পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩১৭.djvu/২৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪শ বর্ষ, নলম সংখ্যা । সঙ্গে দেখা হলো যোগেশ, নৈলে আমারতে কোন বুদ্ধিই যোগাচ্ছিল না ; তুমিই জগতে প্রকৃত বন্ধু।” যোগেশ বলিল “ওকথা বলবেন না ছোটবাবু। আম বা আপনার ভৃত্য; চিরকাল তো আপনাদের দ্বারেই মানুষ, কি আর কর্তে পারলুম বলুন, ক্ষমতাই বা কতটুকু ? তবে এশরীরট, প্রাণটে দিয়েও যদি আপনাদের বংশের মানমর্য্যাদা রক্ষে করবার সামান্ত সাহায্যটুকুলও করতে পারি তাতে পিছুব না । শাস্ত্রে বলে “রাজদ্বারে শ্মশানে চ যঃ তিষ্ঠতি স বান্ধব ।” তা আমি রাজদ্বারে দাড়াবার সব বন্দোবস্ত করে দেব কোন ভাবনা নেই।” হেমেন্দ্র পুনশ্চ আবেগ রুদ্ধকণ্ঠে কহিল “তুমি ছাড়া আমার আর কেউ নেই যোগেশ, ভাগ্যে তোমায় পেয়েছিলুম !” যোগেশ একজন দাসী ও আহার্য্য সামগ্রীর যোগাড় করিয়া যখন বাড়ি ফিরিল তথন ছেমেন্দ্রেব ঘড়িতে কষ্টট বাজিয়া গিয়াছে। ক্ষুধা তৃষ্ণা ও ক্লাস্তিতে অবসর হইয়া সে সেই শয্যাহীন তক্তপোষের ধূলিলাঞ্ছিত বক্ষ আশ্রয় করিয়াই ঘুমাইম পড়িয়াছিল, তাহদের পদশব্দে জাগিয়া উঠিল । প্রতিবেশির নিকট হইতে আন গ্লাসে খানিক ঠাণ্ডাজল ও কিছু কেন খাবারে জলন্ত ক্ষুধা নিবৃত্তি করিয়া হেম বলিল কি জঘন্ত জিনিষই কিনেচ হে ! কলেরা না হয়। তা যাহোক যোগেশ, তুমিও কিছু খেয়ে নাও, এসে একটা কিছু পরামর্শ-দাও, আমিতে ভাই দুদিন এ অবস্থায় থাকলে নিশ্চয়ই মারা পড়বে, তা তোমাকে বলে রাখলুম। বাপ, এমন করে মানুষে বাচতে পারে।” পোষ্যপুত্র । १७१ যোগেশ হঠাৎ ঈষৎ রুক্ষ্মস্বরে বলিয়া ফেলিল “বোঁদিকে একবার দেখবে না ? আশ্চর্য্য লোকতে আপনি দেখচি ! সে বেচারা এখনও যে মুখে একটু জলও দেয়নি, আমরাতে তবু শ্রীরামপুরে চ টা, থেয়ে নিয়েছিলুম।” হেমেন্দ্র একটু অপ্রতিভ হইয়া গেল, তারপর একটু ভাবিয়া কহিল, “তুমিই গিয়ে বলোনা” । যোগেশের সমস্ত হৃদয় তাহাকে তৎক্ষণাৎ সেইদিকেই টানিতে উদ্যত হইয়াছিল কিন্তু তথাপি সে সেই প্রলোভন হইতে আপনাকে মুক্ত করিতে চেষ্টা করিয়া চঞ্চলস্ববে বলিল “না না তাকি হয় তিনি কি ভাবলেন, আপনি যান, আমি ঝিটাকে দিয়ে বরং থাবার পাঠিয়ে দিচ্চি, ঝি ঝি গেল কোথ৷”—“হেমেন্দ্র অনিচ্ছার সহিত উঠিল। তাহাকে উঠিতে দেখিয়া যোগেশ মনের মধ্যে শাস্তি অমুভব করিল না । হেমেন্দ্ৰ আসিয়া দেখিল বদ্ধদ্বার ক্ষুদ্র ঘরের ধুলির উপর শান্তি চুপ করিয়া বসিয়৷ আছে । সে তাহার মুখ দেখিতে পাইল না কিন্তু ভাব দেখিয়া বুঝিতে পারল সে কাদে নাই, এবং অনেকক্ষণ হইতেই এই অবস্থায় রহিয়াছে। মনে মনে একটু ভীত হইল, তাহাকে কাদিতে দেখিলে বরং সে সাহস পাছত । কাছে আসিয়া একটু সঙ্কুচিতভাবে ডাকিল “শান্তি!” শান্তি উত্তর দিল না, হেমেন্দ্র ও অনেকক্ষণ চুপ করিয়া দাড়াইয়। রহিল, এমন বিপদেও সে পড়িয়াছে যে বলিবার নয়, একি গ্ৰছ ! অথচ রাগ করাও অনর্থক, বুঝিবে কে ? এবার একটু উচ্চ করিয়া ডাকল “শাস্তি শুনচে ?” শাস্তি মুখ ফিরাইল, প্রশ্নহান মেীনদৃষ্টি একবারমাত্র