার বলিয়াছে যে সে তাহার প্রভুর অর্থ কখনই অপহরণ করে নাই,—নিশ্চয়ই কোনও অজ্ঞাত ব্যক্তি এই কৰ্ম্ম করিয়া থাকিবে । q এই স্থলে তাঁহার বিরুদ্ধে অভিযোগের একটা বিবরণ দেওয়া আবশুক। এই ব্যক্তি ন্যাথাল কারাষ্টন নামক এক ধনাঢ্য ব্যক্তির নিকট কৰ্ম্ম করিত । দ্যtথানের অলঙ্কার বন্ধক রাখিয়া টাকা ধার দেওয়া ব্যবসা ছিল । কিন্তু অল্পদিন পূর্কে কতকগুলি বহুমূল্য অলঙ্কার বন্ধক রাখিয়া এক ব্যক্তি র্তাহার নিকট হইতে কিছু টাকা ঋণ লইয়া যায়। কিছুদিনের মধ্যেই সেই অলস্কারগুলি চুরি যায় এবং পরে অন্বেষণে সেগুলি র্তাহার সেক্রেটারির পোর্টমাণ্টে হইতে বাহির হইয়াছে। কেবল তাহাই নহে, সে যখন লুকাইয়া পলায়ন চেষ্টা করিতেছিল তখন অলঙ্কার সমেত ধরা পড়িয়াছে। এবং অলঙ্কার গুলি যে কি প্রকারে তাহার দ্রব্যের মধ্যে আসিল উইল ভেয়ার তাহার কোনই সদুত্তর দিতে পারে নাই । জুরি বিচাব গৃহ ত্যাগ করিবার পরেই বিচারক তাহার আপন প্রকোষ্ঠে প্রস্থান করিলেন। গৃহ মধ্যে প্রবেশ করিয়া বিচারক থর্ণ চেয়ারে হেলিয়া বসিয়া পড়িলেন, আজ কেমন একটা অভিনব ক্লাস্তি আসিয়া তাহাকে অভিভূত করিয়াছে ! একটা যেন কি অজ্ঞাত বেদন অাজ তাহার অন্তরের সুপ্ত তন্ত্রীকে আঘাত করিয়া বহুদিনের অতীত স্মৃতিকে জাগাইয়া তুলিয়াছে ! আঘাতটা কিসের তাহা তিনিই নিজেই স্থির করিতে অক্ষম ! সে দিন বিচারালয়ে সারাদিন ধরিয়া একটা যেন ছায়াময়ী মূৰ্ত্তি অতীত প্রেমের প্রেতাত্মার