পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩১৭.djvu/২২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ፃ¢ፀ ভারতী । পৌষ, ১৩১৭ ভায় তাহাকে ঘেরিয়া ঘুরিতেছিল,— পৃষ্ঠ স্থাপন করিয়া স্ফীত বক্ষে দীর্ঘনিশ্বাস যেন মৃত্যুর কঠোর নিম্পেযণে নিস্তব্ধ ত্যাগ করিতে লাগিল। “এথেল!” সহস৷ একটি কণ্ঠের ক্ষীণস্বর সারাদিন তাহার শ্রবণ মূলে মৃদ্ধগুঞ্জনে কি বলিতেছিল— তাহার অর্থ তাহার নিকট অবোধ্য। আজ এতদিন পরে সহসা বিচারগুহের পাষাণ দেয়াল বিদীর্ণ করিয়া আইনের নীরস তর্কজাল ভেদ করিয়া তাহার স্নিগ্ধযৌবন পরলোকগত পত্নীর পবিত্র স্মৃতিটি যে কি কারণে র্তাহার মানসপটে উদিত হইল এবং তাহার আকুলম্পর্শে মৰ্ম্মমধ্যে বহুদিনের বিস্কৃত বেদনাটিকে জাগাইয়া তুলিল তাহা তিনি কোনমতেই স্থির করিতে পারিলেন না। পত্নীর প্রেম ও সস্তানের স্নেহে একদিন র্তাহার হৃদয়টি সদ্যপ্রফুটিত পুষ্পের ন্তায় ছিল, — তেমনই স্নিগ্ধ, তেমনি সুন্দর, তেমনি সুগন্ধময় ! কিন্তু সে আজ বহুদিনের কথা । যেদিন ভীষণ ভূমিকম্পে দক্ষিণ আমেরিকার সমৃদ্ধ নগরী ধূলিসাৎ হইল এবং সেই সঙ্গে তাহার প্রিয়তমা পত্নী ও প্রাণপ্রিয় পুত্র চিরদিনের মত বিদায় লইল, সেইদিন হইতে তিনি আর সে মানুষ নাই ! এক্ষণে তিনি কঠোর, কর্কশ, নিৰ্ম্মম,—তাই আজ এই করুণ স্মৃতির আঘাতে তিনি আপনার প্রতি ক্রুদ্ধ হইতে লাগিলেন। সহসা কে দ্বারে আসিয়া আকুল আঘাত করিতে লাগিল, যেন প্রাণপণে সাক্ষাৎ ভিক্ষা করিতেছে! থর্ণ চকিতনেত্রে উদ্ধে দৃষ্টিপাত করিয়া দ্বার খুলিলেন। দেখিলেন সম্মুখে এক আলুলায়িতকুন্তলা, উৎকণ্ঠিত নয়ন, যুবতী রমণী বিনা আহবানে গৃহে প্রবশ করিয়া ত্বরিত করে দ্বার বন্ধ করিল—এবং দ্বারদেশে এই নামটি উচ্চারণ করিব থর্ণ বিস্মিত নেত্রে নবাগতার প্রতি এক দৃষ্ট্রে চাহিয়া রহিলেন, ক্রমে তাহার মুখের ভাব কঠোর হইয়া আসিল ! তিনি বার বার বলিয়া থাকেন যে বিচারালয়ের মধ্যে তিনি কেবলমাত্র আইনের দাস, তথায় বাহিরের কোনও ব্যক্তিরই তাছার সহিত সাক্ষাৎ প্রার্থনা করা কৰ্ত্তব্য নহে। ইহা জানিয়াও তাহার ভ্রাতুষ্পপুত্রীর পক্ষে এরূপ সময়ে এরূপ স্থলে র্তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে অtসা কোনমতেই সঙ্গত হয় নাই ! এই যুবতীটি তাহার পোষ্য কন্ত। শৈশবে পিতৃমাতৃহীন কস্তাটিকে লইয়। তিনি পালন করেন। দক্ষিণ আমেরিকার সেই বিয়োগাস্ত অভিনয়ের পরে তাহার অন্তর মধ্যে যেটুকু কোমল স্নেহ অবশিষ্ট ছিল, তাহার সবটুকুই তিনি এই কস্তাটির উপর সমর্পণ করিয়াছিলেন । যে তিরস্কারের উচ্ছাস তাহার ওষ্ঠাগ্রে আসিয়া উপস্থিত হইতেছিল, তাহা যুবতীর কাতর দৃষ্টি ও কম্পিত অধর দেখিয়া তৎক্ষণাৎ কণ্ঠ মধ্যেই মিলাইয়া গেল। “খুল্লতাত ! আপনার তাহাকে রক্ষা করিতেই হইবে - রক্ষা করিতেই হইবে ।” কথা কয়টি রুদ্ধ কণ্ঠের ক্ষীণ গুঞ্জনের স্থায় কষ্টে বাহির হইল। “এথেল, আমি মনে করিয়াছিলাম তুমি অমুস্থ বলিয়া গৃহে আছ। কিন্তু তুমি এ ভাবে এখানে উপস্থিত কেন, আর তোমার কথারই বা অর্থ কি ? কাহাকে রক্ষা করিব।”